প্রভু জগন্নাথের নব কলেবর

9

প্রভু জগন্নাথের নব কলেবর

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

প্রভু জগন্নাথ সংক্রান্ত রহস্যগুলির মধ্যে অন্যতম তাঁর নব কলেবর। আজ এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করবো।

 

শ্রী কৃষ্ণের অন্তেষ্টি ক্রিয়া সাঙ্গ করেন পাণ্ডবরা। কিন্তু চিতা নিভে গেলেও দেখা যায় তাঁর হৃদপিণ্ডটি অক্ষত আছে । তখন সেটিকে নদীর জলে ভাসিয়ে দ্বারকার সব মহিলা ও শিশুদের নিয়ে হস্তিনাপুর ফিরে যান পাণ্ডবরা। সমুদ্রের জল এসে ভাসিয়ে নিয়ে দ্বারকাকে। সমুদ্রের নিচে ডুবে যায় দ্বারকা।কিন্তু কৃষ্ণের হৃদপিণ্ড সাগরের জলে জীবিত অবস্থায় নিমজ্জিত হয়|

 

এরপর কেটে যায় বহু কাল, একদিন নদীর জলে স্নান করতে করতে কৃষ্ণের দিব্য হৃদয় উদ্ধার করেন পুরীর মহারাজ ইন্দ্রদ্যুম্ন। সেই হৃদয় হাতে নিতেই স্বয়ং বিষ্ণু তাঁর কানে ফিসফিস করে বসেন যে এই হৃদয় তাঁরই। এই পৃথিবীতে এটি বরাবর থাকবে। দ্রুত জগন্নাথ মন্দিরে এসে জগন্নাথ দেবের মুর্তির মধ্যেই তা স্থাপন করেন ইন্দ্রদ্যুম্ন।বিষ্ণুর আদেশে এমন ভাবে তা করা হয়, যাতে তা কেউ দেখতে না পায়|মনে করা হয় আজও সেই দিব্য বস্তু, স্বজত্নে এবং গোপনে সংরক্ষিত আছে প্রভু জগন্নাথের মূর্তির মধ্যে যাকে বলা হয় ব্রহ্ম পদার্থ।

 

‘নব-কলেবর’ নামের রহস্যময় এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নিয়মিত নিদ্দিষ্ট সময়ের ব্যাবধানে দেবতার পুরোনো মূর্তি সরিয়ে নতুন মূর্তি বসানো হয় আর পুরোনো মূর্তির ‘আত্মা’ নতুন মূর্তিতে সঞ্চারিত হবে – এটাই পূজারীদের বিশ্বাস।

এ জন্য ইতিমধ্যেই জগন্নাথ, সুভদ্রা আর বলভদ্রের নতুন কাঠের মূর্তি তৈরী হয়েছে।জগন্নাথ মন্দিরে ‘গর্ভগৃহ’ বা মূল কেন্দ্রস্থলে এই অতি গোপনীয় প্রথার সময়ে পুরোহিতদের চোখ আর হাত বাঁধা থাকে – যাতে পুরোনো মূর্তি থেকে ‘আত্মা’ নতুন মূর্তিতে গিয়ে ঢুকছে – এটা তাঁরাও দেখতে না পান।

 

যদিও বিষয়টি বিতর্কিত এবং নানা রকম বিরুদ্ধ মতবাদ আছে। তবুও জনশ্রুতি বা লোককথা রূপে এই তত্ত্ব বেশ জনপ্রিয় এবং বহুল প্রচারিত।

 

প্রভু জগন্নাথ সংক্রান্ত আরো এমন অনেক তথ্য নিয়ে ফিরে আসবো আগামী পর্বগুলিতে।

পড়তে থাকুন। ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।