দেবী মাহাত্ম – রানী রাসমণির অন্নপূর্ণা

166

সামান্য কিছুদি আগে অন্নপূর্ণা পুজো উপলক্ষে বিশেষ পর্বে বাংলার একটি অন্নপূর্ণা মন্দিরের কথা উল্লেখ করে ছিলাম। আজ রানী রাসমণির অন্নপূর্ণা মন্দির নিয়ে বিস্তারিত ভাবে লিখবো ।ব্যারাকপুরের অবস্থিত এই অন্নপূর্ণা মন্দির নির্মিত হয়েছিল দক্ষিণেশ্বরের মন্দির নির্মাণের বেশ কয়েক বছর পরে। মথুরমোহন বিশ্বাসের ইচ্ছাকে বাস্তবায়িত করতেই জগদম্বা তৈরি করেছিলেন এই মন্দির। এই মন্দির নির্মাণের সাথে জড়িত অলৌকিক কাহিনীটি হলো এইরকম – ১৮৪৭-এ রানি রাসমণি তাঁর জামাই মথুরমোহন বিশ্বাস সহ অন্যান্য আত্মীয়স্বজন নিয়ে জল পথে কাশীযাত্রা করেছিলেন। যাত্রা শুরুর দিন রাতেই রানীমা দেবীর স্বপ্নাদেশ পান যে কাশী না গিয়ে গঙ্গার পাড়েই মন্দির প্রতিষ্ঠা করে তাঁর নিত্যপুজোর ব্যবস্থা করা হোক। রানি কাশীযাত্রা স্থগিত করে ফিরে আসেন। নানা কারণে সেবার মন্দির তৈরী হয়নি ।তারমধ্যে তৈরী হয়ে যায় দক্ষিনেশ্বর মন্দির।এদিকে অন্নপূর্ণা-দর্শন না হওয়ায় মথুরমোহনের মনে মনে ইচ্ছে ছিল দেবী অন্নপূর্ণার মন্দির প্রতিষ্ঠা করার। কিন্তু তাঁর জীবদ্দশায় তা সম্ভব হয়নি। শেষ পর্যন্ত তাঁর সেই স্বপ্ন পূরণ করেন তাঁর স্ত্রী রানি রাসমণির ছোটো মেয়ে জগদম্বাদেবী। তৈরী হয় তার মায়ের স্বপ্নদেশ পাওয়া অন্নপূর্ণা মন্দির।মন্দির টি ন’টি চূড়াবিশিষ্ট নবরত্ন মাতৃমন্দির, ছ’টি আটচালার শিবমন্দির, দু’টি নহবতখানা, নাটমন্দির, ভোগের ঘর, গঙ্গায় স্নানঘাট ইত্যাদি তৈরি হয়েছিল।অন্নপূর্ণা মন্দিরটি দেখতে অবিকল দক্ষিণেশ্বরের ভবতারিণী মন্দিরের মতো।মন্দিরের গর্ভগৃহে অধিষ্ঠিত শিব ও অন্নপূর্ণার বিগ্রহ অষ্টধাতুর। মাতৃমূর্তি দক্ষিণমুখী।পাশে ভিক্ষা পাত্র হাতে শিব।অন্নপূর্ণা মন্দিরের তোরণদ্বারের ওপর স্থাপিত রয়েছে এক সিংহমূর্তি। যা নিয়ে সেকালে ব্রিটিশরা আপত্তি করে ছিলো কারণ ব্রিটিশদের দাবি ছিল, সিংহ তাদের রাজশক্তির প্রতীক। বিবাদ গড়ায় আদালত পর্যন্ত। তবে আইনি লড়াইয়ে জয় হয়েছিল রাসমণির পরিবারের।  ব্যারাকপুরে অন্নপূর্ণা মন্দির প্রাঙ্গণে রয়েছে ছ’টি শিবমন্দির।মন্দিরের পাশেই চাঁদনি রীতির গঙ্গার ঘাট আছে যা রানি রাসমণি ঘাট নামে পরিচিত। শোনা যায় এই ঘাটে ঠাকুর স্বয়ং শ্রীরামকৃষ্ণ স্নান করেছিলেন।সেই রানীও নেই। নেই সেই ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ। তবে রয়ে গেছে এই প্রাচীন অন্নপূর্ণা মন্দির বহু ইতিহাস ও অলৌকিক ঘটনার সাক্ষী হয়ে। ফিরে আসবো পরের পর্বে। এমনই একটি বিষয় নিয়ে। পড়তে থাকুন।ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।