দেবী দুর্গার অস্ত্রশস্ত্র

183

আগের পর্বে দেবী দুর্গার দশ হাত নিয়ে লিখেছিলাম,আজ দেবী দুর্গার দশ হাতে থাকা দশটি অস্ত্র নিয়ে বলবো, মার্কণ্ডেয় পুরানে দেবীর দশ হাতের অস্ত্র সম্পর্কে বর্ণনা আছে,শুরু হয় শঙ্খ দিয়ে| বরুণদেব দেবীকে শঙ্খ প্রদান করেন। এটি ঠিক অস্ত্র নয়।শঙ্খ জাগরণের প্রতীক। পুরাণ মতে, শঙ্খ থেকে যে শব্দের উৎপত্তি হয় তার থেকেই জীবজগতের সমস্ত প্রাণের সৃষ্টি। শঙ্খ বা শাঁখ দেবী দুর্গার বাম হাতে থাকে।সনাতন ধর্মে শঙ্খ খুব পবিত্র একটি উপকরন কারন পৃথিবী সৃষ্টির সময় জলমগ্ন ছিল আর তখন শ্রী বিষ্ণু একটি শঙ্খের রূপে অবস্থান করছিলেন সমুদ্রের গভীর তলদেশে।শঙ্খ শুভ শক্তিকে আহ্বান জানায়, এই শঙ্খের ধ্বনির মধ্যে দিয়েই মহিষাসুরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন দেবী দূর্গা| চক্র দেবীর অন্যতম অস্ত্র যা নিয়ে একটি ভিন্ন পর্বে আগেই লিখেছি দেবতাদের অস্ত্র নিয়ে লেখার সময়ে|স্বয়ং শ্রী বিষ্ণু চক্রটি দেবী দুর্গাকে প্রদান করেন।সুদর্শন চক্র দেবীর ডান হাতে থাকে। ‘সু’ অর্থাৎ সুন্দর আর ‘দর্শন’ অর্থাৎ দৃশ্যমান। সুদর্শন চক্র হলো ব্রহ্মাণ্ডের প্রতীক স্বরূপ। যে চক্রে ব্রহ্মাণ্ড ঘুরছে। ।জগতে শান্তি প্রতিষ্ঠা এবং অশুভ শক্তির বিনাশের জন্য বিশ্বকর্মা সুদর্শন চক্র নির্মাণ করেছিলেন শ্রী বিষ্ণুর জন্য| মহিষাসুর নিধন যজ্ঞে দেবী মহামায়াকে গদা প্রদান করেন ধর্মরাজ যম|গদা বা কালদণ্ড হলো অনুশাসন ও আনুগত্যের প্রতীক। কাল বা মহাকালের প্রতি আমরা অনুগত। দেবী দুর্গার হাতে গদা বা কালদণ্ডকে সম্মোহনকারী শক্তি হিসেবে দেখা হয়। মহিষাসুরকে বধ করার নিমিত্তে বা সম্মোহিত করার জন্য গদা বা কালদণ্ড গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল| পদ্ম, অক্ষমালা ও কমণ্ডলু একসাথে দেবীর এক হাতে শোভা পায়, দেবী দুর্গাকে শঙ্খ, চক্র, গদা পদ্ম ধারীও বলা হয়। পদ্ম ঠিক অস্ত্র নয় পদ্ম আলোর প্রতীক।প্রান শক্তির প্রতীক দেবী দুর্গাকে পদ্ম, অক্ষমালা, কমণ্ডলু প্রদান করেন প্রজাপতি ব্রহ্মা। পদ্ম ফুলের জন্ম পুকুরে অথবা জলাধারের গভীরে হলেও অন্ধকার থেকে আলোর পথে উত্তরণের প্রতীক হলো পদ্ম।পদ্ম ছাড়া দেবী দুর্গার একই হাতে থাকে অক্ষমালা ও কমণ্ডলু। অক্ষমালা ও কমণ্ডলু পবিত্রতার প্রতীক।যুদ্ধে শুধু শক্তি নয় এই প্রান শক্তি ও পবিত্রতা ব্যাবহার হয় হাতিয়ার হিসেবে| দেবী দুর্গার পঞ্চম অস্ত্র হচ্ছে খড়গ|খড়গ হচ্ছে ষড়রিপু দমনের প্রতীক। খড়গ হলো বলি প্রদানের অস্ত্র যারা প্রকৃত অর্থ কাম, ক্রোধ, লোভ, মোহ, মদ ও মাৎসর্যকে পরাজিত করা সংক্ষেপে যাকে বলে ষড়রিপু।দেবীর হাতে যে খড়গ উদ্যত হয়ে থাকে তা পরম মোক্ষেরও প্রতীক। এই খড়গ সর্বদা উদ্যত ও অভয় প্রদানকারী। মোক্ষ হল জাগতিক বন্ধন থেকে মুক্তি|শ্রী শ্রী চণ্ডীতে দেবী চামুণ্ডার কথা আছে, যিনি অসুর নিধন কালে তাঁর হাতে খড়গ দ্বারা অশুভ শক্তি নাশ করেন। আগামী পর্বে বাকি অস্ত্র গুলি নিয়ে আবার ফিরে আসবো জানবো তার শাস্ত্রীয় ব্যাখ্যা|পড়তে থাকুন|ভালো থাকুন|ধন্যবাদ|