কেন শ্রী কৃষ্ণ, কালী রূপ ধারণ করেছিলেন ?

1611

দ্বাপর যুগে শ্রীমতী রাধারাণী যখন শ্রীকৃষ্ণের প্রেম লীলায় মত্ত ছিল, তখন নন্দকুলের সকল গোপীগণ হঠাৎ করে শ্রীকৃষ্ণের বাঁশির ধ্বনি শুনতে পেয়ে হতচকিত হয়ে উঠেছিল। রাধারাণী তখন আয়ান ঘোষের আলয়ে নিত্য দিনের মতো রন্ধনরতা অবস্থায় ছিল। কৃষ্ণের এই মুরলী বংশীর ধ্বনি শুনে রাধার কানে পৌঁছানো মাত্রই রাধা তখন উতলা হয়ে পড়ে। অতঃপর রাধা রন্ধন সালা ত্যাগ করে তার সমাগত সহচরী সখী বৃন্দের সাথে দৌড়ে সেই স্থানে কানন অভিমুখে ছুটে গেলো। এদিকে আয়ানের বোন কুটিলা রাধার পালিয়ে যাওয়া দেখতে পেয়েও না দেখার ভান করে থাকে। এরপর আয়ান বাড়ি ফিরলে মা জটিলা বোন কুটিলা আয়ানকে রাধার ওপরে রাগিয়ে তোলার চেষ্টা করল। কুটিলা বলে, দাদা তোমার রাত বেড়ানো কুলটা স্ত্রী কে নিয়ে আমরা আর কোনোদিন সুখে শান্তিতে ঘর সংসার করতে পারবো না। তখন আয়ান ঘোষ বলল রাত বেড়ানো সে আবার কি রে কুটিলা? তোর কথার কোনো কিছুই তো আমি বুঝতে পারলাম না! রাধে আমায় বলেছে আজ সে আমার মঙ্গলের জন্য শ্যামা মায়ের শ্রী চরণে পুজা করবে। তখন কুটিলা বলল, দাদা তোমার রাধে আজ আসলে শ্যামা মায়ের পূজা করবে নাকি শ্যামের পূজা করবে তা আমারা কি কিছু জানি? তাই যদি হতো তাহলে শ্যামা মায়ের পূজা বুঝি ঘরে বসে হয় না? এদিকে হাঁটে বাটে ঘাটে মাঠে বদনাম শুনতে আমাদের কানে যে আর এগুলি মোটেও সহ্য হয় না। তোমার মতো আমরা তো আর চোখ থাকতে অন্ধ বাকেউ কানাও নই গো দাদা! এখন আর তোমার কাছে আমরা এ সমস্ত কথা বলেও কোনো কাজ হবেনা গো দাদা! একত্রে থাকতে গেলে সকলের ভালো মন্দ দেখতে হয়। আসলে কি হয়েছে তোরা আমাকে সরাসরি বলনা রে। আমি যে আর মোটেও রাধের বিরহের কথা একদম ভাবতে পারছি না। তখন তার মা জটিলা বলল, আমি বাপু কখনো কিছু বললে আমার কথা তুমি কানে তোলো না। তাই বেশতো এখন তোমার স্ত্রী নিয়েই একাকি থাকো। কুটিলা বলে, অতএব তোমার স্ত্রী কে তুমি সামলাও আমাদের কখনো ডেকনা দাদা। আগেও কতবার দেখেছি তোমার রাধে সেখানে রাত বিরেতে যেত, এখন আবার দেখি সে কিন্তু দিন দুপুরেও ঘরে থাকেনা। তখন আয়ান বলল, কুটিলা তুই কি আজ আসলেই তাকে হাতে নাতে ধরিয়ে দিতে পারবি বল? তাই যদি পারিস বোন তাহলে এখনই তুই সেখানে চল আমার সাথে। আমি সেখানে যদি রাধাকে দেখতে পাই তবেই এখন আমার চক্ষু কর্ণের বিবাদ মিটবে। তখন আয়ান ঘোষ প্রকাণ্ড একটি যষ্টি হাতে নিয়ে কুটিলাকে বলল আয় আমার সাথে। দেখি সে প্রতিদিন কোথায় যায় আমি আজ আমার নিজের চোখেই দেখব তাকে। যদি শ্যামা পূজা সত্যি সত্যিই মিছে হয় তাহলে কিন্তু আজ তাকে আমি লাঠির এক ঘাতেই মেরে একেবারে যমপুরীতে পাঠিয়ে দেবো।