দেবাদিদেব মহাদেব ও নৃসিংহ দেবের যুদ্ধ

1945

নমস্কার, আজকের পুরান রহস্যর এই পর্বে লিখবো ভগবান নৃসিংহ দেব ও তাঁর সাথে জড়িত এক রহস্য ময় পৌরাণিক আখ্যান যেখানে প্রধান ভূমিকায় রয়েছন বিষ্ণুর অবতার নৃসিংহ দেব ও দেবাদিদেব মহাদেব|

এটা আমরা প্রায় সবাই জানি যে হিন্দু দের জনপ্রিয় ও শক্তি শালী দেবতা দের মধ্যে অন্য তম নৃসিংহ দেব |তিনি বিষ্ণুর চতুর্থঅবতার|
সাধারণত দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালনের অন্যতম প্রতীক তিনি, তিনি বীরত্ব ও শৌর্যর ও প্রতীক তাই প্রাচীন কাল থেকে রাজারা বা শাসক রা তার উপাসনা করে আসছেন |রাজা হিরণ্য কশিপু কে বধ করে অধর্মের উপর ধর্ম কে প্রতিষ্ঠা করতে তিনি পৃথিবীতে অবতীর্ন হয়ে ছিলেন |

নৃসিংহ দেব ছিলেন অর্ধ-মনুষ্য অর্ধ-সিংহ আকারবিশিষ্ট|দক্ষিণ ভারতে তিনি অধিক জনপ্রিয়| কথিত আছে তিনি তার ভক্ত দের সকল সংকট থেকে রক্ষা করেন |

নৃসিংহ দেব অবতারের আবির্ভাবের ও একটি বিশেষ কারন ছিলো|নৃসিংহের পূর্ববর্তী অবতার বরাহ হিরণ্যাক্ষ নামে এক রাক্ষসকে বধ করেন। হিরণ্যাক্ষের ভাই হিরণ্যকশিপু এই কারণে প্রবল বিষ্ণুবিদ্বেষী হয়ে ওঠেন। তিনি বিষ্ণুকে হত্যা করার পথ খুঁজতে থাকেন। তিনি বহু বছর ব্রহ্মার কঠোর তপস্যা করেন। ব্রহ্মাও হিরণ্যকশিপুর তপস্যায় সন্তুষ্ট হন। তিনি হিরণ্যকশিপুর সম্মুখে উপস্থিত হয়ে তাঁকে বর দিতে চান। হিরণ্যকশিপু বলেন, আপনি যদি আমাকে সত্যই বর দিতে চান, তবে এমন বর দিন যে বরে আপনার সৃষ্ট কোনো জীবের হস্তে আমার মৃত্যু ঘটবে না, আমার বাসস্থানের অন্দরে বা বাহিরে আমার মৃত্যু ঘটবে না, দিবসে বা রাত্রিতে, ভূমিতে বা আকাশে আমার মৃত্যু হবে না, শস্ত্রাঘাতে, মনুষ্য বা পশুর হাতে আমার মৃত্যু হবে না,।ব্রম্হা তাই বর দেন |

কিন্তু প্রভুর এমন লীলা হিরণ্য কশিপুর পুত্র প্রহ্লাদ হয়ে ওঠেন পরম বিষ্ণুভক্ত।এতে তাঁর পিতা হিরণ্যকশিপু অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হন। ক্রমে প্রহ্লাদের বিষ্ণুভক্তিতে হিরণ্যকশিপু এতটাই ক্ষুব্ধ ও বিরক্ত হন যে তিনি নিজ পুত্রকে হত্যা করার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু যতবারই তিনি বালক প্রহ্লাদকে বধ করতে যান, ততবারই বিষ্ণুর মায়াবলে প্রহ্লাদের প্রাণ রক্ষা পায়।

