দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গ – কাশী বিশ্বনাথ মন্দির
পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক
ভারতের উত্তর প্রদেশের বারাণসী তে গঙ্গার পশ্চিম পাড়ে অবস্থিত “কাশী বিশ্বনাথ ” দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গের অন্যতম|বারাণসীর অপর নাম কাশী তাই এই মন্দির কে কাশী বিশ্বনাথ বলা হয়|
কথিত আছে কাশী এই জগতের বাইরে। শিবের ত্রিশুলে অবস্থিত এই নগরী। মহা প্রলয়ে সব ধ্বংশ হয়ে গেলেও কাশী অক্ষত থাকবে।কাশীতে স্নান করে মহাদেব ব্রহ্ম হত্যার পাপ থেকে মুক্ত হয়েছিলেন তাই তাকে মুক্তেশ্বর মহাদেব ও বলা হয়।
শিব এখানে বিশ্বনাথ বা বিশ্বেস্বর রূপে প্রতিষ্ঠিত|
মন্দির ও শিব লিঙ্গ এখানে কবে থেকে প্রতিষ্ঠিত তা সঠিক ভাবে বলা যায়না|স্কন্দ পুরাণেও এই জ্যোতির্লিঙ্গের উল্লেখ আছে|কথিত আছে, সতীর দেহত্যাগের পর শিব মণিকর্ণিকা ঘাট দিয়ে কাশী বিশ্বনাথ মন্দিরে এসেছিলেন|বিশ্বাস করা হয় শিব স্বয়ং এখানে বাস করতেন|এই মন্দির ও শিব লিঙ্গ নিয়ে যুগ যুগ ধরে চলে আসছে অসংখ্য প্রচলিত কিংবদন্তী যা প্রতিটি শিব ভক্তের কাছে ধ্রুব সত্য|এই মন্দিরের ইতিহাসও বৈচিত্রময় ও বর্ণময়|বহু ঐতিহাসিক ঘটনার সাক্ষী কাশী বিশ্বনাথ মন্দির|
অতীতে বিশেষত মুসলিম শাসন কালে বহুবার ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে এই মন্দির এবং পুনরায় নতুন করে সৃষ্টিও হয়েছে|পুরাকাল থেকে এই মন্দিরের অস্তিত্ব থাকলেও একাদশ শতাব্দীতে হরি চন্দ্র মন্দিরটি পুনর্নির্মাণ করেছিলেন|তারপর পর্যায়ক্রমে মোহাম্মদ ঘোরী,কুতুবুদ্দিন আইবক, ফিরোজ শাহ তুঘলক ও ঔরংযেব মন্দির টি ধ্বংস করেন|প্রতিবারই অবশ্যই পুনরায় মাথা তুলে দাঁড়ায় কাশী বিশ্বনাথ মন্দির|বর্তমান সময়ে যে মন্দিরটি রয়েছে তা ১৭৮০ সালে ইন্দোরের মহারানি অহিল্যা বাই হোলকর তৈরি করে দিয়েছিলেন|পরবর্তীকালে ১৮৩৫ সালে পাঞ্জাবের শিখ সম্রাট রঞ্জিত সিংহমন্দিরের চূড়াটি ১০০০ কিলোগ্রাম সোনা দিয়ে মুড়ে দেন|বর্তমান মন্দিরটির উচ্চতা 15.5 মিটার এবং চুড়োটি সোনায় মোড়ানো বলে অনেকে এই মন্দির কে স্বর্ন মন্দিরও বলেন|
প্রধান মন্দিরের মধ্যে একটি ৬০ সেন্টিমিটার উঁচু ও ৯০ সেন্টিমিটার পরিধির শিবলিঙ্গ রুপোর বেদির উপর স্থাপিত।মুল মন্দির প্রাঙ্গনে একটি প্রাচীন কূপ লখ্য করা যায়, কথিত আছে অতীতে একবার শত্রুর আক্রমণ থেকে রক্ষা করতে মন্দিরের পুরোহিত শিব লিঙ্গ নিয়ে ওই কূপে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন|
সনাতন ধর্মে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলির মধ্যে একদম প্রথম সারিতে রয়েছে বারাণসী বা কাশী আর এই প্রাচীন ধর্মীয় নগরীর ধর্মচর্চার প্রানকেন্দ্র হচ্ছে কাশী বিশ্বনাথ মন্দির।
ফিরে আসবো পরবর্তী জ্যোতির্লিঙ্গ নিয়ে আগামী পর্বে। পড়তে থাকুন।ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।