গুরু কথা – যোগী রাজ শ্যামাচরণ লাহিড়ী

130

গুরু কথা – যোগী রাজ শ্যামাচরণ লাহিড়ী

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

সংসার ধর্ম পালন করেও যে আধ্যাত্মিক মার্গে সফল ভাবে হাঁটা যায় এবং সাধনার সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছানো যায় তা ভারতের বেশ কয়েকজন সিদ্ধ যোগী হাতে কলমে প্রমান করে দিয়েছেন।

এমনই এক আধ্যাত্মিক গুরু ছিলেন যোগীরাজ শ্যামা চরণ লাহিড়ী।

 

বর্তমানে গোটা বিশ্ব জুড়ে ক্রিয়া যোগ যে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেছে তার জন্য লাহিড়ী মশাইয়ের অবদান অসামান্য।তার দেখানো পথে পরবর্তীতে তার বহু শিষ্য অগ্রসর হয়েছেন এবং অসামান্য সাফল্য লাভ করেছেন।সব অর্থেই তিনি ছিলেন এক মহান যোগী এবং আদৰ্শ গুরু।

 

ব্রিটিশ ভারতবর্ষে 1895 সালে শ্যামাচরণ নদীয়া জেলায় এক ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন শ্যামচরণ। তার জীবন ছিলো আর পাঁচটা সাধারণ গৃহস্ত বঙ্গ সন্তানের মতোই। চাকরি করতেন একটি বেসরকারি সংস্থায়। একবার কর্মসূত্রে তাকে যেতে হয় হিমালয়ের পাদদেশে এক এলাকায় এর এখানেই ঘটে এক অদ্ভূত ঘটনা।একদিন পাহাড়ে চলার সময় তিনি তাঁর গুরু কিংবদন্তী স্বরূপ মহাবতার বাবাজির দেখা পেলেন। মহাবতার বাবাজিকে নিয়ে ইতিমধ্যে গুরু কথার একটি পর্বে আমি আলোচনা করেছি। মহাবতার বাবা শ্যামাচরণ কে ক্রিয়া যোগের কৌশলগুলো শিখিয়ে দিলেন এবং দীক্ষা দিলেন।দীক্ষার পর চললো কঠোর অনুশীলন ধীরে ধীরে শ্যামচরণ হয়ে উঠলেন যোগীরাজ শ্যামাচরণ।

 

পরবর্তীতে গৃহস্ত জীবনে থেকে তিনি সাধনা করেছেন। অসংখ্য ভক্ত শিষ্য হয়েছে। ঘটিয়েছেন বহু অলৌকিক ঘটনা যা নিয়ে আজও আলোচনা হয়।

 

