আমাদের সনাতন ধর্মে অসংখ্য দেবদেবী থাকলেও ভগবান একজনই, তিনি স্বয়ং কৃষ্ণ|শৈশবে কালিয়া নাগ,পুতনা সহ একাধিক অসুর বধ এবং পরবর্তীতে মহাভারতের যুদ্ধে তার ভূমিকা আমরা কম বেশি সবাই জানি|কিন্তু মহাভারতের যুদ্ধের পর কৃষ্ণ কোথায় গেলেন?কিভাবে মৃত্যু বরণ করলেন তিনি? এমনকি মৃত্যুর পরেও তার শরীরের একটি অংশ নাকি জীবিত আছে! আজও তা অক্ষয় রয়েছে! কি তা?আজকের পুরান কথায় জানাবো শ্রীকৃষ্ণের মৃত্যু সংক্রান্ত সব রহস্যময় তথ্য|যাদব বংশ শেষ হয়ে যাওয়ার শোকে একটা গাছের তলায় বসেছিলেন শ্রীকৃষ্ণ। সেই সময় তাঁর রক্তবর্ণ চরণ দেখে হরিণ মনে করে তীর ছোঁড়েন সেই মত্স্যজীবী। এই তীর তৈরিহয়েছিল একটি বিশেষ লোহার টুকরো থেকে। পায়ে এই তীর গেঁথে মৃত্যু হয় শ্রীকৃষ্ণের|এবার এর আগের ঘটনা জানলে বোঝা যাবে কিভাবে শেষ হলো যাদব বংশ এবং এই বিশেষ তীর বা এলো কোথাথেকে|মহাভারতের যুদ্ধের পর নিজের রাজ্য দ্বারকায় ফিরে যান কৃষ্ণ। স্ত্রী রুক্মীনি ও পুত্র সাম্বকে নিয়ে ৩৫ বছর সুখে বাস করেন।একদিন সপ্তঋষি কৃষ্ণ ও বলরামের সঙ্গে দেখা করতে দ্বারকা আসেন। তাঁদের নিয়ে একটু মজা করতে চান কৃষ্ণ-পুত্র সাম্ব ও তাঁর বন্ধুরা। মহিলার মত সাজপোশাক করে এবং পেটে লোহার টুকরো বেঁধে গর্ভবতী মহিলা সেজে সপ্তঋষির সামনে আসেন সাম্ব। ঋষিরা পুরো বিষয়টা ধরে ফেলেন|সপ্তঋষি অভিশাপ দেন যে সাম্বর শরীরে যা বাঁধা আছে, তাই এই যাদব বংশের ধ্বংসের কারণ হবে। ঠিক পরের দিন পেটে প্রচণ্ড ব্যাথায় শয্যাশায়ী হয়ে পড়েন সাম্ব। কৃষ্ণ ও বলরাম তাঁকে দেখতে এলে সপ্তঋষির অভিশাপের কথা শোনের। সাম্বর পাশে রাখে লোহার টুকরোটাও দেখেন তাঁরা। ওই লোহার টুকরো গুঁড়ো করে প্রভাস নদীতে ভাসিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেন। অনেকটা গুঁড়ো হলেও একট টুকরো লোহা থেকে যায়। তা নদীর জলে ভাসিয়ে দিলে সেই লোহার টুকরো একটা মাছ গিলে ফেলে। ওই মাছ আবার ধরা পড়ে স্থানীয় এক মত্স্যজীবীর জালে। মাছ কেটে পেটের মধ্যে লোহার টুকরো দেখে তা দিয়ে তীর বানান ওই মত্স্যজীবী|এবং ঘটনা চক্রে ওই তীরের আঘাতেই প্রান যায় কৃষ্ণর|সত্যি হয় সপ্তর্ষির অভিশাপ|এবার আসি কৃষ্ণের মৃত্যুর পরের রহস্যে|কৃষ্ণের অন্তেষ্টি ক্রিয়া সাঙ্গ করেন পাণ্ডবরা। কিন্তু চিতা নিভে গেলেও দেখা যায় তাঁর হৃদপিণ্ডটি অক্ষত আছে । তখন সেটিকে নদীর জলে ভাসিয়ে দ্বারকার সব মহিলা ও শিশুদের নিয়ে হস্তিনাপুর ফিরে যান পাণ্ডবরা। সমুদ্রের জল এসে ভাসিয়ে নিয়ে দ্বারকাকে। সমুদ্রের নিচে ডুবে যায় দ্বারকা।কিন্তু কৃষ্ণের হৃদপিণ্ড সাগরের জলে জীবিত অবস্থায় নিমজ্জিত হয়|এরপর কেটে যায় বহু কাল, একদিন নদীর জলে স্নান করতে করতে কৃষ্ণের দিব্য হৃদয় উদ্ধার করেন পুরীর মহারাজ ইন্দ্রদ্যুম্ন। সেই হৃদয় হাতে নিতেই স্বয়ং বিষ্ণু তাঁর কানে ফিসফিস করে বসেন যে এই হৃদয় তাঁরই। এই পৃথিবীতে এটি বরাবর থাকবে। দ্রুত জগন্নাথ মন্দিরে এসে জগন্নাথ দেবের মুর্তির মধ্যেই তা স্থাপন করেন ইন্দ্রদ্যুম্ন।বিষ্ণুর আদেশে এমন ভাবে তা করা হয়, যাতে তা কেউ দেখতে না পায়|মনে করা হয় আজও সেই দিব্য বস্তু, স্বজত্নে এবং গোপনে সংরক্ষিত আছে প্রভু জগন্নাথের মূর্তির মধ্যে|এই তথ্য বা তত্ত্ব বহু কাল থেকেই কিংবদন্তী রূপে প্রচলিত রয়েছে ভারতের আধ্যাত্মিক ক্ষেত্রে| যদিও কিঞ্চিৎ মতপার্থক্য বা ভিন্ন মত ও রয়েছে|শাস্ত্রীয় ভাবে প্রমাণিত নয়, তবুও অনেকের কাছেই এই তত্ত্ব গ্রহন যোগ্য এবং সমর্থনযোগ্য|তবে ব্যাক্তিগত ভাবে আমি মনে করি, ভগবানের লীলা বোঝা তো ওতো সহজ নয়, আমরা শুধু অনুমান করতে পারি|আর কিছু রহস্য আজীবন রহস্যই থাকবে|কিছু প্রশ্নের উত্তর না খোঁজাই ভালো|শ্রদ্ধা আর ভক্তি টাই শেষ কথা|চলবে পুরান কথা|আরো অনেক রহস্যময় পৌরাণিক বিষয় নিয়ে আগামী দিনে আপনাদের সামনে আসবো|পড়তে থাকুন|ভালো থাকুন|ধন্যবাদ|