কাশীপুর রাজ বাড়ির দূর্গা পুজো
পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক
এক কালে যখন দূর্গা পুজো মূলত রাজ বাড়ি গুলোর মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিলো তখন জাঁকজমকে মাঝে মাঝেই কলকাতার পুজো গুলোকে টেক্কা দিতো কিছু জেলার পুজো।এমনই এক ঐতিহাসিক পুজো পুরুলিয়া জেলার কাশীপুর রাজবাড়ির পূজো যা নিয়ে আজকের পর্ব।
আগে এই পরিবারের ইতিহাস সম্পর্কে কিছু তথ্য দিয়ে রাখা প্রয়োজন।কাশীপুর রাজপরিবার আসলে পঞ্চকোট রাজবংশের শেষ একটা রাজপরিবার। কয়েকশ বছর আগে পঞ্চকোট পাহাড়ের পাদদেশে এই রাজবংশ বসবাস করত। সেখান থেকে বর্গিরাজাদের আক্রমণের পর কাশীপুরের যিনি মহারাজা ছিলেন উনি রঘুনাথপুর পালিয়ে আসেন সপরিবারে; এবং তারপর থেকে এখানেই অর্থাৎ পুরুলিয়ার কাশিপুরে পুরোপুরি ভাবে অবস্থান করেন। তারপর ধীরে ধীরে উনি ওনার সাম্রাজ্য বিস্তার করেন ও কাশীপুরের এই প্রাসাদ নির্মাণ করেন ও সপরিবারে বসবাস শুরু করেন। দুর্গাপূজার প্রচলন করেন যা আজও অব্যাহত।
এই কাশীপুর রাজ বাড়ির দূর্গাপূজোর কিছু বিশেষত্ব আছে।এখানে দেবী পূজো তথা প্রতিটি শাস্ত্রীয় উপাচার পালিত হয় ঘড়ির কাঁটা ধরে।
এক মুহূর্তের হের ফের হয়না।যেহেতু বৈষ্ণব মতে হয়ে থাকে পূজোর যাবতীয় আয়োজন থেকে প্রাণী হত্যা সম্পূর্ণ বাদ তার বদলে পূজো কদিন মায়ের অন্নভোগ দেওয়া হয়।
এই কাশী পুর রাজবাড়ির দূর্গা পুজো নিয়ে একটি অলৌকিক ঘটনাও কিংবদন্তী রূপে প্রচলিত আছে।পূজোর অষ্টমী তিথিতে নিশিপূজোর সময় সিঁদুরের থালার মধ্যে মায়ের পায়ের ছাপ দেখতে পাওয়া যায়। সেই সময়টাতে ঠাকুর দালান ভারী পর্দা দিয়ে আচ্ছাদন করে দেওয়া হয় এবং সাধারণ মানুষের প্রবেশ নিষিদ্ধ থাকে। শুধু সেই সময়টুকু গোপনীয়তা বজায় রাখতে এমন টা করা হয়।
এক সময়ে পারিবারিক পুজো হিসেবে শুরু হলেও বর্তমানে এই জেলার অসংখ্য মানুষ এই পুজোয় অংশ নেন। পুজো কদিন রাজবাড়ির সদর দরজা থেকে ঠাকুর দালান বা প্রাঙ্গন সর্বত্র থাকে মানুষজনের অবাধ আনাগোনা।
আসন্ন দূর্গা পুজো উপলক্ষে সারা বাংলায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা এমন সব ঐতিহাসিক দূর্গা পূজো নিয়ে চলতে থাকবে এই ধারাবাহিক অনুষ্ঠানে।
ফিরে আসবো আগামী পর্বে। পড়তে থাকুন।
ভালো থাকুন ধন্যবাদ।
