শিব অবতার – অর্ধনারীশ্বর রূপ
পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক
দেবাদিদেব মহাদেব বিষ্ণুর ন্যায় একাধিকবার একাধিক বিশেষ অবতারে ধরা দিয়েছেন এবং প্রতিটি রূপ বা অবতারের কিছু বিশেষ তাৎপর্য এবং কর্মকান্ড রয়েছে। শিবের এমনই এক তাৎপর্য পূর্ণ রূপ তার অর্ধনারীশ্বর রূপ। আজকের পর্বে এই রূপ নিয়ে লিখবো।
পুরান মতে শিবের বাহন ভৃঙ্গীর একবার ইচ্ছে হয়েছিল তার আরাধ্য শিবকে প্রদক্ষীণ করার। কিন্তু তাতে বাধ সাধলেন পার্বতী। তিনি তাঁর স্বামীর পাশে বসে থাকায় শিবকে প্রদক্ষীণ করতে পারলেন না ভৃঙ্গী কারন তিনি শুধু শিবকে প্রদক্ষিণ করবেন|উপায় না দেখে ভৃঙ্গী মাছির রূপ নিয়ে শিবকে প্রদক্ষীণ করার চেষ্টা করলেন। তখন পার্বতী তাঁর এবং শিবের মধ্যে সব ব্যবধান ঘুচিয়ে মিলে গেলেন মহেশ্বরের শরীরের সঙ্গে।সৃষ্টি হলো অর্ধনারীশ্বর রূপ|
বৈদিক একটি ব্যাখ্যাও আছে এই বিষয়ে|সৃষ্টির সূচনা লগ্নে ব্রহ্মার খেয়াল হয় যে জগত তো সৃষ্টি হয়েছে কিন্তু প্রান চাই, আরো সৃষ্টি চাই। সেই ক্ষনে তার সামনে ভেসে উঠলো মহেশ্বরের আকার, যাঁর এক অংশ পুরুষের এবং বাকি অর্ধেক অংশ নারীর। এই দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে ব্রহ্মা নিজেকে দু’ভাগে বিভক্ত করে ফেললে তার ডান দিকের অংশ থেকে জন্ম নিল পুরুষ লিঙ্গের সব প্রাণী এবং বাঁ দিক থেকে জন্ম নিল সব প্রাণীর নারী লিঙ্গ।অর্থাৎ সৃষ্টিকর্মে ব্রম্ভাকে পথ দেখিয়েছিলো অর্ধ নারীশ্বর রূপ|
অর্ধনারীশ্বর রূপ সম্পর্কে আরো একটি পৌরাণিক ব্যাখ্যা আছে।একবার শিবের জটায় গঙ্গাকে অবস্থান করতে দেখে ক্রোধে উন্মত্ত হয়ে ওঠেন পার্বতী। তাঁকে শান্ত করার জন্যে পার্বতীর শরীরের সঙ্গে নিজেকে মিশিয়ে দেন মহেশ্বর। একাংশে বর্তমান থাকে শিবের উপস্থিতি, অন্য অংশে বিরাজ করেন নারী শক্তি পার্বতী।শিব বুঝিয়ে দেন শিব ও পার্বতী এক এবং অভিন্ন।
তারা আলাদা নন|
শাস্ত্রে অর্ধনারীশ্বর রূপ নর এবং নারী শক্তির মিলিত রূপ যেখানে মহেশ্বর ত্রিনেত্র এবং চতুর্ভুজ রূপে বিরাজমান তার হস্তে রয়েছে
পাশ, রক্ত কমল, নরকপাল এবং শুল।অনন্ত
শক্তি এবং তেজের প্রতীক এই মূর্তি।
ফিরে আসবো দেবাদিদেবের অন্য রূপ এবং তার শাস্ত্রীয় ব্যাখ্যা এবং সেই সম্পর্কিত পৌরাণিক ঘটনা নিয়ে। পড়তে থাকুন।
ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।