বিশেষ পর্ব – চিরঞ্জিবী হনুমানজী
পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক
আসন্ন হনুমান জয়ন্তী উপলক্ষে আজ থেকে শুরু করছি ছয়দিন ব্যাপী বজরংবলী সংক্রান্ত ধারাবাহিক আলোচনা। আজ শুরুতে বজরংবলীর চিরঞ্জিবী সত্ত্বা নিয়ে লিখবো।
শাস্ত্রে যে সাতজন চিরঞ্জিবীর উল্লেখ আছে তাদের মধ্যে অন্যতম হনুমান।ভগবান হনুমান ভগবান ইন্দ্রের বরপ্রদত্ত। বিশ্বাস করা হয়, হনুমান একমাত্র নিজের ইচ্ছেয় মৃত্যুবরণ করতে পারবেন বলে বর দিয়েছিলেন ইন্দ্র।কিন্তু কেনো এমন বর দেয়ার প্রয়োজন হলো তা নিয়ে শাস্ত্রে একটি
ঘটনার উল্লেখ পাওয়া যায়।
হনুমান যখন শিশু ছিলেন, তিনি সূর্যকে দেখেছিলেন এবং ভেবেছিলেন এটি একটি লাল ফল, তাই তিনি এটি খাওয়ার চেষ্টায় এর দিকে উড়ে গেলেন। ইন্দ্র যখন হনুমানকে আসতে দেখেন, তখন তিনি তাকে আঘাত করার জন্য তার বজ্র নিক্ষেপ করেন। আঘাতে হনুমানের বাম গালের হাড় আহত হয়। বায়ু দেবতা, যিনি হনুমানের পিতা ছিলেন, তাঁর পুত্রের আঘাতে ক্রুদ্ধ হয়েছিলেন, তাই তিনি আর পৃথিবীতে বায়ু সঞ্চালন করতে অস্বীকার করেছিলেন। বায়ুর অভাবে জীবকুল যখন শেষ হয়ে যেতে বসে তখন সমস্ত দেবতারা হনুমানকে বর দেন।বর দিয়েছিলেন যাতে যেকোনো ক্ষেপণাস্ত্র দ্বারা হনুমানের কোনো ক্ষতি না হয়।ভগবান শিব বর দিয়েছিলেন যে তাঁর বা তাঁর কোনো অস্ত্র দ্বারা কখনোই হনুমানের মৃত্যু হবেনা।এই সময়ে দেবরাজ ইন্দ্র বর দিয়েছিলেন যে হনুমানের মৃত্যু কেবল তার নিজের ইচ্ছায় ঘটবে।
ভগবান শ্রী রামও বর দিয়েছেন হনুমানকে। সেই বর অনুযায়ী কলি যুগের শেষ হলে তবেই মুক্তি মিলবে হনুমানের। আবার সীতাদেবীর বর অনুযায়ী হনুমান চিরঞ্জীবী। বিশ্বাস করা হয়, মা সীতার বরদানের কারণেই দ্বাপর যুগে ভগবান হনুমানের উল্লেখ পাওয়া যায়। ওই যুগে ভীমের পরীক্ষা নিয়েছিলেন ভগবান হনুমান। মহাভারতের যুদ্ধেও অর্জুনের রথের ধ্বজা রূপে হনুমান উপস্থিত ছিলেন।কলিযুগেও ভগবান হনুমানের দর্শন পেয়েছিলেন কবি তুলসিদাস। ভগবৎ গীতায় উল্লেখ করা হয়েছে কলিযুগে গন্ধমাদন পর্বতে বাস করবেন ভগবান হনুমান।
বজরংবলী অজর-অমর হওয়ার বর প্রাপ্ত। অর্থাত্ তিনি কখনও বুড়ো হবেন না। আবার তাঁর কখনও মৃত্যু হবে না। কথিত আছে, রামায়ণের সমস্ত চরিত্র মোক্ষ লাভ করে, কিন্তু হনুমান সব সময়ের জন্য পৃথিবীতে থাকার ইচ্ছা ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, যত দিন মানুষের হৃদয়ে রাম জীবিত আছেন, তত দিন তিনি পৃথিবীতে থাকবেন।মনে করার হয় যেখানে ভক্তি সহকারে রাম নাম হয় সেখানেই তিনি আসেন এবং শ্রীলংকার একটি জনগোষ্ঠীকে নিদ্দিষ্ট সময় অন্তর অন্তর দেখা দেন|এমনটাও শোনা যায় যে হিমালয়ে অবস্থিত বহু উচ্চকোটির সাধু সন্ন্যাসীরা তার দর্শন পেয়েছেন।
শোনা যায় যেখানেই অন্তরথেকে রাম নাম করা হয় সেখানেই তিনি আসেন। তাই সব নাম সংকীর্ণ এর স্থানে হনুমানের জন্য একটি নিদ্দিষ্ট আসন সর্বদা ফাঁকা রাখা হয়।
ফিরে আসবো পরের পর্বে। বজরংবলী সংক্রান্ত আরো একটি পর্ব নিয়ে। পড়তে থাকুন।
ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।