নব রাত্রি – দেবী শৈল পুত্রী

50
  • নব রাত্রি – দেবী শৈল পুত্রী

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

শুরু হয়ে গেছে দেবীপক্ষের।বাংলার দূর্গা পূজার পাশাপাশি একই সময়ে সারা দেশ জুড়ে পালিত হয় নব রাত্রি উৎসব|মূলত দেবী দুর্গার নয় টি ভিন্ন রূপের পূজা হয় নয় দিন ধরে| বাংলার অনেক দূর্গা পূজা তেও নব দুর্গার আরাধনা হয়|দেবী আদ্যা শক্তি মহামায়ার প্রতিটি রূপের আছে নিজস্ব শাস্ত্রীয় ব্যাখ্যা এবং আধ্যাত্মিক তাৎপর্য। আজথেকে শুরু করছি দেবীর নয়টি রূপ নিয়ে ধারাবাহিক আলোচনা।আজ লিখবো

দেবীর প্রথম রূপ শৈল পুত্রী নিয়ে|

 

নবরাত্রি উৎসবের প্রথমদিনের পুজো হয় দেবী শৈলপুত্রীর। দেবী শৈলপুত্রী আসলে প্রকৃতির দেবী। শৈলপুত্রীর বাহন বৃষ । এঁনার দক্ষিণ হস্তে ত্রিশূল আর বাম হস্তে কমল আছে তাই দেবীর অপর নাম শুলধারিনি|আবার তাকে দেবী হৈমবতী বলে ডাকা হয়।

 

দেবী শৈলপুত্রীর আবির্ভাব হয়েছিলো একটি বিশেষ উদ্দেশ্যে।প্রজাপতি দক্ষএকবার বিরাট যজ্ঞ করেন ।তার যজ্ঞে সতী কে নিমন্ত্রণ করা হয়নি । সতী পিতৃ গৃহে যাবার জন্য অস্থির হলেন কিন্তু ভগবান শঙ্কর সাবধান করলেন যে কোন কারনে তিনি উমার উপর রেগে আছেন । কিন্তু সতীর মন মানল না তখন মহাদেব অনুমতি দিলেন যাবার জন্য । কিন্তু পিতৃ গৃহে গিয়ে পৌঁছে দেখলেন কেউ তাকে সেরকম স্নেহ ভরে কাছে ডাকছে না । একমাত্র মা জড়িয়ে ধরলেন । স্বয়ং দক্ষ তাকে নানা খারাপ কথা বললেন । তখন রাগে দুঃখে যজ্ঞাগ্নির সাহায্যে নিজে কে ভস্মীভূত করলেন ।সতীর এই পরিনতির সংবাদ শুনে শিব ও তার অনুগামীরা প্রচন্ড ক্রোধে দক্ষের যজ্ঞ ধ্বংস করলেন এবং দক্ষকে উচিৎ শিক্ষা দিলেন।

 

কিন্তু শিব আর পার্বতী এক এবং অভিন্ন তাই শিবের সঙ্গে পুনরায় মিলিত হতে সতীর পুনর্জন্ম হলো শৈলরাজ হিমালয়ের কন্যা রুপে।শৈলরাজ হিমালয়ের কন্যা হবার জন্য দেবীর এক নাম হয় শৈলপুত্রী এবং এই জন্মেই তিনিই পার্বতী রূপে শিবের অর্ধাঙ্গিনী হলেন|

 

শাস্ত্র অনুযায়ী ব্রহ্মার শক্তির প্রতীক হলেন দেবী শৈলপুত্রী কারন একবার দেব ও অসুরের যুদ্ধে ব্রহ্মা দেবতাদের জয়ী করেছিলেন। কিন্তু ব্রহ্মার শক্তি ভুলে দেবতারা জয়ের গৌরব নিজেরাই নিতে উদ্যত হলেন। ব্রহ্ম তখন নিজে এলেন দেবতাদের দর্পচূর্ণ করতে। তিনি একখণ্ড তৃণ রাখলেন দেবতাদের সম্মুখে। কিন্তু দেবতারা আশ্চর্য হয়ে দেখলেন, অগ্নি সেই তৃণখণ্ডটি দহন করতে বা বায়ু তা একচুল পরিমাণ স্থানান্তরিত করতে অসমর্থ হলেন। তখন ইন্দ্র এলেন সেই অনন্ত শক্তির উৎসকে জানতে। সেই মুহূর্তে ব্রহ্মশক্তি শৈলপুত্রীর রূপ ধারন করে দেবরাজ ইন্দ্র কে দেখা দিলেন।

 

দেবী শৈলপুত্রী সম্পর্কে বর্ণনা আছে কালিকা পুরাণে|শাস্ত্র মতে এই রূপের আরাধনায় বৃদ্ধি পায় মনোবল|মানসিক অস্থিরতা ও অবসাদ মুক্তি হয় দেবী শৈল পুত্রীর আরাধনায়|নব রাত্রির প্রথম দিনে দেবীর কাছে নিজের মনোস্কামনা জানান। দেবী ভক্তি ভরে প্রার্থনা করলে সব মনোস্কামনা পূর্ণ করেন।

 

নব রাত্রি উপলক্ষে ধারাবাহিক ভাবে চলবে এই আলোচনা|আগামী পর্বে দেবীর পরবর্তী রূপ

নিয়ে আলোচনা করবো। পড়তে থাকুন।

ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।