পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক বাংলায় শক্তিপীঠের সংখ্যা নেহাত কম না। তারমধ্যে বেশিভাগ শক্তি পীঠ রয়েছে বীরভূমে যেগুলি নিয়ে বহুবার আলোচনা করেছি।আবার বহু শক্তি পীঠ আছে যেগুলির সঠিক অস্তিত্বর খোঁজ পাওয়া যায়না। সেগুলিকে বলা হয়গুপ্ত শক্তি পীঠ। এমনই এক গুপ্ত শক্তিপীঠ আছেদক্ষিণ দিনাজপুরে। আজকের পর্ব এই কালী ক্ষেত্র নিয়ে।দক্ষিণ দিনাজপুরের বালুরঘাটের বুড়া মা বা বুড়ি মা কালী মন্দির খুবই জাগ্রত ।শোনাযায় কোনো এক তন্ত্র সাধক আত্রেয়ী নদীর জলে প্রথম দেখা পান এক বিগ্রহের। তিনি সেটিকে স্থাপন করেন আত্রেয়ী নদীর ধারেই। তবে সেই ইতিহাস কবেকার তা কেউ ঠিক মনে করতে পারেন না।তবে আনুমানিক কয়েকশো বছর ধরে এখানে বুড়ি মা পূজিতা হয়ে আসছেন।আবার মন্দির সৃষ্টির সাথে জড়িয়ে আছে এক অলৌকিক ঘটনা। কথিত আছে, বহু বছর আগে জনৈক এক বাসিন্দার গাভী হারিয়ে যায়। অনেক খোঁজাখুজির পরেও সেটিকে পাওয়া যায় না। পরে বৃদ্ধারূপী মা কালী তাঁকে স্বপ্নে দেখা দিয়ে নির্দেশ দেন আত্রেয়ী নদী পাড়ের জঙ্গলে গিয়ে খুঁজতে। তাঁর দেখানো দিক-নির্দেশ অনুযায়ী সেই ব্য়ক্তি যান। গিয়ে দেখেন, জঙ্গলের ভিতর বালির মধ্যে পড়ে থাকা একটি পাথরের খণ্ডকে গরুটি নিজে থেকে দুধ ঝরিয়ে স্নান করিয়ে দিচ্ছে। এর পরেই তিনি পাথরটি স্বযত্নে এনে আত্রেয়ীর পাড়েই সেটিকে প্রতিষ্ঠা করে মা বুড়িমা কালীর পুজো শুরু করেন।যা দিনে দিনে জনপ্রিতা লাভ করে এবং আজও সেই পরম্পরা চলছে।ভক্তদের বিশ্বাস এই কালী মন্দির আসলে সতীর একান্ন পীঠের কোনও গুপ্তপীঠ। দেবী এখানে স্বয়ম্ভূ। কালো পাথরের খণ্ডকেই এখানে দেবী রূপে পুজো করা হয়।তবে পুজোর দিন সেই শিলা খন্ডকে পড়ানো হয় সোনার মুখাবয়ব। সঙ্গে বিগ্রহ সাজানো হয় সোনা-রূপোর বিভিন্ন অলঙ্কারে। মনে করা হয়, দেবী ডাকড়া চন্ডী,বয়রা কালী এবং বুড়িমা তিন বোন এবং প্রতি বছর ডাকড়া চন্ডী আত্রেয়ীতে বিসর্জন পূর্বে দেখা করে যান তাঁর দুই বোনের সঙ্গে। এই রীতি যুগ যুগ ধরে চলে আসছে।গোটা জেলা তথা উত্তর বঙ্গের মানুষের কাছেতাদের বুড়িমা কালী পরম আস্থার স্থান।দেবী কালিকার ভয়াল রূপের অন্তরালে যে ব্রহ্মময়ী মাতৃরূপ তাতেই আস্থা রেখে বুড়িমা ঈশ্বর এবং ভেদাভেদ কাটিয়ে যেন হয়ে উঠেছে এলাকাবাসীর আপন মা। সারা বছর সকাল-সন্ধ্যে পুজো হয়। আর, শ্যামাপূজার দিন বিশেষ পুজো হয়। লক্ষাধিক ভক্তের সমাগম হয় ওই দিন। কৌশিকী অমাবস্যা তিথিতেও দেবীর বিশেষ পূজোর আয়োজন হয়।আসন্ন কৌশিকী অমাবস্যা উপলক্ষে চলতে থাকবে ধারাবাহিক কালী কথা।ফিরে আসবো আগামী দিনে।নতুন পর্ব নিয়ে।পড়তে থাকুন।ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।