জয় জগন্নাথ – নানাবেশে জগন্নাথ দেব

585

নানা সময়ে নানা বেশে সাজেন জগতের নাথ আজ সেই বেশগুলির কয়েকটি নিয়ে আলোচনা করবো|প্রাচীন গ্রন্থ মাদলা পাঞ্জিতে উল্লেখ আছে ১৪৬০ খ্রিস্টাব্দে ওড়িশার গজপতি রাজা কপিলেন্দ্র দেব দাক্ষিণাত্যের এক রাজার বিরুদ্ধে ভীষণ যুদ্ধে অবতীর্ণ হন। দীর্ঘ সংগ্রামের পর কপিলেন্দ্র যুদ্ধে জয়লাভ করেন। লুঠে আনেন ষোলটি হাতির পিঠ বোঝাই করে সহস্র মণ সোনা। সমস্ত সোনা রাজা কপিলেন্দ্র জগন্নাথদেবের মন্দিরের ভাণ্ডারে পাঠিয়ে দিলেন এবং জগন্নাথদেবকে তিনি ওড়িশার প্রকৃত রাজা বলে স্বীকার করলেন ও নিজেকে তাঁর অনুগত সেবক বলে ঘোষণা করলেন|অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে এই ক্ষমতা হস্তান্তর সর্বসাধারণের সম্মুখে উদযাপনের জন্য তিনি এই সময় জগন্নাথের ‘রাজবেশ’-এর প্রবর্তন করলেন। সাধারণের কাছে এই ‘বেশ’ আর একটি নাম পেল, তা হল, ‘বড়া তাধাও বেশ’।জগন্নাথদেবকে পুরীতে সাধারণ দিনগুলিতে যে বেশে দেখা যায়, সেই বেশ পরিচিত সাদা বেশ নামে। এরপর রাতে যে বেশে জগন্নাথ, বলরাম, শুভদ্রাকে রাখা হয় তার নাম বড়সিংহের বেশ। চন্দনলাগি বেশ শুরু হয় বৈশাখ জৈষ্ঠের সময়, এই সময় ভগবানকে চন্দনের প্রলেপে রাখা হয় এবং ৪২ দিন ধরে চলে এই উৎসব।জগন্নাথদেবের আরকেটি বিখ্যাত বেশ হলো হাতি বেশ|হাতিবেশ রথযাত্রার আগে স্নান যাত্রার সময় দেখা যায় । এই সময়ে গণপতির বেশে জগন্নাথকে সাজানো হয় বলে নাম ‘হাতি বেশ’। গণেশের বেশে স্নানযাত্রার পর উঠে আসেন জগন্নাথ।হাতি বেশের নেপথ্য একটি ঐতিহাসিক ঘটনা আছে|বহু শতক আগে পুরীর রাজার রাজদরবারে এসেছিলেন পণ্ডিত গণেশ ভট্ট। রাজা তাঁকে জহগন্নাথ দেবের স্নানযাত্রা দেখবার জন্য আহ্বান জানান। তবে তা দেখতে যাওয়ার ইচ্ছা ছিলনা গনেশ ভট্টর। কারণ তাঁর আরাধনার দেবতা গণপতি স্বয়ং। কিন্তু স্নানযাত্রায় গিয়ে গণেশ ভট্ট আবিষ্কার করেন, যে যে বিষ্ণুর অবতার জগন্নাথের স্নান তিনি দেখছেন, তাঁর রূপ যেন হুবহু গণেশ! সমস্ত ঈশ্বর তাঁর কাছে একই মনে হতে লাগল। আর সেই ঘটনার পর থেকেই স্নান যাত্রায় জগন্নাথের বেশ হয় হাতিবেশ।পুরীর জগন্নাদেবের থের বিভিন্ন বেশের মধ্যে অন্যতম হল কালিয়াদলন বেশ। ভাদ্র একাদশীর দিন পুরীর জগন্নাথকে সাজানো হয় এই বিশেষ বেশে। যেভাবে শ্রীকৃষ্ণ দুর্দমনীয় রাক্ষস কালিয়াকে হত্যা করেছিলেন, সেই বেশেই এদিন সাজানো হয় জগন্নাথকে।আশ্বিনে যে নয়নাভিরাম বেশকর্ম শ্রীমন্দিরে অনুষ্ঠিত হয়, তার নাম ‘রাধা-দামোদর বেশ’।আশ্বিনের শুক্ল পক্ষের একাদশী তিথিতে শুরু হয়ে এই ‘রাধা-দামোদর বেশ’ কার্তিকের শুক্ল দশমী অবধি নিত্যই অনুষ্ঠিত হয়।জগন্নাথদেবের আরো একটি বেশ হলো পদ্মবেশ|মাঘ ও বসন্তের শনিবার ও বুধবার জগন্নাথ ধারণ করেন পদ্মবেশ।আগামী দিনেও ফিরে আসবো প্রভু জগন্নাথদেবের মহিমা বর্ণনা করতে| আলোচনা চলবে উল্টো রথ অবধি|পড়তে থাকুন|ভালো থাকুন|ধন্যবাদ|