রাগান্বিত আয়ান লাঠি হাতে বড় বড় পা ফেলে রাধার উদ্দেশ্য তেড়ে যাত্রা করে, তার পাছে পাছে যায় জটিলা ও কুটিলা। তখন কালিন্দী কূলে কুঞ্জে কুঞ্জে একত্রিত হয়ে সকল সহচরী সখী বৃন্দ মনের আনন্দে ফুল তুলছিল। আর রাই কিশোরী তার কানাই কে তাঁর মনের মতো করে সাজাচ্ছিল। তখন হঠাৎ করে জটিলা ও কুটিলাকে সাথে নিয়ে আয়ান ঘোষ সেই কুঞ্জে কুঞ্জে, কন্দরে কন্দরে কানন নিকরে কেবলমাত্র শ্রীমতী রাধারাণীকে অন্বেষণ করতে করতে একেবারে সেই বিলাশ কুঞ্জের সমীপে এসে উপস্থিত হলো। দূর হতে আয়ান ঘোষের প্রমত্ত পদশব্দ ও রোষ গর্জন শুনতে পেয়ে সকল গোপীগণ হতচকিত হয়ে শ্রী রাধারাণীকে বলল। একেবারে মহা সর্বনাশ সমুপস্থিত হয়েছে দুলালি, ঐ যে দেখতে পাচ্ছি আয়ান এদিকে আসছে। তখন হঠাৎ এমন মহাবিপদের সংবাদ শুনে রাধারাণী ভিত চকিত হয়ে উঠল। অতঃপর রাধা কাতর নেত্রে শ্রীকৃষ্ণের পানে তাকাতেই তাঁর শ্যামাঙ্গ হতে সহসা বরাভয় প্রকটিত হতে লাগলো। আর চক্ষুর পলকে তার নিজের দ্বিভুজ দেহকানি একেবারে চতুর্ভুজ রূপ হয়েগেল। তখন তার এলু লায়িত কুন্তল যেন একেবারে দল দল করে দুলতে আরম্ভ করে দিতে লাগলো। তাঁর গলায় থাকা বিলম্বিত কমল মালা খানি নৃমুণ্ড মালারূপে, বাঁশি হল অসি এবং কপাল ফলকে তিলক রাগ শিশু শশিরূপে তাঁর দেহে যেন শোভাপেতে লাগলো। সেই মুহুর্তে কিন্তু ভয়ানক ক্রুদ্ধ অবস্থায় ছিল আয়ান ঘোষ। অবশেষে সে কুঞ্জদ্বারে এসে দেখতে পেল একি ! এ যে আমার সেই সমগ্র মানব জীবনের সাধনার ধন। যাকে আমি আমার সারাটা জীবন এই দুই নয়নে একবার দেখার জন্য হন্যে হয়ে খুঁজেছি।এই আমার পরম সেই আরাধ্য কাঙ্খিত ইষ্ট মুর্ত্তি ! তখন একেবারে গদগদ স্বরে আয়ান ঘোষ তার স্ত্রী কে ডাকতে লাগলো রাধে রাধে বলে ! তারপর আয়ান ঘোষ চিৎকার করে বলতে লাগলো ধন্য তুমি গো রাধে ! তোমার করুণার প্রসাদের কারনেই আজ আমি আমার সারা জীবনের সেই আকাঙ্খিত সেই ইষ্ট মূর্তির দর্শন পেলাম। সত্যিই ধন্য তুমি রাধে, তোমার মতো সহধর্মিণী পাওয়ার ফলেই আজ এই সাধের মানব জনম সার্থক হলো।আজ থেকে আমি কখনো তোমাকে আর কোনপ্রকার সন্দেহ করবো না। আামার মা কালী মহেষমোহিনী, মহিষমর্দ্দিনী, মানস মালিন্যহরা। এই ভাবে আয়ান ঘোষ মা কাত্যায়নীর স্তব করা আরম্ভ করলো।জয় আদ্যা সতী, দেবী ভাগবতী, অগতির গতি মা তারা! নমো নারায়ণী, ব্রহ্ম সনাতনী, চন্দ্রাননি, হর দারা ! শ্যামা সুরেশ্বরী, ভীমা ভয়ঙ্করী, দিগম্বরী, ঘোরবেশী ! শশ্মান বাসিনী, সমন ত্রাসিনী, সুহাসিনী, এলোকেশী! উমেশ অঙ্গনা, অঞ্জন গঞ্জনা, নিরঞ্জনা নিরুপমা ! তবনামে পূর্ণ আশ, মুক্ত মোহ পাশ, দিগ বাস মাগো মনোরমা ! নমো নৃত্য মা কালি, নিশানাথ ভালী, মুন্ডু মালী, মহোদরী ! মৃত্যুঞ্জয় জায়া, দে মা তব পদ ছায়া, মহামায়া, মহেশ্বরী ! বরাভয় করা, অসি মুন্ড ধরা। তাপহরা ত্রিনয়না! নমো নিস্তারিনী, শিব সীমন্তিনী, দেহি দীনে কৃপাকণা!

আপনাদের হৃদয়েস্বরী সর্ব মঙ্গলা মায়ের মন্দিরেআসন্ন কৌশিকী অমাবস্যা শাস্ত্র মতে পুজো ও হোম যজ্ঞ এবং গ্রহ দোষ খন্ডনের সব ব্যবস্থা থাকবে|সামনেই কৌশিকী অমাবস্যা তারপর মহালয়া ও দীপান্বিতা অমাবস্যা সব মিলিয়ে তন্ত্র ও কালী সাধনার শ্রেষ্ট সময় যা গ্রহ দোষ খণ্ডন ও তন্ত্র মতে সমস্যা সমাধানের জন্য আদর্শ |আগামী পর্ব গুলিতে কালী কথা নিয়ে আলোচনা হবে|পড়তে থাকুন|ভালো থাকুন|নমস্কার|