হিরণ্যকশিপু প্রহ্লাদকে বলেন তাঁকে ত্রিভুবনের অধিপতি রূপে স্বীকার করে নিতে। প্রহ্লাদ অস্বীকার করেন। তিনি বলেন একমাত্র বিষ্ণুই এই ব্রহ্মাণ্ডের সর্বোচ্চ প্রভু এবং তিনি সর্বত্র বিরাজমান । ক্রুদ্ধ হিরণ্যকশিপু তখন একটি স্তম্ভ দেখিয়ে প্রহ্লাদকে জিজ্ঞাসা করেন যে ‘তার বিষ্ণু’ সেখানেও আছেন কিনা। প্রহ্লাদ উত্তর দিলেন, তিনি এই স্তম্ভে আছেন, এমনকি সৃষ্টির ক্ষুদ্রতম কনায় ও তিনি আছেন । এই কথা শুনে অত্যন্ত রেগে যান হিরণ্যকশিপু, ক্রোধ সংবরণ করতে না পেরে গদার আঘাতে স্তম্ভটি ভেঙে ফেলেন। তখনই সেই ভগ্ন স্তম্ভ থেকে প্রহ্লাদের সাহায্যার্থে নৃসিংহের মূর্তিতে আবির্ভূত হন বিষ্ণু। ব্রহ্মার বর যাতে বিফল না হয়, অথচ হিরণ্যকশিপুকেও হত্যা করা যায়, সেই কারণেই বিষ্ণু নরসিংহের বেশ ধারণ করেন: হিরণ্যকশিপু দেবতা, মানব বা পশুর মধ্য নন, তাই নৃসিংহ পরিপূর্ণ দেবতা, মানব বা পশু নন; হিরণ্যকশিপুকে দিবসে বা রাত্রিতে বধ করা যাবে না, তাই নৃসিংহ দিন ও রাত্রির সন্ধিস্থল গোধূলি সময়ে তাঁকে বধ করেন; হিরণ্যকশিপু ভূমিতে বা আকাশে কোনো শস্ত্রাঘাতে বধ্য নন, তাই নৃসিংহ তাঁকে নিজ জঙ্ঘার উপর স্থাপন করে নখের আঘাতে হত্যা করেন; হিরণ্যকশিপু নিজ গৃহ বা গৃহের বাইরে বধ্য ছিলেন না, তাই নৃসিংহ তাঁকে বধ করেন তাঁরই গৃহদ্বারে।দুষ্টের দমন হয় আবার ব্রম্হার বর ও অটুট থাকে | স্বার্থক হয় বিষ্ণুর নৃসিংহ অবতার |

হিরণ্য কশিপুর বধ করার পর কি হলো নৃসিংহ দেবের? এনিয়ে পুরানে একটি ঘটনার উল্লেখ আছে|

হিরণ্য কশিপুর বধ হলো কিন্তু নৃসিংহদেবের ক্রোধ কম হল না। তিনি ভয়ানক ধ্বংসলীলা চালিয়ে যেতে থাকেন। এই সময়ে সব দেবতারা একসাথে শিবের শরণ নেন। তাঁরা বুঝতে পারেন, একমাত্র মহাদেবই পৃথিবীকে রক্ষা করতে পারেন। শিব বীরভদ্র ও ভদ্রকালীকে প্রেরণ করেন নৃসিংহকে থামানোর জন্য। কিন্তু মহাপ্রতাপ নৃসিংহ সেই দুই মহাশক্তিকেও বিপর্যস্ত করে ফেলেন। এমতাবস্থায় মহাদেব নিজেই শরভ নামের এক বিচিত্রদর্শন প্রাণীর রূপ নিয়ে আবির্ভূত হন। শরভ এক সুবিশাল পাখি। তাঁর সহস্রবাহু এবং পশুর মতো দেহ। শরভের আঘাতে নৃসিংহ আত্মসংবরণ করেন। শরভই শেষ করেন নৃসিংহের লীলা।নৃসিংহ দেবের ক্রোধ থেকে রক্ষা পায় সৃষ্টি |

পুরানে বর্ণিত এই যুদ্ধ বেশ বিরল এবং ব্যতিক্রমী একটি ঘটনা কারন শিব নিজে একজন পরম বৈষ্ণব এবং নৃসিংহ দেব স্বয়ং বিষ্ণু| ভক্তের দ্বারা ভগবানের বধ সনাতন ধর্ম শাস্ত্রের এক দুর্লভ অধ্যায়|

পুরান রহস্যর আগামী পর্বে আবার ফিরবো নতুন এক পর্ব নিয়ে|পড়তে থাকুন আর অবশই আপনাদের মূল্যবান মতামত আর যোগাযোগ করুন যেকোনো জ্যোতিষ সংক্রান্ত সমস্যা নিয়ে|উল্লেখিত নাম্বারে ফোন করে সরাসরি কথা বলতে পারেন আমার সাথে|ভালো থাকুন|ধন্যবাদ|