দূর্গা কথা – নবকৃষ্ণ দেবের দূর্গা পুজো

344

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রীজাতক

বাংলার বনেদি বাড়ির পুজো ঐতিহাসিক পুজোর মধ্যে রাজা নব কৃষ্ণ দেবের শোভাবাজার রাজবাড়ীর পুজো থাকবে একদম প্রথম শাড়িতে|
আজকের পর্ব এই ঐতিহাসিক পুজো নিয়ে।

সেকালে বলা হতো দূর্গা পূজোর সময়ে দেবী মর্তে থাকাকালীন তার মনোরঞ্জনের জন্য এই বাড়িতেই আসতেন|এমন ভাবনার পেছনে অনেক কারন আছে|সে বিষয়ে পরে আসছি আগে এই বাড়ি ও তার ইতিহাস সংক্ষেপে জেনে নেয়া দরকার|

যদিও এই পরিবারের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন বিজয় হরি দেব তবে এই পরিবারের স্বর্ণযুগ বলা হয় রাজা নবকৃষ্ণ দেবের সময় কে এবং তার আমলেই শুরু হয় এই দূর্গা পূজা|নব কৃষ্ণদেব ছিলেন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির একজন সাধারণ কর্মচারী যিনি নিজের দক্ষতায় ও পরিশ্রমে কোম্পানির মুন্সী হয়ে ছিলেন|পলাশীর যুদ্ধে তিনি নানা ভাবে ক্লাইভ কে সাহায্য করেন ও পুরুস্কার স্বরূপ প্রচুর অর্থ লাভ করেন|

মূলত পলাশীর যুদ্ধ জয় কে স্মরণীয় করে রাখতেই নবকৃষ্ণ দেবে দূর্গা পুজো শুরু করেছিলেন তাছাড়াও তার উদেশ্য ছিলো ক্লাইভ কে খুশি করে নিজের ক্ষমতা বৃদ্ধি করা|বলা বাহুল্য এই উদ্দেশ্যে তিনি সম্পূর্ণ সফল হয়েছিলেন|তার দূর্গা পুজোয় অংশগ্রহণ করেছিলেন স্বয়ং লর্ড ক্লাইভ। সাহেব দের উপস্থিতির জন্য সেকালে এই পুজো কে গোরা দের পুজো বা কোম্পানির পুজো বলা হতো|

উদেশ্য যাই থাকুক শাস্ত্র মতে নিষ্ঠা সহকারে পুজো করতেন নবকৃষ্ণ দেব|প্রচুর অর্থ ব্যায় হতো এই পরিবারের দূর্গা পুজোয়|বসতো গান বাজনার আসর, নাচ, কবি গানের ও ব্যবস্থা থাকতো|দূর্গা পুজো উপলক্ষে অ্যান্টনি ফিরিঙ্গি, ভোলা ময়রার মতো কবিয়ালরা এখানে এসেছেন কবির লড়াই করতে আবার গহরজান নুর বক্স প্রমুখ নামী নর্তকীরা এই বাড়িতে এসেছেন নাচ করতে|সব মিলিয়ে এলাহী আয়োজন হতো শোভাবাজার রাজ বাড়ির দূর্গা পুজোয় আর এই কারণেই মনে করা হতো যে এটা মর্তে দেবী দুর্গার মনোরঞ্জনের স্থান|

পরবর্তীতে দুই শরিকের মধ্যে ভাগ হয়ে যায় সম্পত্তি তবে প্রথা মেনে নিষ্ঠা সহকারে আজও শোভাবাজর রাজবাড়ি তে দূর্গা পূজা হয়|উল্টো রথের দিন কাঠামো পুজো দিয়ে শুরু হয় দেবীমূর্তি তৈরির কাজ|শোভাবাজার রাজবাড়ির মাতৃমূর্তির বিশেষ এক বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এছাড়া, এখানকার পুজোর উপাচারও বেশ চমকপ্রদ।স্বাধীনতার আগে সন্ধিপুজোতে কামানের গোলার শব্দে শুরু হত পুজো এবং শেষও হত একই ভাবে|মা দুর্গা এই বাড়িতে বৈষ্ণবী হিসেবে পূজিতা হন। তাই শোভাবাজার রাজবাড়ির পুজোয় অন্নভোগ থাকে না। গোটা ফল, গোটা আনাজ, শুকনো চাল, কচুরি, খাজা, গজা, মতিচুর-সহ নানা ধরনের মিষ্টি দেবীকে উত্সর্গ করা হয়|বর্তমানে এখানে বলী প্রথা নেই|এবাড়ির পুজোয়|প্রতিমার সামনে একটা বড় হাড়িতে জল রাখা হয়। সেই জলে দেবীর পায়ের প্রতিবম্বের ছবি দেখে সবাই প্রণাম করে। একে দর্পণ বিসর্জন বলা হয়|তারপর প্রথা মেনে দশমীর দিনই হয় বিসর্জন|আগে নীলকণ্ঠ পাখি ওড়ানোর রীতি থাকলেও সরকারি নিয়মে তা এখন বন্ধ|

আজও বহু মানুষ শোভাবাজার রাজবাড়ির পুজো দেখার জন্য ভিড় করেন।

আজকের পর্বে এইটুকুই|ফিরবো পরের পর্বে|থাকবে দূর্গা পুজো উপলক্ষে আরো একটি
বিশেষ পর্ব।পড়তে থাকুন।
ভালো থাকুন।ধন্যবাদ।