দূর্গা পুজা ও নীলকণ্ঠ পাখি

223

দেবী দুর্গার বাহন, তার দশ হাত, দেবীর অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে আগের পর্বগুলিতে বলেছি, দূর্গাপুজো উপলক্ষে চলবে দেবী দূর্গা বিষয়ক আলোচনা, আজ আলোচনা করবো দেবীর বিসর্জনের সাথে যুক্ত একটি অদ্ভুত রীতি ও তার কেন্দ্রবিন্দু একটি পৌরাণিক পাখি নিয়ে|বাংলার বনেদি বাড়ির পুজোয় এক এক রকম আচার রয়েছে|সন্ধি পুজোয় কামন দাগা, আখ বা চাল কুমড়ো বলি দেয়া, কত রকম প্রথা রয়েছে আর সেইসবের সঙ্গেই জুড়ে হাজির হয় নীলকণ্ঠ পাখি। দশমীর দিন এই পাখি না থাকলে বাংলার অনেক বনেদি মনে করা হতো আসল উপাচারই যে করা হলো না তাই বহু কষ্টে জোগাড় হতো নীলকণ্ঠ পাখি|বর্তমানে অবশ্য এই পাখির দর্শন অতি দুর্লভ আর কিছু আইনি জটিলতা ও রয়েছে তাই সাধ থাকলেও অনেকেরই সাধ্য নেই নীলকণ্ঠ পাখি জোটানোর|বর্তমানে এই প্রথা লুপ্তপ্রায়|দূর্গাপুজোর বিভিন্ন রীতি নীতির মধ্যে একটি অদ্ভুত নিয়ম হলো বিসর্জনে এই নীলকণ্ঠ পাখি ওড়ানো যা বহুকাল থেকে পালন করা হচ্ছে|কিন্তু জানেন কি নীলকণ্ঠ পাখির আসল পরিচয় কি এবং কেনো তা বিসর্জনে ওড়ানোর রীতি|উত্তর লুকিয়ে আছে পুরানে এবং রামায়নে|সেই রামায়ণের কাহিনি থেকেই নীলকণ্ঠ পাখি দূর্গা পুজোর অঙ্গ হিসাবে নিজের জায়গা তৈরি করে নিয়েছে। কথিত আছে রাবণবধের ঠিক আগে এই পাখিটির দেখা পান রামচন্দ্র। তার ঠিক আগেই যে তিনি সম্পন্ন করেছিলেন অকাল বোধন|আবার অনেকের মতে, রাবণবধের আগে এবং সেতুবন্ধনের সময় হাজির হয়েছিল নীলকণ্ঠ পাখি। পথ দেখিয়ে রাম-বাহিনীকে লঙ্কায় নিয়ে গিয়েছিল সে। তখন থেকেই প্রচারিত হয়, এই পাখির দর্শন অত্যন্ত শুভ এবং এইসব পৌরাণিক কাহিনি থেকেই এই পাখির মাহাত্ম্য ছড়িয়ে পড়ে সব জায়গায়।ইংরেজিতে নীলকণ্ঠ পাখির নাম্বার ‘ইন্ডিয়ান রোলার’ তবে বাংলা নামটি এই পাখির চেহারার বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে মানানসই।পুরান অনুসারে সমুদ্রমন্থনের সময় হলাহল উঠে এলে দেবতা ও অসুরদের রক্ষা করতে চলে আসেন দেবাদিদেব মহাদেব। সেই তীব্র বিষ নিজেই পান করেন আর বিষের জ্বালায় তাঁর কণ্ঠ নীল হয়ে যায়। সেখান থেকেই তাঁর আরেক নাম ‘নীলকণ্ঠ’। এই পাখিটির নীল রঙের শরীর ও কণ্ঠ দেখলে অনেকটা সেই কথাই মনে পরে । তাই নীলকণ্ঠ নাম সার্থক|আমাদের শাস্ত্র মতে এই পাখি অত্যন্ত পবিত্র। এমনকী তার দেখা পাওয়াটা সৌভাগ্যের বিষয়। বাংলায় বিসর্জনের রীতিতে এই পাখির ব্যবহার প্রচলিত ছিল অনেক আগে থেকেই|নীলকণ্ঠ পাখির অবাধ যাতায়াত রয়েছে দেবাদিদেবের কৈলাশ পর্বতেও এবং বিসর্জনের সময় এই পাখি আগে কৈলাশে পৌঁছে মায়ের মর্ত থেকে আগমনের বার্তা দেয়|তাই বিসর্জনের সময়ে নীলকণ্ঠ পাখি মুক্ত করে দেয়া হয়|শুধু বাংলায় নয়, উত্তরপ্রদেশ, উত্তরাখণ্ড ও আরো বেশ কিছু রাজ্যে নীলকণ্ঠ পাখিকে রীতিমতো দেবতার আসনে বসানোর রীতি রয়েছে। অনেকে এই পাখিকে ভগবান শিবের এক রূপ বলে মনে করেন। এই পাখি দেখার অর্থ স্বয়ং শিব দর্শন। এই পাখি দেখে মনোবাসনা জানিয়ে আশিস চাওয়ার রীতি রয়েছে বহু সমাজে|দূর্গা পুজো উপলক্ষে আরো অনেক এমন বিশেষ পর্ব আপনাদের জন্য নিয়ে আসবো|পড়তে থাকুন|ভালো থাকুন|ধন্যবাদ|