বাংলার কালী পুজোর আলাদা ইতিহাস আছেসেই ইতিহাস এর সাথে জড়িয়ে আছে বহু অলৌকিক ঘটনা|বাংলার কালী পুজো মানে শুধু দীপাবলী বা উৎসব পালন নয় তার পাশাপাশি মাতৃ সাধকদের কঠিন তন্ত্র সাধনা এবং জ্যোতিষ শাস্ত্র অনুসারে হোম যজ্ঞের মাধ্যমে অশুভ গ্রহের প্রতিকার|আজও তারাপীঠে লক্ষ লক্ষ মানুষ এই তিথিতে তাদের যাবতীয় সমস্যার সমাধান পান এবং নব জীবন লাভ করেন|আমি নিজে এবছর থাকছি তারাপীঠে|বহু মানুষের কাজ নিয়ে যাচ্ছি|মায়ের ইচ্ছায় তাদের গ্রহ দোষ খণ্ডন হবে সফল ভাবে|বাংলার ইতিহাস ষোড়শ শতাব্দীতে নবদ্বীপের পণ্ডিত ও নব্যস্মৃতির স্রষ্টা রঘুনন্দন দীপান্বিতা অমাবস্যায় লক্ষ্মীপুজো করার নির্দেশ দেন। এর পরে ১৮ শতকে প্রকাশিত এক পত্রিকায় প্রথম বার এই তিথিতে কালীপুজোর উল্লেখ পাওয়া যায়।অনেকের মতে, নবদ্বীপের প্রসিদ্ধ তান্ত্রিক কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশই বাংলায় কালীমূর্তি ও কালীপূজার প্রবর্তন করেন।এর আগেও কালীপুজোর প্রচলন ছিল বাংলায়। তবে হাতে গোনা কয়েকটি পুজোই করা হত। কালীর উপাসকরা তামার টাটে কালীর যন্ত্র এঁকে বা খোদাই করে মায়ের পুজো করতেন।সে সময়ে ডাকাতরা এবং তন্ত্র সাধকরাই সাধারণত দেবী কালীর পুজো করতেন|পুজোর সময়ে কৃষ্ণানন্দ একবার মহামায়াকে বললেন, ‘‘মা, তোমার যে রূপের পূজা আমি করব আমাকে সে রূপ দেখিয়ে দাও’’। তখন মা বললেন, ‘‘যে ভঙ্গীতে আমার এই বিগ্রহের পূজা তোমার দ্বারা প্রচলিত হবে, তা আমি মানবদেহের মাধ্যমেই দেখিয়ে দেব। এই রাত শেষে সর্ব প্রথম যে নারীকে যে রূপে যে ভঙ্গীতে দেখবে, ঐরকম মূর্তিতে আমার পূজার প্রচলন করবে। মায়ের নির্দেশমত পরদিন ভোরে কৃষ্ণানন্দ গঙ্গার দিকে কিছু দূর অগ্রসর হওয়ার পর এক শ্যামাঙ্গিনী বালিকাকে দেখতে পান। ওই বালিকা তখন অপরূপ ভঙ্গীতে কুটিরের বারান্দার উপরে এবং বামপদ ভূতলে দিয়ে দাড়িয়ে ছিলেন। তিনি একতাল গোময়যুক্ত ডান হাত এমনভাবে উচু করে ধরেছিলেন যা দেখে বরাভয় মুদ্রার মত মনে হয়েছিল। বাম হাত দিয়ে তিনি কুটিরের দেয়ালে মাটির প্রলেপ দিচ্ছিলেন। তিনি ক্ষুদ্র পরিসরে একটি শাড়ি পড়ে ছিলেন। তাই কৃষ্ণানন্দকে দেখে তিনি লজ্জায় জিভ কেটেছিলেন।তাঁর এরকম ভঙ্গী দেখে কৃষ্ণানন্দের মায়ের প্রত্যাদেশের কথা মনে পড়ে গেল। তারপরই তিনি মায়ের ঐরকম মূর্তি রচনা করে পূজার প্রচলন করলেন।কথিত আছে, কৃষ্ণানন্দ কোনো এক ধনী ব্যক্তির বাড়ি দুর্গাপূজা করতে গিয়েছিলেন, সেখানে দুর্গাপূজার শেষে ওই বাড়ির কর্তা নিজের অহংবোধের বশবর্তী হয়ে কৃষ্ণানন্দকে বলেন যে তিনি প্রতিমার প্রাণপ্রতিষ্ঠা করেননি। কৃষ্ণানন্দ ক্রুদ্ধ হয়ে বলেন যে তিনি যদি প্রাণপ্রতিষ্ঠা না করে থাকেন এক্ষুনি তার প্রমাণ দেবেন, তবে প্রমাণ হওয়ার পরে ওই গৃহের কেউ আর জীবিত থাকবেনা। কর্তা তাতেই রাজি হলেন,কৃষ্ণানন্দ একটি কুশি ছুঁড়ে দেন দেবী প্রতিমার ঊরুতে। সঙ্গে সঙ্গে প্রতিমার ঊরু ফেটে রক্তপাত হয়; এবং ওই গৃহের প্রত্যেকেও মুখে রক্ত উঠে তৎক্ষণাৎ মারা যান|এমন অসংখ্য অলৌকিক ঘটনা রয়েছে এই মহান মাতৃ সাধকের জীবন জুড়ে|এই বাংলায়, কালীপুজো মূলত জনপ্রিয় হয়ে ওঠে নদিয়ার রাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায়ের আমলে। উনিশ শতকে কৃষ্ণচন্দ্রেরই পৌত্র ঈশানচন্দ্র ও বাংলার গুটিকয়েক জমিদারের হাত ধরে কালীপুজোর জনপ্রিয়তা আকাশ ছোঁয়।বর্তমানে তন্ত্র ও জ্যোতিষ জগতের সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ তিথি এই দীপান্বিতা অমাবস্যার রাত|আগামী 24 তারিখ এই বিশেষ তিথিতে হৃদয়েস্বরী মা সর্বমঙ্গলার মন্দিরে ও তারাপীঠ মহা শ্মশানে এক যোগে হবে হোম যজ্ঞ ও তন্ত্র মতে গ্রহের প্রতিকার প্রদান|তারা পীঠে আমি নিজে উপস্থিত থাকবো|আপনারা হয়তো জানেন শাস্ত্র মতে গ্রহ দোষ খন্ডনের অন্যতম শ্রেষ্ট তিথি দীপান্বিতা অমাবস্যা আবার একবছর পরে আসবে এই সুযোগ তাই আপনারা চাইলে এই মহা যজ্ঞে এবং গ্রহ দোষ খণ্ডন অনুষ্ঠানে আপনাদের গ্রহ দোষ খণ্ডন করাতে পারেন|দীপান্বিতা অমাবস্যা উপলক্ষে ধারাবাহিক ভাবে চলতে থাকবে কালী তত্ত্ব নিয়ে আলোচনা|ফিরে আসবো আগামী পর্বে কালী কথা নিয়ে|পড়তে থাকুন|ভালো থাকুন|ধন্যবাদ|