শোনা যায় একবার তাঁরই এক শিষ্যা অভয়া গুরুর সঙ্গে দেখা করতে হাওড়া থেকে বারাণসী আসছেন। মালপত্র নিয়ে ছুটতে ছুটতে হাওড়া স্টেশনে পৌঁছতেই দেখলেন, বারাণসী এক্সপ্রেস স্টেশন ছেড়ে বেরিয়ে যাচ্ছে। কাঁদতে কাঁদতে স্টেশনেই বসে পড়লেন তিনি। আস্তে আস্তে প্ল্যাটফর্ম ছেড়ে বেরিয়ে যাচ্ছে ট্রেন। চূড়ান্ত হতাশ অভয়া তখন অঝোরে কাঁদছেন আর গুরুদেব শ্যামাচরণ লাহিড়িকে স্মরণ করছেন।হটাৎ অভয়া দেখলেন, ট্রেন থেমে গিয়েছে।ড্রাইভার ও গার্ড ও অবাক তৎক্ষণাৎ মালপত্র নিয়ে দৌড় দিলেন তিনিও। অভয়া ট্রেনে ওঠামাত্র থেমে যাওয়া বারাণসী এক্সপ্রেস আবার গড়গড় করে চলতে শুরু করল।বারাণসী পৌঁছে অভয়া তাঁর গুরুদেবের কাছে গেলেন। পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করা মাত্র যোগীরাজ শ্যামাচরণ বললেন, ‘ট্রেন ধরতে গেলে একটু সময় হাতে নিয়ে বেরোতে হয় মা,অত বড়ো ট্রেনকে কি আটকে রাখা যায়?গুরুর অলৌকিক ক্ষমতায় দেখে অবাক হলেন শিষ্যা অভয়া|বলা হয় তিনি যোগ বলে সুক্ষ দেহে যেখানে খুশি যেতে পারতেন। একবার তিনি বিলেতে থাকা অফিসের বড়ো বাবুর স্ত্রীর সব খবর কলকাতায় বড়ো বাবুকে বর্ণনা করেছিলেন। বিশ্বাস হয়নি বড়ো বাবুর। কিন্তু যখন স্ত্রী বিদেশ থেকে চিঠি লিখলেন জানা গেলো শ্যামচরণ যা যা বলেছেন সব সত্যি। পরবর্তীতে যখন সেই সাহেবের স্ত্রী বিলেত থেকে স্বামীর কাছে আসেন সেখানে শ্যামাচরণ কে দেখে অবাক হয়ে বলেন ইনি তো সেই ব্যাক্তি যিনি অসুস্থতার সময়ে তার সেবা করতে তার খবর নিতে গেছিলেন তার কাছে।অথচ শ্যামাচরণ কখনোই স্বশরীরে বিলেত জাননি।

 

এখানে আরো একটি ঘটনার কথা উল্লেখ করতে হয় একবার বেঙ্গল নাগপুর রেলওয়ের বড়সাহেব ভগবতীচরণ ঘোষের অধস্তন কর্মচারী ছুটি নিয়ে বারাণসী যাবেন তাঁর গুরু শ্যামাচরণ লাহিড়ীর কাছে। ভগবতীবাবু ছুটি দেননি সেদিন।সন্ধ্যায় ঘরে ফেরার পথে আচমকা শূন্য থেকে ফুটে উঠল একটি ব্যাক্তি । দীপ্ত কণ্ঠে ভর্ৎসনা করে বললেন ‘ভগবতী, তুমি কর্মচারীদের প্রতি খুব নির্দয়।’ পরক্ষণেই মিলিয়ে গেল সেই মূর্তি। অধস্তন কর্মীটি তত ক্ষণে আবেগ চেপে রাখতে পারেননি, গুরুদেব বলে কেঁদে ফেলেছেন।কারন যিনি এসেছিলেন তিনি স্বয়ং শ্যামাচরণ লাহিড়ী। ছুটি মঞ্জুর হয় । পরবর্তীতে পুরো রহস্যটা ভাল ভাবে বুঝতে সেই কর্মচারীর সঙ্গে সস্ত্রীক বারাণসীতে রওনা হলেন ভগবতীবাবু। গিয়ে দেখেন, চৌকিতে পদ্মাসনে বসা সেই লোক। আবার শ্যামচরণ মৃদু ভৎসনা করলেন ভগবতী বাবুকে সে দিনই সস্ত্রীক লাহিড়ীমশাইয়ের কাছে দীক্ষা নিলেন।

 

দেশ কাল সীমানার গণ্ডী শ্যামাচরণ অতিক্রম করে ছিলেন তার যোগ বলে এবং স্থূল দেহ ছেড়ে তিনি সুক্ষ দেহে বিচরণ করতে পারতেন অবলীলায় এবং তার সব শিষ্যদের কাছে তিনি পৌঁছে যেতেন তাদের প্রয়োজনে।

 

এমন অনেক আরো গুরুর কথা বলা বাকি আছে।

ফিরে আসবো আগামী পর্বে।

গুরু কথায়।পড়তে থাকুন।

ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।