স্নান যাত্রা উপলক্ষে বিশেষ পর্ব

190

স্নান যাত্রা উপলক্ষে বিশেষ পর্ব

জগন্নাথ মূর্তি রহস্য

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

প্রতিবছর রথযাত্রার সূচনা হয় দেবস্নান পূর্ণিমার দিন স্নান যাত্রার মাধ্যমে।এই স্নানযাত্রার দিন একটি বিশেষ কূপের জল মন্ত্র দ্বারা শুদ্ধ করে একশো আট কলস জলে বিগ্রহ স্নান করানো হয়|
আর কয়েকটি দিন পরেই সেই স্নান যাত্রা উৎসব।
সেই উপলক্ষে আজ থেকে শুরু করছি জগন্নাথ দেব সংক্রান্ত ধারাবাহিক আলোচনা। আজ জগন্নাথ মূর্তি সংক্রান্ত কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ এবং বেশ রহস্যময় বিষয় সংক্ষেপে
আপনাদের জানাবো।

প্রতি বছর স্নানযাত্রার পর শুরু হয় অনসর। এই অনসরকালে জগন্নাথদেব অসুস্থতার কারণে ভক্তগণের অন্তরালে গোপন স্থানে চিকিৎসাধীন থাকেন এবং সুস্থ হয়ে পুনরায় নিদ্দিষ্ট দিনে রথে চড়ে ভক্ত দের তার দিব্য দর্শন দেন।জগন্নাথ দেবের সেবক যারা এই সময় তার বিশেষ সেবা করেন তারা বলেন এই অসুস্থ্য থাকার সময়ে প্রভুর দেহের তাপ বেড়ে যায়। সত্যি তিনি জ্বরে ভোগেন।

‘নব-কলেবর’ নামের রহস্যময় এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নিয়মিত নিদ্দিষ্ট সময়ের ব্যাবধানে দেবতার পুরোনো মূর্তি সরিয়ে নতুন মূর্তি বসানো হয় এই সময় পুরোনো মূর্তির ‘আত্মা’ নতুন মূর্তিতে সঞ্চারিত হয় এটাই পূজারীদের বিশ্বাস।
জগন্নাথ মন্দিরে ‘গর্ভগৃহ’ বা মূল কেন্দ্রস্থলে এই অতি গোপনীয় প্রথার সময়ে পুরোহিতদের চোখ আর হাত বাঁধা থাকে – যাতে পুরোনো মূর্তি থেকে ‘আত্মা’ নতুন মূর্তিতে গিয়ে ঢুকছে – এটা তাঁরা অনুভব না করেন। অনেকে মনে করেন এই সময় ব্রহ্ম পদার্থ জগন্নাথ মূর্তিতে স্থাপন করা হয় যা আসলে স্বয়ং শ্রী কৃষ্ণের হৃদয় যা আজও অক্ষত আছে।

প্রভু জগন্নাথের মূর্তিতে চোখের পাতা নেই|এর একটা কারন তিনি জগতের নাথ এবং তিনি সদা জাগ্রত|একটি মুহূর্তের জন্যও তিনি দেখা বন্ধ করেননা|তিনি পরম দয়ালু তাই প্রতি মুহূর্তে তার ভক্তদের উপর তার কৃপা দৃষ্টি নিক্ষেপিত হয়|তার অসম্পূর্ন দুই বাহু সামনের দিকে প্রসারিত যেনো তিনি যেনো তিনি তার ভক্তদের আলিঙ্গন করতে সদা প্রস্তুত। জগন্নাথ মন্দিরের মুখ্য দরজা
সদা উন্মুক্ত কারন দিনে মানুষ এবং রাতে দেবতারা তাকে দর্শন করতে আসেন।

“যে গাছের কাঠ দিয়ে জগন্নাথের মূর্তি তৈরী হতে পারে, তার এগারোটা বৈশিষ্ট্য থাকতে হবে। ”
“যেমন গাছের গায়ে হাতির শুঁড় ও চোখের আকৃতি স্পষ্ট থাকতে হবে, গাছের সাথে সাপ জড়িয়ে থাকবে, উঁইয়ের ঢিপি থাকবে ইত্যাদি।”
প্রায় দুমাস ধরে কঠিন পরিশ্রমের মধ্যে দিয়ে ওই গাছ খুঁজে বার করে তারপরে মহাযজ্ঞ এবং আরো অনুষ্ঠান করে শুরু হয় মূর্তি নির্মাণ|.

জগন্নাথ এবং পুরীর মন্দির নিয়ে অলৌকিক ঘটনার শেষ নেই। জগন্নাথ লীলা খুবই বিস্তৃত। তাই এই ধারাবাহিক আলোচনা আপাতত চলতে থাকবে। ফিরে আসবো আগামী পর্বে।পড়তে থাকুন। ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।