দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গ – মহাকালেশ্বর মন্দির
পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক
দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গের প্রায় প্রতিটির সাথেই জড়িত আছে একাধিক পৌরাণিক ঘটনা এবং ইতিহাস আজকের পর্বে জানবো জ্যোতির্লিঙ্গ মহাকালেশ্বরের কথা|
বারোটি জ্যোতির্লিঙ্গের অন্যতম এই মহাকালেশ্বর অবস্থিত মধ্যপ্রদেশের উজ্জয়িনীতে, রূদ্র সাগর হ্রদের তীরে|শিব এখানে সয়ম্ভু|এই শিব লিঙ্গ কে দক্ষিনা মূর্তিও বলা হয় কারন তাঁর অবস্থান দক্ষিণ মুখী|এই জ্যোতির্লিঙ্গের অন্যতম বৈশিষ্ট হলো তান্ত্রিক নেত্র যা আর কোনো মূর্তিতে চোখে পরে না|ওঙ্কারেশ্বর এর ন্যায় এই শিব মন্দির ও পাঁচটি তল বিশিষ্ট যা মহাকাল মন্দির নামে খ্যাত।
মহাদেবে’র মূর্তিটি মহাকাল মন্দিরের গর্ভগৃহের উপরে স্থাপিত|এছাড়াও মন্দিরের বিভিন্ন স্থানে রয়েছে গনেশ, পার্বতী, কার্তিক ও নন্দীর মূর্তি|সুবিস্তৃত মন্দির প্রাঙ্গন ও সুউচ্ছ চূড়া মহাকাল মন্দিরের সৌন্দর্য বহু অংশে বৃদ্ধি করে|ভূগর্ভস্থ কক্ষটির পথটি পিতলের প্রদীপ দ্বারা আলোকিত হয়। মনে করা হয়, দেবতাকে এই কক্ষেই প্রসাদ দেওয়া হয়|এ এক ব্যতিক্রমী ও স্বতন্ত্র প্রথা।
এবার আসি পুরানের কথায় পুরাণ অনুসারে উজ্জয়িনী শহরটির নাম ছিল অবন্তিকা|অবন্তিকার রাজা ছিলেন শিব ভক্ত কিন্তু এই সৎ এবং শিব ভক্ত রাজার শত্রুও ছিলো অনেক |একবার ব্রহ্মার আশীর্বাদে দূষণ নামে এক দৈত্য অদৃশ্য হয়ে যাবার ক্ষমতা পেয়েছিল। প্রতিবেশী শত্রুরাজারা দূষণের সাহায্যে উজ্জয়িনীর বিরুদ্ধে চক্রান্ত করে এবং উজ্জ্বয়ীনি আক্রমণ করেন। যুদ্ধে তাদেরই জয় হয় এবং তারা সকল শিবভক্তের উপর অত্যাচার শুরু করে দেন।অসহায় ভক্তদের প্রার্থনা শুনে শিব মহাকালের রূপে উজ্জয়িনীতে আবির্ভূত হয়ে অসুর ও রাজার বাকি শত্রুদের পরাজিত করেন।ভক্ত দের অনুরোধে শিব উজ্জয়িনীতে বাস করতে রাজি হন|সেই থেকে তিনিই হন রাজ্যের প্রধান দেবতা এবং শিবভক্তদের রক্ষাকর্তা।
সনাতন ধর্ম বিশ্বাস অনুসারে, এই মন্দিরের প্রধান উপাস্য দেবতা শিব অনন্তকাল ধরে উজ্জয়িনীর শাসক|তিনি পার্বতী সহ এখানে স্বমহিমায় বিরাজমান|এই চত্বরেই রয়েছে শক্তি পীঠ মহাকালী ও স্বপ্নেশ্বর মহাদেবের মন্দির|
ইতিহাস অনুসারে সুলতান ইলতুৎমিসের শাসন কালে ধ্বংস করা হয় মহাকাল মন্দির|পরবর্তীতে শিব ভক্ত মারাঠা পেশোয়ারা আবার এই মন্দির পুনর্নির্মাণ করান|ভারতের স্বাধীনতার পর দেবস্থান ট্রাস্টের পরিবর্তে উজ্জয়িনী পৌরসংস্থা এই মন্দিরের ভার নেয়। বর্তমানে এটি একটি স্বাধীন কমিটির অধীনে রয়েছে।
অসংখ্য ভক্ত ও দর্শনার্থী প্রায় সারা বছরই আসেন মহাকাল মন্দিরে, তাদের মনোস্কামনা জানান ও প্রচলিত বিস্বাস বাবা মহাকালেশ্বর কাউকে খালি হাতে ফেরান না|প্রতি বছর শিব রাত্রিতে এখানে মেলা বসে ও সেই উপলক্ষে ব্যাপক জন
সমাগম হয়|
আবার আগামী পর্বে আলোচনা করবো অন্য একটি জ্যোতির্লিঙ্গ নিয়ে এবং শিব সংক্রান্ত এই ধারাবাহিক আলোচনা চলতে
থাকবে। পড়তে থাকুন।
ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।