চলছে জগন্নাথ দেবের চন্দন যাত্রা আর কদিন পরেই স্নান যাত্রা আর তারপর বহু প্রতিক্ষিত রথ যাত্রা,রথে চড়ে ভক্তদের দর্শন দেবেন জগতের জগন্নাথ-বলরাম-সুভদ্রা, গত বৃহস্পতিবার অত্যন্ত পবিত্র তিথিতে আমার গৃহ মন্দিরে শাস্ত্র মতে প্রতিষ্ঠিত হলেন জগন্নাথদেব|
![](https://masarbamangala.com/wp-content/uploads/2022/05/IMG-20220506-WA0025-1024x682.jpg)
আজ পুরান কথায় জানাবো জগন্নাথদেব সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ও তার ব্যাখ্যা|চন্দন যাত্রা চান্দ্র বৈশাখ মাসের শুক্লা তৃতীয়া তিথিতে শুরু হয়ে ২১ দিন পর্যন্ত চলে। ভগবান শ্রীজগন্নাথদেব এই দিনে রাজা ইন্দ্রদ্যুম্নকে চন্দনযাত্রা মহোৎসবটি পালন করার জন্য সরাসরি নির্দেশ দিয়েছেন।
![](https://masarbamangala.com/wp-content/uploads/2022/05/IMG-20220505-WA0026-1024x461.jpg)
ভগবানের অঙ্গলেপন এক ধরণের ভক্তিমূলক কর্ম এবং চন্দন হল সর্বশ্রেষ্ঠ প্রলেপন। যেহেতু ভারতে বৈশাখ মাস অত্যন্ত উষ্ণ থাকে, তাই চন্দনের শীতল গুণ ভগবানের আনন্দ প্রদান করে। জগন্নাথের দুই চক্ষু ব্যতীত সর্বাঙ্গে চন্দন লেপন করা হয়ে থাকে। এবং উৎসব-মূর্তি বা বিগ্রহগণকে নিয়ে শোভাযাত্রা করা হয় এবং মন্দির পুষ্করিণীতে নৌকাবিহার করা হয়ে থাকেদেবস্নানা পূর্ণিমা তিথিতে পালিত হয় মহাপ্রভু জগন্নাথদেবের স্নানের উৎসব স্নানযাত্রা কারন এই দিন জগন্নাথদেবের জন্মতিথি। স্নানযাত্রা আমাদের হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের খুবই পবিত্র উৎসব এবং এই স্নানযাত্রা উপলক্ষে জগন্নাথ, বলরাম, সুভদ্রা এবং মদনমোহনের বিগ্রহ শোভাযাত্রা সহকারে গর্ভগৃহ থেকে স্নানবেদীতে আনা হয় এবং এই সময়ে ভক্তদের দর্শনের অনুমতি দেওয়া হয়|যদিও এবছর মহামারীর কারনে অনেক নিষেধাজ্ঞা জারি আছে, সর্বসাধারণের অংশগ্রহণ সেই ভাবে হবে না|এই স্নান যাত্রার ইতিহাস অতি প্রাচীন, স্কন্দপুরাণ মতে পুরীর মন্দির প্রতিষ্ঠার পর রাজা ইন্দ্রদ্যুম্ন এই অনুষ্ঠান প্রচলন করেন এই বিশেষ তিথিতে|স্নানযাত্রার দিন কূপের জল মন্ত্র দ্বারা শুদ্ধ করে ১০৮ কলস জলে বিগ্রহ স্নান করানো হয়। স্নানপর্বের পর বিগ্রহ সাজানো হয় গজবেশে। অনেকেই মনে করেন এই উৎসব কালে জগন্নাথ দর্শন করলে সব পাপ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়| স্নানযাত্রার পর শুরু হয় অনসর। এই অনসরকালে জগন্নাথদেব অসুস্থতার কারণে ভক্তগণের অন্তরালে গোপন স্থানে চিকিৎসাধীন থাকেন,তিনি গৃহবন্দি হন,রথযাত্রা পর্যন্ত বিশ্রাম নেন,এই সময়ে জগৎ রক্ষাকারী এই দেবতাকে কম্বল চাপা দিয়ে রাখা হয়।আর রথযাত্রার দিন আত্মপ্রকাশ করেন। রাজবেশে সামনে আসেন জগতের নাথ|হিন্দু ধর্মের অন্যান্য দেবতাদের মূর্তি বা প্রতিমার সঙ্গে জগন্নাথের বিগ্রহের কিছু পার্থক্য রয়েছে।
![](https://masarbamangala.com/wp-content/uploads/2022/05/IMG-20220506-WA0033-1024x682.jpg)
দেবতাদের বিগ্রহ সাধারণত আমরা সোনা, রুপো, তামা কিংবা বিভিন্নরকম ধাতু এমনকি মাটি দিয়েও তৈরি হয়। কিন্তু জগন্নাথের বিগ্রহ তৈরি হয় নিম কাঠ দিয়ে। বিগ্রহের আকারও বিচিত্র। চৌকো মাথা, বড় বড় চোখ এবং অসম্পূর্ণ হাত। জগন্নাথের এই অসম্পূর্ণ হাতের পিছনে চলতি অনেক গল্প রয়েছে। রয়েছে আধ্যাত্মিক ব্যাখ্যা এবং তাৎপর্য|প্রভু জগন্নাথের মূর্তিতে চোখের পাতা নেই|এর একটা কারন তিনি জগতের নাথ এবং তিনি সদা জাগ্রত|একটি মুহূর্তের জন্যও তিনি দেখা বন্ধ করেননা|তিনি পরম দয়ালু তাই প্রতি মুহূর্তে তার ভক্তদের উপর তার কৃপা দৃষ্টি নিক্ষেপিত হয়|
![](https://masarbamangala.com/wp-content/uploads/2022/05/IMG-20220506-WA0031-1024x682.jpg)
“যে গাছের কাঠ দিয়ে জগন্নাথের মূর্তি তৈরী হতে পারে, তার এগারোটা বৈশিষ্ট্য থাকতে হবে। “”যেমন গাছের গায়ে হাতির শুঁড় ও চোখের আকৃতি স্পষ্ট থাকতে হবে, গাছের সাথে সাপ জড়িয়ে থাকবে, উঁইয়ের ঢিপি থাকবে ইত্যাদি।”প্রায় দুমাস ধরে কঠিন পরিশ্রমের মধ্যে দিয়ে ওই গাছ খুঁজে বার করে তারপরে মহাযজ্ঞ এবং আরো অনুষ্ঠান করে শুরু হয় মূর্তি নির্মাণ|চলবে পুরান কথা|দেখা হবে পরের পর্বে|পড়তে থাকুন|ধন্যবাদ|