আজকের পর্বে ডাকাত সর্দার প্রহ্লাদের প্রতিষ্ঠিত | বর্ধমানের বামা কালীর কথা লিখবো|পূর্ব বর্ধমানের আউশগ্রামের রামনগর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় প্রহ্লাদ ডাকাতের প্রতিষ্ঠিত বামা কালী বেশ বিখ্যাত ।ডাকাত কালী মন্দিরটি বেশ প্রাচীন|সে প্রায় ৩০০ বছর আগের কথা পাণ্ডুক গ্রামে ছিলো এক দস্যু পরিবারের বাস তারাই তৈরী করেছিলেন এই বামা কালী মন্দির| বর্তমানে পরিবারের সদস্যরা এক অলৌকিক ঘটনার কথা জানান তাদের মতে তাঁদের পূর্ব পুরুষেরা সালারের কাছে কেতুগ্রাম থানার মেটলি গ্রামের ‘রামসীতা’ মন্দিরের স্বর্ণ অলঙ্কার ডাকাতি করতে গিয়েছিলেন। পথে বীরভূমের মুলুকের কাছে অপরূপা নারী মূর্তি দেখে ডাকাতরা চমকে ওঠেন। কিন্তু ডাকাত সর্দার প্রহ্লাদ মেটের নির্দেশ ছিল, ডাকাতির পথে মেয়ে মানুষ আর শিশুর গায়ে হাত তোলা যাবে না শোনা যায় একবার সে নীতি লঙ্ঘন করায় এক সদস্যকে সর্দার প্রহ্লাদ এক কোপে দু’টুকরো করে দেন।সেই অপরিচিতা নারীর কাছে প্রহ্লাদ ডাকাত জানতে চান, ‘এই রাত্রিকালে আপনি কে মা?’ তখন সেই নারী জানান, আমি বামা।তারপর তারা দেখে যে মা মৃন্ময়ী মূর্তি থেকে চিন্ময়ী মূর্তি ধরেছেন এবং তিনি নিজে জানান যে আমাকে এখান থেকে নিয়ে না গেলে তোদের সর্বনাশ হবে।কিন্তু মায়ের এই বিশাল মূর্তিকে নিয়ে যাওয়ার অসুবিধার কথা বলেন ডাকাত সর্দার প্রহ্লাদ ও সেই সঙ্গে তিনি আরো বলেন, আজকে রাতে ডাকাতিতে সাফল্য পেলে তবেই মা তোকে নিয়ে যাব। কথিত আছে, মায়ের আর্শীবাদে সাফল্যও পায় ডাকাত দলটি। তাই ডাকাতি করে ফেরার পথে বামা মায়ের ছোট শিলা মূর্তিকে সঙ্গে নিয়ে ফেরেন ডাকাত দলটি।পাণ্ডুক গ্রাম ঢোকার পথে মায়ের নির্দেশ মতো তির ছোড়েন এবং সেই তির এসে পাণ্ডুক গ্রামের মাঝখানে পড়ে। সেখানেই বামা কালীর মূর্তি স্থাপন করেন সাধক ডাকাত প্রহ্লাদ।সেকালে আমাবস্যার গভীর রাতে, ঢাক ঢোল বাজিয়ে, মশাল জ্বালিয়ে ডাকাতদলের সদস্যরা মায়ের ঘট এনে পুজো করতেন। পুজো হয়ে গেলে পর দিন রাতে কাঁধে তুলে মাকে রসফাল্লা পুকুরে বিসর্জন করা হতো ।বিসর্জনের পরেই ডাকাত সর্দার প্রহ্লাদ-সহ সকলে কাঁদতে থাকেন মায়ের টানে। তাই মায়ের নির্দেশে পরবর্তীতে বারমাস পুজোর জন্য আর একটি মূর্তি গড়ে ডাকাত দলটি। সেখানে পুজো দিয়েই ডাকাতিতে বের হতেন তাঁরা।আজও রয়েছে সেই মূর্তি|বর্তমানে দেবীর বিশাল মন্দির তৈরি হয়েছে যা দর্শনীয় স্থান হয়ে উঠেছে। বেশ মজার একটি রীতিও এখানে প্রচলিত আছে| রীতি অনুসারে ডাকাত পরিবারের সদস্যরা বামা কালীর পুজোতে কোনও না কোনও জিনিস চুরি করে আনেন|দেবী মূর্তিতেও আছে বৈচিত্র|এখানে মায়ের বাঁ পা-টি এগিয়ে থাকে। দীপান্বিতা আমাবস্যায় ২২ ফুট উচ্চতার মৃন্ময়ী মূর্তি তৈরি করে পুজো হয়।বাংলার ডাকাত কালী গুলির মধ্যে অন্যতম এই প্রহ্লাদ ডাকাতের বামা কালী|সামনেই মৌনী অমাবস্যা|এই তিথিতেও তন্ত্র মতে বিরাট পুজোর আয়োজন হয় এখানে|ফিরবো পরের পর্বে|চলতে থাকবে ডাকাত কালী নিয়ে আলোচনা|পড়তে থাকুন|আগামী মৌনী অমাবস্যায় গ্রহ দোষ খন্ডনের জন্য যোগাযোগ করুন|ভালো থাকুন|ধারাবাহিক লেখা আপনাদের ভালো লাগলে জানান|ধন্যবাদ|