পিতৃ দোষ এবং মহালয়া অমাবস্যা
পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক
আগের পর্বে বলেছি পিতৃদোষ থাকলে কয়েক প্রজন্ম ধরে সেই পরিবারের নানা সমস্যার মুখে পড়তে পারে। জ্যোতিষ শাস্ত্র এবং বাস্তু শাস্ত্র মতে কিভাবে পিতৃ দোষ নির্ধারিত হয় সেই নিয়ে আজকের পর্বে লিখবো।
১. কোষ্ঠির নবম কক্ষ দেখে জানা যায় যে জাতক পূর্বজন্মের কোন পুণ্য সঙ্গে নিয়ে এসেছে। কোষ্ঠির নবম কক্ষে রাহু, বুধ বা শুক্র অবস্থান করলে বুঝতে হবে কোষ্ঠিতে পিতৃদোষ রয়েছে।
২. কোষ্ঠির দশম কক্ষে অশুভ বৃহস্পতির উপস্থিতি অভিশাপ স্বরূপ। বৃহস্পতি অভিশপ্ত হলেও পিতৃদোষ দেখা দেয়।
৩. কোনও জাতকের জন্মছকের সপ্তম কক্ষে বৃহস্পতি থাকলে, তা আংশিক পিতৃদোষ হিসেবে গণ্য হয়।
৪. লগ্নে রাহু থাকলে পিতৃদোষের দিকে ইঙ্গিত করে। আবার চন্দ্রের সঙ্গে কেতু ও সূর্যের সঙ্গে রাহু থাকলেও পিতৃদোষ হতে পারে।
৫. কিছু কিছু ক্ষেত্রে পঞ্চম স্থানে রাহু থাকলেও পিতৃদোষ দেখা যায়।
৬. জন্মছকে সূর্যের ওর যদি শনি, রাহু ও কেতুর দৃষ্টি থাকে বা এদের যুতির দ্বারা সূর্য প্রভাবিত হয়, তা হলে জাতকের কোষ্ঠিতে পিতৃ ঋণের পরিস্থিতি উৎপন্ন হয়।
বাস্তু শাস্ত্র মতেও পিতৃ দোষের আলাদা ব্যাখ্যা আছে।
৮. বাড়ির উত্তর ও ঈশান কোণ সঠিক না-থাকলেও তা পিতৃদোষের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
কিছু খেত্রে জাতক বা জাতিকার বর্তমান অবস্থা বিচার করেও বলা যায় সে সে পিতৃ দোষে দুষ্ট।
৯. জাতকের গ্রহ, নক্ষত্র, বাড়ির বাস্তু সঠিক থাকা সত্ত্বেও ক্রমাগত আর্থিক সমস্যা, শারীরিক সমস্যা এবং বিবাহে বিলম্ব হলে ধরে নেয়া যায় পিতৃ দোষ এই দুর্ভোগের কারন।
১০. পূর্বপুরুষ বা কোনও সদস্যের রোগ যদি আপনার হয়ে থাকে, তা হলে তা পিতৃদোষ হিসেবে গণ্য হয়।
১১. পৈতৃক ঋণ থাকলে বা কোনো অদৃশ্য শক্তি আপনাকে ক্রমাগত সমস্যায় ফেললে তাও পিতৃদোষ হিসেবে বিবেচিত হয়।
পিতৃ দোষের একাধিক কারন গুলোর মধ্যে পূর্বজন্মে কোনও ধর্ম বিরোধী কাজ অন্যতম যেমন গো হত্যা বা অশাস্ত্রীয় খাদ্য গ্রহণ ইত্যাদি।
আবার কোনও জাতক বা জাতিকা যদি তার পূর্বপুরুষের ধর্ম ত্যাগ করে দিয়ে থাকে বা কুল ধর্ম এবং কুলদেব-দেবীর ত্যাগ করে দেয়, তা হলেও পিতৃদোষ লাগতে পারে। একাধিক জন্ম পর্যন্ত তা পিছু ছাড়ে না।
পিতৃ পক্ষের অবসানে শুরু হবে দেবী পক্ষ। মহালয়া অমাবস্যায় আমাদের পূর্বপুরুষের আত্মা আমাদের চিরতরে সমস্ত অশুভ প্রভাব থেকে মুক্তিদিতে উপস্থিত থাকবেন মর্ত লোকে। এই দুর্লভ তিথিতে পিতৃ দোষ সহ সবরকম গ্রহদোষ থেকে মুক্তি পেতে পারেন শাস্ত্র মতে গ্রহ দোষ খন্ডনের মাধ্যমে।
দেখা হবে পরের পর্বে। ফিরে আসবো অন্য
একটি শাস্ত্রীয় বিষয় নিয়ে। পড়তে থাকুন।
ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।