পুরান এবং নবগ্রহ – শনি দেব
পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক
আমাদের পুরান ও জ্যোতিষ শাস্ত্রে গ্রহ রাজ শনিকে একটি ভয়ানক গ্রহ বা রাগী দেবতা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। সত্যি কি তিনি এতটা ভয়ের। এতটা হানিকারক!এই সব প্রশ্নের উত্তর রয়েছে আমাদের শাস্ত্রে।
মৎস্য পুরাণ কিন্তু শনিদেবকে লোকহিতকর গ্রহের তালিকাতেই ফেলেছে। মৎস্য পুরাণে বলা হচ্ছে, দেবশিল্পী বিশ্বকর্মার মেয়ে সঞ্জনার সঙ্গে বিয়ে হয় সূর্যদেবের। কিন্তু সূর্যের প্রচণ্ড তাপে প্রায় ঝলসে যান সঞ্জনা। তখন তাঁর নতুন নাম হয় সন্ধ্যা। নিজের এমন দূরবস্থায় স্বামীর প্রতি সমস্ত ভালোবাসা হারিয়ে ফেলেন তিনি। সূর্যের থেকে দূরে পালাতে চান তিনি। কিন্তু কী ভাবে? তখন সন্ধ্যা নিজেরই একটি প্রতিকৃতি সৃষ্টি করেন।
তাঁর নাম দেন ছায়া। ছায়াকে স্বামীর দেখাশোনার দায়িত্ব দিয়ে সন্ধ্যা পিতার ঘরে ফিরে যান। এ ভাবে যে তাঁর স্ত্রী বদল হয়ে গেল তা খেয়ালই করেন না সূর্যদেব।
এই সূর্য্য দেব ও ছায়ার সন্তান হিসেবে জন্ম নেন শনি। মেয়ে তাঁর কাছে, এদিকে সূর্যের সন্তান-জন্মের খবর পেয়ে বিশ্বকর্মা ধন্দে পড়ে যান। সন্ধ্যার কাছে ছুটে গিয়ে সব জানতে চান। সব শুনে বিশ্বকর্মা সন্ধ্যাকে সেই মুহূর্তেই পতিগৃহে ফিরে যেতে নির্দেশ দেন। ক্ষুব্ধ সন্ধ্যা ফিরে গিয়ে ছায়াকে নিঃশেষ করে নিজে ফের সূর্যের স্ত্রীর ভূমিকা পালন করতে থাকেন। এ ঘটনাও সূর্যের নজর এড়িয়ে যায়|
শনির জীবনের দুক্ষ দুর্দশার সূত্রপাত এখান থেকেই, এর পর শনির প্রতি বিমাতৃসুলভ আচরণ করতে শুরু করেন সন্ধ্যা। শনিকে সূর্যের থেকে দূরে সরাতে অনবরত স্বামীর কান ভাঙাতে থাকেন সন্ধ্যা। এভাবে মায়ের স্নেহ এবং বাবার ভালোবাসা না পেয়ে ক্রুদ্ধ, বিরক্ত, অলস হয়ে উঠতে থাকেন শনি। কোনও কিছুই তাঁর ভালো লাগে না।তার মধ্যে জন্ম নেয় তামসিক প্রবৃত্তি।
পরবর্তীতে শনিকে সৌরমণ্ডলে স্থান দেন পিতা সূর্য্যদেব । কর্মফলের দেবতা হিসেবে শনিকে উন্নীত করা হয়। এ জন্যই কেউ কোনও অপকর্ম করলে শনির নজর এড়ায় না এবং শনির হাতে তার শাস্তি নিশ্চিত।অর্থাৎ তার এই ক্রোধ ও নিষ্ঠুরতা দিয়ে তাকে বিচার করলে হবেনা|তিনি কর্ম ফল প্রদান করেন|তিনি ভালোর জন্যে ভালো আবার খারাপের জন্যে খারাপ|মানুষের জীবনে তার প্রভাব দুরকমেরই হয়|তার দশায় একজন রাজাও হতে পারে আবার ক্ষতির সম্মুখীন ও হতে পারে।
রামায়ণ অনুসারে শনিদেব সহ সমস্ত গ্রহকে রাবন লঙ্কায় বন্দি করে রেখেছিলেন। যখন হনুমান সোনার লঙ্কা পুড়িয়ে দেন তখন গ্রহদের তিনি মুক্ত করেন। মুক্তি পেয়ে শনিদেব হনুমানকে আশীর্বাদ করেন যে তার ভক্তদের তিনি কোনো ক্ষতি করবেন না এবং আজও বজরংবলীর কৃপায় শনির অশুভ প্রভাব থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
নবগ্রহ এবং পুরান সংক্রান্ত আলোচনা নিয়ে আবার ফিরে আসবো আগামী পর্বে।
পড়তে থাকুন।ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।