ভক্তের ভগবান – কালীভক্ত বিবেকানন্দ
পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক
জীবনের প্রথম দিকে প্রতিমা পূজার বিরোধী হলেও বিবেকানন্দই পরবর্তীতে হয়ে উঠেছিলেন করুণাময়ী মা ভবতারিণীর একনিষ্ঠ ভক্ত। আজকের পর্বে স্বামী বিবেকানন্দর
কালী ভক্তির কথা লিখবো।
ঠাকুর রামকৃষ্ণর সান্নিধ্যে এসে প্রথম দিকে যুবক নরেন্দ্রনাথ কালীকে গ্রহণ করতে বা তার পূজা করতে সম্মত ছিলেন না। রামকৃষ্ণ তাকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, “যদি আমার মা কালীকে নাই মানবি, তাহলে এখানে আসিস কেন?” নরেন্দ্রনাথ উত্তরে বলতেন, “আমি আপনাকে দেখতে আসি। আমি আসি, কারণ, আপনাকে আমি ভালবাসি।”
বিবেকানন্দর ঘোর কালী ভক্তির সাথে জড়িয়ে আছে দক্ষিনেশ্বর মন্দিরে ঘটে যাওয়া এক অলৌকিক ঘটনা।১৮৮৪ সালে রামকৃষ্ণ পরমহংস নরেন্দ্রনাথ দত্তকে দক্ষিণেশ্বর কালীবাড়িতে আর্থিক উন্নতির জন্য প্রার্থনা করতে পাঠিয়েছিলেন। তিন বার কালীর আশীর্বাদ প্রার্থনা করতে গিয়ে তিন বারই নরেন্দ্রনাথ উচ্চারণ করেছিলেন: “মা, জ্ঞান ও ভক্তি ছাড়া আর কিছুই আমি চাই না।” এই ঘটনার পর থেকে তিনি কালীমূর্তি পূজা মেনে নেন এবং কালীমূর্তির কাছে জাগতিক সুখ চাওয়ার বদলে বিবেক এবং বৈরাগ্য চেয়ে নেন।
নরেন্দ্র নাথের দক্ষিনেশ্বর মন্দিরে আসা। মা ভবতারিণীর দর্শন করা এবং তার কাছে নিজের সুখ স্বচ্ছন্দর বদলে জ্ঞান এবং বৈরাগ্য চাওয়া এসবই ছিলো মা ভবতারিণীর লীলা। ভগবান যদি ঠিক করেন ভক্তকে কৃপা করবেন তাহলে তিনিই পথ দেখবেন তিনিই নিমিত্ত বেছে নেবেন। বিবেকানন্দর ক্ষেত্রে ঠাকুর রামকৃষ্ণ ছিলেন সেই নিমিত্ত মাত্র।
দেবী কালীর একনিষ্ঠ ভক্তে পরিণত হওযয়া বিবেকানন্দ বলেছিলেন, কালী হলেন “ব্রহ্মাণ্ডের দিব্য জননী”, যিনি “নিজের মধ্যে সৃষ্টি ও ধ্বংস, প্রেম ও ভীতি, জীবন ও মৃত্যুকে আত্মীভূত করেছেন।
পরবর্তীকালে বিবেকানন্দ যখন পাশ্চাত্যে বেদান্ত প্রচারে গিয়েছিলেন, তখন তিনি ভগিনী নিবেদিতাকে একটি চিঠিতে লেখেন যে, মা তাকে রক্ষা করছেন এবং হৃদয়ের সমর্থন জোগাচ্ছেন।
পরবর্তীতে স্বামী বিবেকানন্দর ইচ্ছেতেই বেলুড় মঠে শুরু হয় দেবী পুজো। তন্ত্র মতে বলী দিয়ে পুজো করতে চাইতেন স্বামীজী। কিন্তু মা সারদার ইচ্ছেতে বলী বন্ধ হয়।
আবার পরের পর্বে অন্য এক ভক্ত এবং
তার ভক্তি নিয়ে আধ্যাত্মিক আলোচনা করবো। পড়তে থাকুন।ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।