একান্ন পীঠ – নলাটেশ্বরী

44
আজকের একান্ন পীঠ পর্বে লিখবো
বাংলার শক্তি পীঠেগুলির অন্যতম একটি পীঠ নিয়ে যা বীরভূমের নলহাটিতে অবস্থিত এবং নলাটেশ্বরী নামে প্রসিদ্ধ।
শাস্ত্র মতে এখানে সতীর গলার নলি পড়েছিল। নলাটেশ্বরী থেকেই এলাকার নাম নলহাটি।
জনশ্রুতি আছে যে আজ থেকে প্রায় পাঁচশো বছর আগে স্মরনাথ শর্মা নামে এক সাধক, স্বপ্নে দেবী নলাটেশ্বরীর দেখা পেয়ে জানতে পারেন, এখানেই সতীর খণ্ডিত দেহাংশ শিলারূপে অবস্থান করছে। তারপর সাধক স্মরনাথই এই জায়গা আবিষ্কার করে দেবীর নিত্যপুজার ব্যবস্থা করেন। তারপর ধীরে ধীরে প্রচারিত হয় দেবী নলাটেশ্বরীর মহাত্ম।আবার দ্বিমত ও আছে।অনেকে বলেন, ২৫২ বঙ্গাব্দে ব্রহ্মচারী কামদেব স্বপ্নাদেশে কাশী থেকে এসে এই পীঠস্থানটি আবিষ্কার করেন।
নলহাটিতে আছে ছোট্ট জঙ্গলাবৃত এক প্রাচীন টিলা। তারই এক প্রান্তে দেবী নলাটেশ্বরীর অধিষ্ঠান।এককালে বহু সাধকের সাধনার সাক্ষী জঙ্গল ঘেরা এই পাহাড়। এক সময়ে এখানে সাধারণ মানুষের তেমন আনাগোনা ছিল না। কেবলমাত্র যাতায়াত ছিল দুর্ধর্ষ দস্যু এবং বীরাচারী তান্ত্রিকদের।
ইতিহাস বলছে কোনো এক সময়ে নাটোরের রানি ভবানী বর্তমান মন্দির তৈরি করান।বর্তমানে এখানে গণেশও পাহাড়ে গায়ে শিলারূপে অধিষ্ঠিত।রয়েছে সিদ্ধিদাতা গণেশের প্রাচীন একটি মন্দির।কথিত আছে, ভৈরব মন্দির স্থাপনের সময়, মাটির নীচ থেকে উঠে এসেছিল শ্রীবিষ্ণুর পদচিহ্ন আঁকা শিলাখণ্ড! আজও দেবী ও ভৈরবের আগে প্রতিদিন এই শিলাখণ্ডের পুজো হয়।
সূর্যোদয়ের আগেই মূল মন্দিরে দেবীর মহাস্নান সম্পন্ন হয়। তারপর মঙ্গলারতি করে দিনের শুরু। তখন থেকেই ভক্তদের জন্য খুলে যায় মন্দিরের দরজা। বিশেষ বিশেষ অমাবস্যা তিথিতে খুব সূর্য ওঠার আগে দেবীর মঙ্গলারতি হয়।
তারপর শুরু হয় নিত্যপুজো।গভীর রাতে একশো আটটি টি প্রদীপ জ্বালিয়ে মায়ের বিশেষ আরতি হয়।যুগ যুগ ধরে এই প্রথা চলে আসছে।
ফিরে আসবো আগামী পর্বে। একান্ন পীঠের পরবর্তী পর্ব নিয়ে। পড়তে থাকুন।
ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।