কথায় বলে বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণ। এই তেরো পার্বণেরই অন্যতম হল নীল ষষ্ঠীর ব্রত।দুরকম ভাবে এই দিনটির তাৎপর্য ব্যাখ্যা করা যায় একটি লৌকিক মতে দ্বিতীয়টি পৌরাণিক মতে।আজ দুটি দিক নিয়েই লিখবো।নীল ষষ্ঠীর ব্রত যারা করেন তারা সারাদিন নির্জলা উপোস রেখে সন্ধের পর শিবলিঙ্গে জল ঢেলে, মহাদেবের পুজো করেন এবং প্রসাদ খেয়ে তবে উপবাস ভঙ্গ করেন। সাধারণত গ্রাম বাংলায় আমাদের মায়েরা এই ব্রত করেন সংসারের ও বিশেষ করে সন্তানের কল্যাণের জন্য।পুরান মতে দেবাদিদেব শিবের অপর নাম নীলকণ্ঠ বা নীল কারন সমুদ্র মন্থণের সময় উঠে আসা বিষ পান করে তার কণ্ঠ নীল বর্ণের হয়ে যায়।শাস্ত্র মতে এই তিথিতে শিবের সঙ্গে নীলচণ্ডিকা বা নীলাবতী পরমেশ্বরীর বিয়ে উপলক্ষ্যে লৌকিক আচার-অনুষ্ঠান সংঘটিত হয় । দক্ষযজ্ঞে দেহত্যাগের পর সতী পুনরায় নীলধ্বজ রাজার বিল্ববনে আবির্ভূতা হয়ে ছিলেন ৷ এরপর রাজা তাঁকে নিজের মেয়ের মতো করে বড় করে শিবের সঙ্গে ফের বিয়ে দেন ৷ সেই বিবাহের তিথি উদযাপন করা হয় নীল পূজায়।পৌরাণিক ব্যাখ্যার বাইরে যে লৌকিক ব্যাখ্যা আছে নীল ষষ্ঠী নিয়ে সেখানে একটিব্রত কথার উল্লেখ পাওয়ার যায়।এক গ্রামে এক ব্রাহ্মণ ও ব্রাহ্মণী ছিলেন।তাঁরা ছিলেন অত্যন্ত ধর্মপ্রাণ। মন দিয়ে ঈশ্বরের আরাধনা করলেও তাঁদের সব ছেলে-মেয়েগুলি একে একে মারা যায়। এই ঘটনায় ঈশ্বরের উপর থেকে বিশ্বাস হারিয়ে ফেলেন ব্রাহ্মণী। তাঁরা দু-জনে ঘরবাড়ি ছেড়ে মনের দুঃখে কাশীবাসী হন। কাশীতে গিয়ে একদিন গঙ্গায় স্নান সেরে মণিকর্ণিকা ঘাটে বসে আছেন, হঠাত্ই এক বৃদ্ধা ব্রাহ্মণীকে দেখা দিয়ে একটি উপদেশ দেন। তিনি বলেন – চৈত্র সংক্রান্তির আগের দিন নির্জলা উপবাস রেখে মহাদেবের পুজো করবে। সন্ধেবেলা শিবের ঘরে বাতি দিয়ে তবেই জল খাবে।’ ষষ্ঠীবুড়ির কথা অক্ষরে অক্ষরে পালন করে ফের সন্তান লাভ করেন ওই ব্রাহ্মণী।আসলে ওই বৃদ্ধা ছিলেন মা ষষ্ঠী। এবং সেইথেকে মর্তে নীল ষষ্ঠীর ব্রত প্রচলিত হয়।নীল পুজোর দিন নিরামিষ আহার করুন , ডাবের জল দিয়ে শিবের অভিষেক করে বারোটি প্রদীপ জালান ও 108 বার ওঁম নমঃ শিবায়ঃ জপ করুন আপনার সংসারে সুখ শান্তি ও সমৃদ্ধি বিরাজমান থাকবে।ফিরে আসবো পরের পর্বে। ধারাবাহিক আলোচনা নিয়ে। সবাইকে জানাই নীল পূজোর শুভেচ্ছা। পড়তে থাকুন।ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।