আজকের একান্ন পীঠ পর্বে শক্তি পীঠ হুগলির খানাকুলে অবস্থিত রত্নাবলী নিয়ে আলোচনা করবো। জানাবো এই পীঠের ইতিহাস গুরুত্ব।
পুরান অনুসারে রত্নাবলীতে শ্বেত পলাশ গাছের নিচে দেবীর দক্ষিণ স্কন্ধ অর্থাৎ ডান দিকের কাঁধ পড়েছিল।পরবর্তীতে স্বপ্নাদেশ পেয়ে এখানে মন্দির বানান সাধক স্বরূপানন্দ ব্রহ্মচারী।
এই অঞ্চলের ভৌগোলিক ইতিহাস অনুসারে এক সময়ে খানাকুলের উপর দিয়ে রত্নাকর নদী বয়ে যেত। সেই নদী আজ আর নেই। নদীর চিহ্ন হিসেবে পড়ে রয়েছে মাজা এক খাল।
নদীর শুকিয়ে যাওয়া নিয়েও একটি অলৌকিক ঘটনার উল্লেখ পাওয়া যায়। শোনা যায় একসময় এই নদী ছিল বিশাল চওড়া। একবার প্রসিদ্ধ সাধক অভিরাম গোস্বামী এই নদীতটে স্নান করছিলেন। হঠাৎই নদীর জল ফুলে ফেঁপে জোয়ার আসে। সেই জোয়ারের জলে অভিরামের কৌপিন ভেসে চলে যায়। প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ সাধক তখন নদীকে শাপ দেন। বলেন, এই মুহূর্তে তুই অন্ধ হয়ে যা। আমি যতদিন বেঁচে থাকব ততদিনই তুই অন্তর্বর্তী শিলা হয়ে মাটির তলা দিয়ে বইবি। ওপরে ব্যাপ্তি আর থাকবে না। তারপর থেকেই নদীর জল শুকোতে থাকে। নদী শুকিয়ে হয়ে যায় খাল যাকে এলাকায় কানা দ্বারকেশ্বর খাল বলেই ডাকা হয় ।
আদিকালের সেই রত্নাকর নদী তথা বর্তমানের কানা দ্বারকেশ্বর খালের ধারেই রত্নাবলী কালীমন্দিরটি অবস্থিত । এখানে আগে থেকেই ছিলো ঘন্টেশ্বর শিবমন্দির। পরবর্তীতে মা কালীর মূর্তি প্রতিষ্ঠা করেন সাধক স্বরূপানন্দ ব্রহ্মচারী। তখন থেকেই দেবীর পূজা হয়ে আসছে।
প্রতিষ্ঠার সময় এই মন্দিরটি ছিল একটি তালপাতার কুঁড়েঘর। বহু বছর পর বর্ধমানের মহারাজা এই মন্দিরটি পাকা করেন। সেই কাঠামোই এখনও রয়েছে।স্বপ্নাদেশ পাওয়া স্বরূপানন্দ ব্রহ্মচারী প্রস্তুরীভূত দেবীর দক্ষিণ স্কন্ধটি মঙ্গলঘটের নীচে রেখে পুজো শুরু করেন।রত্নাকর নদীর তীরে মন্দিরটি গড়ে উঠেছিল বলেই এখানে মায়ের নাম রত্নাবলী।
সাধক স্বরূপানন্দ মহারাজ পঞ্চমুণ্ডির আসনে ঘটে পুজো শুরু করেন। তার বহু কাল পরে মায়ের মূর্তি স্থাপন করা হয়।এখানে মায়ের চার হাত।
যথারীতি এই মন্দিরের প্রথম পূজারী স্বরূপানন্দ মহারাজের দেখানো পথেই আজও পুজো অনুষ্ঠিত হয়। সেই মতোই সব রীতি নীতি পালন হয় । আজও এখানে নিত্য পুজোর পাশাপাশি অমাবস্যায় হোম যজ্ঞ সহ বিশেষ পুজোর আয়োজন হয়।বহু ভক্ত আসেন।
ফিরে আসবো আগামী পর্বে। একান্ন পীঠের পরবর্তী শক্তি পীঠ নিয়ে। পড়তে থাকুন ।
ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।