ধনতেরাসের পরে এবং দীপাবলির আগে আজকের দিনে পালন হয় ভুত চতুর্দশী।
মনে করা হয় মৃত পূর্ব পুরুষরা এই আশ্বিন কৃষ্ণা চতুর্দশীর দিনে মর্ত্যে আসেন।
ভুত চতুর্দশীকে নরক চতুর্দশী ও বলা হয়। পৌরাণিক ব্যাখ্যা অনুসারে বিষ্ণু রাজা বলীকে প্রতি বছর পৃথিবীতে পূজা পাওয়ার আশীর্বাদ করেছিলেন । এরপর থেকে কালীপূজার আগের রাতে রাজা বলি পাতাল থেকে বা নরক থেকে পৃথিবীতে পূজা নিতে আসেন। তাঁর সঙ্গে আসে সহস্র ভূত, প্রেত, অশরীরী আত্মা।
আবার অন্য একটি ব্যাখ্যা অনুসারে দীপান্বিতা অমাবস্যার আগের রাতে চামুণ্ডা রূপে মা কালী এই ভূত চতুর্দশীর দিনে চৌদ্দজন ভূতকে সঙ্গে নিয়ে ভক্তের বাড়ি থেকে অশুভ শক্তিকে দূর করতে।
ফিরে এসি কালী কথায়।আজ কালীক্ষেত্র পর্বে শ্যামবাজারের জয়কালী বাড়ির কথা লিখবো|এই কালী মন্দিরের পরতে পরতে জড়িয়ে আছে নানা অলৌকিক ঘটনা ও অদ্ভুত সব জশ্রুতি|
শাস্ত্র মতে পুজোয় ডিম ব্যবহার হয়না,কিন্তু এই মন্দিরে পুজোয় ডিম ব্যবহার হয়।
অবিশ্বাস্য হলেও এমনটাই সত্যি। কি করে শুরু হলো ডিম দিয়ে পুজোর তা নিয়েও এক ঘটনা আছে শোনা যায় বহুকাল আগে পরিবারের সদস্যরা এক বিকাল বেলা নিজেদের মধ্যেই আলচনা করছিলেন আলোচনার বিষয় ছিল ঠাকুরের খাবার।” ঠাকুরের খাবারের জন্য মিষ্টি , ফল এসব ব্যবহার হয় । আবার ঠাকুরের মাছ, মাংস ভোগ হিসাবে নিবেদন করার রীতিও রয়েছে। কিন্তু সেদিন তাঁরা আলোচনা করছিলেন কেউ যদি এই পুজোর উদ্দেশ্যে ফল , মিষ্টির জায়গায় ডিম দেয় তখন কি হবে? ঠাকুর কি তা গ্রহন করবেন ? “অদ্ভুত ভাবে কিছুক্ষণ পরেই একজন মন্দিরে পুজো দিতে আসেন ডিম নিয়ে।” ডিম দিয়ে পুজো শুনেই সবাই নাকচ করে দেন। অনেকে আবার কিছুটা ভয়ও পেয়েছিলেন। কিন্তু সেই ভক্ত নাছোড়বান্দা ছিলেন। কিছুতেই তিনি না পুজো দিয়ে ফিরে যাবেন না। আর পুজো দিলে তিনি দেবেন ওই ডিম দিয়েই। কারন তিনি সম্প্রতি ডিমের ব্যবসা শুরু করেছেন এবং তিনি ঠিক করেছেন ব্যবসা শুরুর আগে মা’কে পুজো দেবেন। আর যেহেতু তিনি ডিমের ব্যবসায়ী তাঁর বিশ্বাস ওই ডিম দিয়ে পুজো অর্পণ করলেই দেবী খুশি হবেন। ব্যবসায় উন্নতি হবে তাঁর। শেষে ডিম দিয়েই পুজো হয় তবে ওই ব্যবসায়ী একবারের জন্যও মন্দিরে প্রবেশ করেননি। বাইরে থেকেই পুজো নিয়ে চলে গিয়েছিলেন।সেই থেকে ডিম দিয়ে পুজোর প্রচলন হয়|
এই মন্দির নির্মাণের সাথেও জড়িত আছে অলৌকিক এক ঘটনা|সাড়ে তিনশো বছর আগে এই পরিবারের পরিবারেরই এক সদস্য গঙ্গার স্নান করার পথে এই মাতৃ মূর্তিকে দেখেন। তিনি সেখানে মা কে প্রনাম করে বাড়ি চলে যান। সেদিনই তিনি স্বপ্নাদেশ পান যে মা চাইছেন তিনিই তাঁর পুজো করুন। সেই শুরু হয় জয়কালির আরাধনা।
প্রায় সাড়ে তিনশো বছর অতিক্রান্ত হয়েছে।
আজও জয়কালি একই ভাবে পূজিতা হচ্ছেন । অবিশ্বাস্য হলেও অত বছর আগে পাওয়া একটি মাটির মূর্তি এখনও অবিকল একরকম থেকে গিয়েছেন। দীপান্বিতা অমাবস্যায় দেবী
জয় কালীর বিশেষ পুজোর আয়োজন হয়।
আগামী পর্বে অন্য কোনো কালী মন্দিরের কথা
নিয়ে আবার ফিরে আসবো। পড়তে থাকুন।
ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।