শিব পুরান – ব্যাধ ও শিব চতুর্দশী ব্রত

439

আজ আপনাদের দেবাদিদেব মহাদেবের এক অদ্ভুত লীলার কথা বলবো যেখানে প্রধান চরিত্র একজন ব্যাধ|

শিবপুরানের অষ্টম পরিচ্ছেদ অনুসারে, বহুকাল আগে বারাণসী তথা কাশীধামে এক নিষ্ঠুর ব্যাধ বাস করত। সে দিনরাত শুধু জীবহত্যা করে বেড়াত। একদিন ব্যাধ শিকার করতে গিয়ে অনেক পশু পাখি শিকার করে। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসতেই সে বাড়ির দিকে রওনা হয়। কিন্তু কিছুদূর যেতেই পথে রাত্রি হয়ে যায়। হিংস্র জন্তুর ভয়ে এক গাছের উপর আশ্রয় নেয় রাত কাটানোর জন্য|

সেদিন ছিল শিবচতুর্দশী অর্থাৎ মহাশিবরাত্রি। আর ব্যাধও ছিল উপবাসী। যে গাছে ব্যাধ আশ্রয় নিয়েছিল সেই গাছটি ছিল বেলগাছ। আর সেই গাছের নিচে ছিল একটি শিবলিঙ্গ।ব্যাধের হাত লেগে শিশির জলে ভেজা কয়েকটি বেলপাতা খসে পড়ে ঐ শিবলিঙ্গের মাথার উপর। তার ফেলা বেলপাতাগুলো শিবলিঙ্গের মাথায় পড়ে এর ফলে তার অজান্তেই শিবচতুর্দশী ব্রতের ফল লাভ হয়, পরদিন ব্যাধ সকালে বাড়ি ফিরে আসে। সে রাতে বাড়ি না ফেরায় সবাই তার জন্য ভাবছিল। ব্যাধ ফিরে আসতে তাকে তার বৌ খেতে দিল। এমন সময় একজন অতিথি বাড়িতে এলো। ব্যাধ কি ভেবে তার নিজের খাবারগুলি অতিথিকে দিল। এতে তার ব্রতের পারণ ফল লাভ হলো।

কিছুদিন পরে সেই ব্যাধ মারা গেলে। যমদূতরা তাকে নিতে আসে কিন্তু শিব রাত্রি পালনের পুন্য রয়েছে ওই ব্যাধের তাই সেখানে পৌঁছয় শিবের দূতেরা। কে ব্যাধকে নিয়ে যাবে তাই নিয়ে দুই দলে যুদ্ধ বেধে যায়। যমদূতেরা যুদ্ধে হেরে গেলে শিবদূতরা ব্যাধকে কৈলাসে নিয়ে যায়। যুদ্ধে হেরে গিয়েও যমদূতেরা তার পিছনে পিছনে সেখানে ধাওয়া করে।

কৈলাসের দ্বারে নন্দী পাহারায় ছিল। সে ব্যাধের শিব রাত্রির কথা বললে সব শুনে যমদূতেরা গিয়ে যমকে সব কথা বলে। যমরাজ শুনে বললেন ‘হ্যাঁ, যে শিব বা বিষ্ণুর ভক্ত কিংবা যে শিবচতুর্দশী ব্রত পালন করে আর যে বারানসী ধামে মরে, তার উপর যমের কোনো অধিকার থাকে না। তার মুক্তিলাভ ঘটে। এইভাবে মর্ত্যলোকে শিবচতুর্দশী ব্রতের প্রচার ঘটে।’

এই গল্প থেকে আমরা জানতে পারি কতো অল্পেই মহাদেব তুষ্ট হন|এমনকি অজান্তেও তার ব্রত পালন করলে পূর্ণ ফল পাওয়া যায়|

ফিরে আসবো পরের পর্বে|শিব পুরান নিয়ে|পড়তে থাকুন|ভালো থাকুন|ধন্যবাদ|