কালী কথা – কালনার সিদ্বেশ্বরী কালীর ইতিহাস

146

কালী কথা – কালনার সিদ্বেশ্বরী কালীর ইতিহাস

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

বাংলার প্রায় প্রতিটি জেলায় রয়েছে কিছু
বিখ্যত কালী মন্দির। যার মধ্যে অনেকগুলির
কথা ইতিমধ্যে কালী কথায় বলেছি। আজ জানাবো বর্ধমানের কালনার বিখ্যাত
সিদ্ধেশ্বরী কালী মায়ের কথা|

প্রাচীন তন্ত্র সাধনার পীঠস্থান হিসাবে এই অঞ্চলের উল্লেখ আছে বহু প্রাচীন গ্রন্থে।আসল মন্দির এখানে কবে তৈরি হয়েছিলো ঠিক জানা যায়না, তবে আনুমানিক পলাশীর যুদ্ধের ও আগে বর্ধমানের জমিদার চিত্রসেনের আমলে মন্দিরটি সংস্কার করা হয়|মনে করা জৈনদেবী অম্বুয়া বা হিন্দু দেবী অম্বিকাই। পরে তিনিই সিদ্ধেশ্বরীতে রূপান্তরিত হয়েছেন এবং বর্তমানে এখানে সিদ্বেশ্বরী কালী রূপে পূজিতা হন।

আবার অন্য একটি মত অনুসারে সিদ্ধেশ্বরী দেবীকে বিখ্যাত মাতৃ সাধক অম্বরীশের আরাধ্য দেবী হিসাবে চিহ্নিত করা হয়|সেই দিক দিয়ে আগে এই দেবীকে অম্বরিশের কালীও বলা হতো।

এই মন্দিরে দেবী মূর্তি নির্মিত নিমকাঠ দিয়ে।
দেবী এখানে বামাকালী মূর্তিতে বিরাজমান এবং দেবী শবরুপী শিবের উপর ভয়ঙ্করী রূপে দণ্ডায়মান |বহু প্রাচীন রীতি অনুসারে সারা বছর দেবীকে দর্শন করা গেলেও শুধুমাত্র কোজাগরী পূর্ণিমার পরের কৃষ্ণা পঞ্চমী থেকে কৃষ্ণা ত্রয়োদশী পর্যন্ত দেবী দিগম্বরী থাকেন বলে ওই সময়ে মন্দিরের দরজা বন্ধ থাকে। পুজো হয় তবে বাইরে থেকে|এই রীতি চলে আসছে বহু যুগ থেকে।

এই কালী ক্ষেত্রর অন্যতম আকর্ষণ একটি পুকুর।মন্দিরের বাইরে রয়েছে একটি রহস্যময় বিরাট পুকুর যার নাম অম্বিকা পুকুর|শোনা যায় এক কালে পুকুরের জলের মধ্যে রাখা থাকত প্রচুর বাসনপত্র। গরিব মানুষ সেই বাসনপত্র বিয়ে বা অন্য কোনও সামাজিক অনুষ্ঠানে ব্যবহার করে, ফের জলের মধ্যে রেখে যেতেন। মন্দিরের নানা কাজে ওই পুকুরের জলই ব্যবহার করা হত। ওই পুকুরেই ছাগ স্নান করিয়ে মন্দিরে নিয়ে আসা হত বলির জন্য|

এক কালের তন্ত্র সাধনার জন্যে বিখ্যাত সিদ্বেশ্বরী কালী মন্দির বর্তমানেও সমান প্রসিদ্ধ ও বহু মানুষের আস্থার স্থল|প্রতি বছর কৌশিকী অমাবস্যা, দীপান্বিতা অমাবস্যা এবং ফলহারিনী অমাবস্যা উপলক্ষে এখানে বিশেষ পুজো হয় ও দূর দূর থেকে মানুষ আসেন দেবীকে দর্শন করতে, তার আশীর্বাদ নিতে ও নিজের মনোস্কামনা জানাতে|

ফিরে আসবো কালী কথার পরবর্তী পর্ব নিয়ে আগামী দিনে। চলতে থাকবে কালী কথা। পড়তে থাকুন।ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।