গুরু কথা – তোতাপুরী মহারাজ 

53

গুরু কথা – তোতাপুরী মহারাজ

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

ঠাকুর রামকৃষ্ণ ছিলেন তার অসংখ্য ভক্তদের কাছে সাক্ষাৎ ব্রহ্ম স্বরূপ। স্বামী বিবেকানন্দ যেমন রামকৃষ্ণের শিষ্য ছিলেন তেমনই ঠাকুর রামকৃষ্ণ ছিলেন এক অলৌকিক ক্ষমতা সম্পন্ন যোগীর শিষ্য। ঠাকুর রামকৃষ্ণের দীক্ষা গুরু ছিলেন তোতাপুরী মহারাজ।

 

আজকের গুরু কথার এই পর্ব ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণদেবের দীক্ষা গুরু তোতাপুরী মহারাজকে নিয়ে।তোতাপুরীর মহারাজের সন্ন্যাস পূর্ব জীবন, তার জন্ম কাল বা জন্মস্থান এবং পরিবার সম্পর্কে সঠিক তথ্য কমই পাওয়া যায় তায় সেই দিকে না গিয়ে তার অলৌকিক ব্যাক্তিত্ব এবং রহস্যময় সন্ন্যাস জীনেরর কথা বলাই শ্রেয়।

 

তোতাপুরী লম্বা চওড়া সুদীর্ঘ পুরুষ ছিলেন।দীর্ঘ সময় ধ্যান ও যোগ সাধনার মাধ্যমে তিনি সাধনার অত্যন্ত উচ্ছ পর্যায়ে আরোহন করেছিলেন। তিনি ছিলেন পুরী সম্প্রদায় ভুক্ত এই নাগা সন্ন্যাসী।তোতাপুরী মহারাজ তিন দিনের বেশি কোথাও থাকতেন না কিন্তু ব্যতিক্রম হয়েছিলো দক্ষিনেশ্বর এসে|এখানে বেশ দীর্ঘ সময় তিনি কাটিয়েছিলেন রামকৃষ্ণর সান্নিধ্যে|গুরুর নাম গ্রহণ করা শাস্ত্রমতে বারণ তাই শ্রীরামকৃষ্ণ তাঁকে ‘ল্যাংটা’ বা ‘ন্যাংটা’ বলে উল্লেখ করতেন কারণ তিনি ছিলেন জটাধারী কৌপিন পরিহিত সন্ন্যাসী।গঙ্গার ধারে পঞ্চবটি উদ্যানে ধুনী জ্বালিয়ে তিনি সাধনা করতেন।

 

তোতাপুরীর মতে সকলই ছিল মায়া। দেব-দেবীর মূর্তিপূজাকেও তিনি উপহাস করতেন। বিশ্বাস করতেন এক ও অদ্বিতীয় ব্রহ্মে কিন্তু রামকৃষ্ণ তার দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টে দেন, এক্ষেত্রে এক অলৌকিক ঘটনার ও উল্লেখ পাওয়া যায়, একবার দক্ষিনেশ্বরে থাকা কালীন পেটের যন্ত্রনায় কাবু তোতাপুরী গভীর রাতে গঙ্গায় প্রান বিসর্জন দিতে গিয়ে দেখলেন কোথাও ডুবজল নেই, হেঁটেই পার হওয়া যায় গঙ্গা, তিনি উপলব্ধি করলেন ভবতারিনীর লীলা, সাক্ষাৎ করলেন স্বয়ং মা জগদম্বাকে, শরীরের সব যন্ত্রনা মুহূর্তে গায়েব হয়ে গেলো|

শিষ্য কে বললেন সব কথা মেনে নিলেন মায়ের উপস্থিতি|মেনে নিলেন ঠাকুর রামকৃষ্ণের শ্রেষ্ঠত্ব।

 

দক্ষিনেশ্বরের পঞ্চবটি বনে তোতাপুরীর কাছে দীক্ষা নিয়ে নিয়ে ছিলেন স্বয়ং রামকৃষ্ণ আবার আশ্চর্য জনক ভাবে ঠাকুরের অলৌকিক ক্ষমতা এবং তার অগাধ জ্ঞানের পরিচয় পেয়ে গুরু তোতাপুরী বিদায় নেয়ার আগে শিষ্য রামকৃষ্ণর কাছে দীক্ষা নিয়ে যান|গুরুকে পাল্টা দীক্ষা দানের এই ঘটনা ভারতের আধ্যাত্মিক জগতে বিরলতম|

 

যেহেতু পুরী সম্প্রদায়ভুক্ত তোতাপুরী মহারাজ ঠাকুর রামকৃষ্ণের দীক্ষা গুরু তাই সেই পরম্পরার অন্তরগত হয়ে রামকৃষ্ণ মিশন এবং মঠ

আজও পুরী সম্প্রদায়ের অংশ।

 

তোতাপুরী মহারাজ সম্পর্কে বলা হয় তিনি ছিলেন দীর্ঘ জীবী। আজ থেকে কয়েক বছর আগেই তাকে পুরী সহ বিভিন্ন তীর্থ স্থানে স্বশরীরে ঘুরে বেড়াতে গেছে বলে অনেকে দাবী করে থাকেন। তবে তার সত্যতা প্রমান করা সহজ নয়।

 

আজকের পর্ব এই মহান গুরুকে প্রনাম জানিয়ে শেষ করলাম।আবার আগামী পর্বে অন্য

এক গুরু প্রসঙ্গে আলোচনা নিয়ে ফিরে

আসবো। পড়তে থাকুন।

ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।