আজ শুরুতে শিব ও বাসুকি নাগের সম্পর্ক নিয়ে বলবো|শিবের মাথায় থাকেন বাসুকি নাগ, এই প্রবল পরাক্রমী বাসুকি কিভাবে শিবের মাথায় স্থান পেলো তাই নিয়ে একাধিক শাস্ত্রে একাধিক ব্যাখ্যা আছে|শিব ও বাসুকিনাগ কে নিয়ে একটি পৌরাণিক ব্যাখ্যা পাওয়া যায় | মনে করা হয় শিব ও পার্বতীর বিবাহের সময় যখন শিবের অঙ্গ সজ্জার প্রয়োজন হয় তখন বাসুকি তার কণ্ঠে জড়িয়ে যান | শিব এতে এতটাই খুশি হন যে সদা সর্বদা তিনি বাসুকি কে ওই স্থানে ধারণ করে থাকেন |ভবিষ্য পুরানে বলা হচ্ছে যে নাগেরাই প্রথম শিব পূজা শুরু করে এবং নাগ রাজা হিসেবে বাসুকি শিবের তপস্যা করেন ও শিব কে তুষ্ট করে বরদান পান যে তিনি শিবের কণ্ঠে স্থান পাবেন ও সারা জীবন শিবের সবথেকে কাছে থেকে তার স্তুতি করবেন |আরেকটি পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে সমুদ্র মন্থন করে অমৃত সন্ধানের সময়ে বাসুকি রজ্জু হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে ছিলেন ও তার পরবর্তীতে শিব যখন হলা হল পান করেন তখনো বাসুকি শিব কে সাহায্য করেন | বাসুকীর এই ভক্তি দেখে শিব সন্তুষ্ট হন ও বাসুকি কে তার জটায় আশ্রয় দেন |আর কথা না বাড়িয়ে শুরু করা যাক আজকের পর্ব, আজ জানবো জ্যোতির্লিঙ্গ মহাকালেশ্বরের কথা| বারোটি জ্যোতির্লিঙ্গের অন্যতম এই মহাকালেশ্বর অবস্থিত মধ্যপ্রদেশের উজ্জয়িনীতে, রূদ্র সাগর হ্রদের তীরে|শিব এখানে সয়ম্ভু|এই শিব লিঙ্গ কে দক্ষিনা মূর্তিও বলা হয় কারন তাঁর অবস্থান দক্ষিণ মুখী|এই জ্যোতির্লিঙ্গের অন্যতম বৈশিষ্ট হলো তান্ত্রিক নেত্র যা আর কোনো মূর্তিতে চোখে পরে না|ওঙ্কারেশ্বর এর ন্যায় এই শিব মন্দির ও পাঁচটি তল বিশিষ্ট যা মহাকাল মন্দির নামে খ্যাত|মহাদেবে’র মূর্তিটি মহাকাল মন্দিরের গর্ভগৃহের উপরে স্থাপিত|এছাড়াও মন্দিরের বিভিন্ন স্থানে রয়েছে গনেশ, পার্বতী, কার্তিক ও নন্দীর মূর্তি|সুবিস্তৃত মন্দির প্রাঙ্গন ও সুউচ্ছ চূড়া মহাকাল মন্দিরের সৌন্দর্য বহু অংশে বৃদ্ধি করে|ভূগর্ভস্থ কক্ষটির পথটি পিতলের প্রদীপ দ্বারা আলোকিত হয়। মনে করা হয়, দেবতাকে এই কক্ষেই প্রসাদ দেওয়া হয়|এ এক ব্যতিক্রমী ও স্বতন্ত্র প্রথা|পুরাণ অনুসারে উজ্জয়িনী শহরটির নাম ছিল অবন্তিকা|অবন্তিকার রাজা ছিলেন শিব ভক্ত কিন্তু এই সৎ ও শিব ভক্ত রাজার শত্রুও ছিলো অনেক |একবার ব্রহ্মার আশীর্বাদে দূষণ নামে এক দৈত্য অদৃশ্য হয়ে যাবার ক্ষমতা পেয়েছিল। শত্রুরাজারা দূষণের সাহায্যে উজ্জয়িনী আক্রমণ করেন। যুদ্ধে তাদেরই জয় হয় এবং তারা সকল শিবভক্তের উপর অত্যাচার শুরু করে দেন।অসহায় ভক্তদের প্রার্থনা শুনে শিব মহাকালের রূপে উজ্জয়িনীতে আবির্ভূত হয়ে অসুর ও রাজার শত্রুদের পরাজিত করেন |ভক্ত দের অনুরোধে শিব উজ্জয়িনীতে বাস করতে রাজি হন|সেই থেকে তিনিই হন রাজ্যের প্রধান দেবতা এবং শিবভক্তদের রক্ষাকর্তা|ভারতের অন্যান্য তীর্থ ক্ষেত্রের ন্যায় এই মন্দিরের ও রয়েছে এক রক্তাক্ত ইতিহাস| সুলতান ইলতুৎমিসের শাসন কালে ধ্বংস করা হয় মহাকাল মন্দির|পরবর্তীতে শিব ভক্ত মারাঠা পেশোয়ারা আবার এই মন্দির পুনর্নির্মাণ করান|ভারতের স্বাধীনতার পর দেবস্থান ট্রাস্টের পরিবর্তে উজ্জয়িনী পৌরসংস্থা এই মন্দিরের ভার নেয়। বর্তমানে এটি একটি কালেক্টরয়েটের অধীনে রয়েছে|সনাতন ধর্ম বিশ্বাস অনুসারে, এই মন্দিরের প্রধান উপাস্য দেবতা শিব অনন্তকাল ধরে উজ্জয়িনীর শাসক|তিনি পার্বতী সহ এখানে স্বমহিমায় বিরাজমান|এই চত্বরেই রয়েছে শক্তি পীঠ মহাকালী ও স্বপ্নেশ্বর মহাদেবের মন্দির|অসংখ্য ভক্ত ও দর্শনার্থী প্রায় সারা বছরই আসেন মহাকাল মন্দিরে, তাদের মনোস্কামনা জানান ও প্রচলিত বিস্বাস বাবা কাউকে খালি হাতে ফেরান না|প্রতি বছর শিব রাত্রিতে এখানে মেলা বসে ও সেই উপলক্ষে ব্যাপক জনসমাগম হয়|আবার আগামী পর্বে আলোচনা করবো শিব ও শিব ভূমি নিয়ে|পড়তে থাকুন|ওঁম নমঃ শিবায়ঃ |ধন্যবাদ|