আর কিছুদিন পরেই বাংলা তথা সারাদেশে পালিত হবে দূর্গাপুজো|যে দূর্গা পুজোকে কেন্দ্র করে আমাদের এতো আবেগ এতো তোড়জোড় আজ সেই দূর্গা পুজোর সূচনা কিভাবে হয়েছিলো তা নিয়ে লিখবো|পুরান অনুসারে যখন মহিষাসুরের অত্যাচারে স্বর্গ থেকে বিতাড়িত হয়ে দেবতারা শ্রীবিষ্ণু ও মহাদেবের কাছে সাহায্যের জন্য উপস্থিত হন। প্রবল পরাক্রমশালী মহিষাসুরকে বধ করার জন্য সকল দেবতার তেজ থেকে এক অপূর্ব নারীর সৃষ্টি হয়।এই নারীই দেবী দূর্গা|সকল দেবতারা তাঁকে নিজেদের অস্ত্র ও অলংকার দিয়ে সজ্জিত করেন। এই নারীই মহিষাসুরকে যুদ্ধে আবাহন করেন। প্রচণ্ড যুদ্ধের পর ত্রিশূল দিয়ে গেঁথে মহিষাসুরকে বধ করেন দুর্গা। শুধু মহিষাসুর নয়, মধু কৈটভ, শুম্ভ-নিশুম্ভকেও পরাজিত করেন দেবী দূর্গা|আমরা সবাই কম বেশি এই ঘটনা জানি|কিন্ত মর্তে দেবীর পুজোর সূচনা এবং বাংলায় দেবীর পুজো কি ভাবে প্রধান উৎসব হয়ে উঠলো তা হয়তো অনেকের জানা নেই|দেবী দুর্গার মহিমা বর্ণিত হয়েছে মার্কন্ডেয় পুরাণ এবং শ্রীশ্রী চন্ডীতে।শ্রীশ্রী চন্ডীতে বলা হয়েছে তিনি জগত্পালিকা আদ্যাশক্তি ও সনাতনী।মহাভারত, বিষ্ণু পুরাণ, দেবী পুরাণ, ভাগবত পুরানেও দেবীর গুনকীর্তন আছে, মহাভারতের বিরাটপর্বে ও ভীষ্মপর্বেও দুর্গাস্তব আছে। ভীষ্মপর্বে ত্রয়োবিংশ অধ্যায়ে অর্জুন দেবী দুর্গার স্তবপাঠ করেন। বিষ্ণু পুরাণের পঞ্চম অংশে দেবকীর গর্ভে দুর্গার জন্মানোর বৃত্তান্ত আছে।মহাকাব্য রামায়ণ অনুসারে শারদীয়া দুর্গাপুজো বা অকাল বোধনের সূচনা করেছিলেন শ্রীরামচন্দ্র। তিনি রাবণের হাত থেকে সীতাকে উদ্ধার করার জন্য লংকা গমন করার আগে অকাল বোধন করে শরত্কালে দুর্গার পুজো করেন। রামচন্দ্রের আরাধনায় সন্তুষ্ট হয়ে তাকে বর দেন দেবী। শ্রীশ্রী চন্ডীতে বর্ণিত আছে প্রাচীনকালে রাজা সুরথ ও সমাধি বৈশ্য সর্বস্ব হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে বনে যান|সেখানে তারা এক মুনির দর্শন পান|মেধা মুনি নামে ওই ঋষি সব শোনার পর তাঁদের বলেন যে “বিষ্ণুর যে মহামায়া শক্তি তারই প্রভাবে এই রকম হয়। সেই মহামায়া প্রসন্না হলে মানবের মুক্তি লাভ ঘটে ” মুনির উপদেশ পেয়ে সুরথ ও সমাধি মাটির প্রতিমা গড়ে ৩ বছর কঠোর তপস্যা করেন তারপর পর দেবী তুষ্ট হয়ে তাদের দেখা দেন এবং মনোবাঞ্ছনা পূর্ণ করেন। পরবর্তীতে বসন্তকালকে দুর্গাপূজার উপযুক্ত সময় নির্ধারণ করে তারা বাসন্তী পূজার প্রচলন করেন।বাংলায় কবে ও কারা প্রথম দূর্গাপুজোর প্রচলন করেন তা নিয়ে অনেক মতভেদ রয়েছে। তবে কিছু ঐতিহাসিক তথ্য অনুসারে ১৫০০ সালে বাংলায় প্রথম দূর্গাপুজো হয়। দিনাজপুর ও মালদহের জমিদাররা প্রথম দূর্গাপুজোর শুরুর পরিকল্পনা নেন। কারও মতে, তাহেরপুরের রাজা কংসনারায়ণ প্রথম সাড়ম্বের দূর্গাপুজো শুরু করেন |আবার অনেকে মনে করেন নদিয়ার রাজা কৃষ্ণ চন্দ্রের উত্তরসূরি ভবানন্দ ১৯০৬ সালে প্রথম দুর্গা পুজা করেন ।বারোয়ারি পুজো সম্পর্কে বলা হয়ে একবার হুগলীর গুপ্তি পাড়ায় এক ধনি ব্যাক্তির বাড়ির দুর্গা পুজায় অংশ নিতে না পেরে বারো জন মানুষ রাগ করে সেখান থেকে বেড়িয়ে আসেন এবং নিজেরাই চাঁদা তুলে শুরু করেন দুর্গা পুজা । এই বারো জন বন্ধুর মাধ্যমে শুরু হয় বাংলার বারোয়ারী দুর্গা পুজা|সেই পুজোয় ক্রমশ শাখা প্রশাখা বিস্তার করে আজকের থিম পুজোর রুম নিয়েছে|পরের পর্বে দেবী দূর্গা সংক্রান্ত আরো অনেক পৌরাণিক তথ্য ও আধ্যাত্মিক ব্যাখ্যা নিয়ে ফিরে আসবো|পড়তে থাকুন|ভালো থাকুন|ধন্যবাদ|