দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গ – ভীমা শঙ্কর শিব মন্দির
পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক
শক্তি পীঠ বা সিদ্ধ পীঠের সংখ্যা এবং প্রকৃত স্থান নিয়ে যেমন বিতর্ক আছে বা মত পার্থক্য আছে তেমনই কিছু জ্যোতির্লিঙ্গের স্থান নিয়েও বিতর্ক আছে।এমনই এক জ্যোতির্লিঙ্গ ভীমা শঙ্কর যা আমার আজকের পর্বে আলোচ্য বিষয়।
অনেকেই মনে করেন পুনেতে অবস্থিত ভীমা শংকর হচ্ছে প্রকৃত জ্যোতির্লিঙ্গ আবার কেউ কেউ বিশ্বাস করেন আসামে অবস্থিত এই ভীমেস্বরই হচ্ছেন ভীমাশংকর এবং এই স্বয়ংভু শিব লিঙ্গই প্রকৃত জ্যোতির্লিঙ্গ।
আজ আমি আসামের ভীমা শঙ্করের কথাই বলছি কারন জ্যোতির্লিঙ্গ রূপে এই মন্দির অধিক জনপ্রিয় এবং স্বীকৃত।আসামের গুয়াহাটির কাছে দীপর হ্রদের ধারে ডাইনি পাহাড় বা ডাকিনি পাহাড় নামে এক বেশ রহস্যময় স্থানে ভীমশঙ্কর অবস্থিত|এখানে শিব মন্দির ও শিব লিঙ্গ প্রায় প্রাকৃতিক ভাবেই তৈরি যা আধ্যাত্মিক ভাবে দর্শনার্থীদের মোহিত করে|
শিব লিঙ্গের উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে এক প্রাকৃতিক জলধারা বা ঝর্না|দু ধারে সবুজ বনাঞ্চল ও জল ধারা দেখতে দেখতে পাহাড়ি পথ অতিক্রম করে এই স্থানে পৌঁছানো এক অসাধারণ অভিজ্ঞতা।জ্যোতির্লিঙ্গ থেকে কিছু দূরেই রয়েছে একটি গণেশ মন্দির|সেখানেও ভক্তিভরে পূজা দেন দর্শনার্থীরা|
এই শিব লিঙ্গ ও শিব মন্দির তৈরির পেছনে রয়েছে এক পৌরাণিক ঘটনা|শিব পুরান মতে কুম্ভ কর্ণ ও পাতাললোকের রাজকুমারী কর্কটির পুত্র ছিলেন ভীমাসুর যিনি ব্রম্ভার বর লাভ করে অজেও হয়ে উঠেছিলে|অহংকার ও ঔদ্ধত্যর বশবর্তী হয়ে তিনি কামরূপ রাজ প্ৰিয়ধর্ম কে হত্যা করতে যান|রাজা ছিলেন পরম শিব ভক্ত|তিনি শিবের কাছে প্রার্থনা করলে যথা সময়ে স্বয়ং শিব প্রকট হয়ে ভীমাসুর কে হত্যা করেন ও কাম রূপ রাজ কে রক্ষা করেন|পরবর্তীতে রাজা এবং অন্যান্য ঋষি মুনি দের অনুরোধ রাখতে শিব সেই স্থানে বিরাজমান হতে সম্মতি দেন|আজও তিনি ডাকিনি পাহাড়ে অবস্থিত ভীমশংকরে জ্যোতির্লিঙ্গ রূপে স্বমহিমায় বিরাজমান|ভীমাসুরের নাম থেকেই ভীমেস্বর বা ভীম শংকর নামের সৃষ্টি|
বেশ কয়েক বছর আগে আমি ধন্য হয়েছি এই জ্যোতির্লিঙ্গ দর্শন করে। এখানকার প্রকৃতি এবং আধ্যাত্মিক পরিবেশ নানা দিক দিয়ে অতুলনীয়।
পরবর্তী জ্যোতির্লিঙ্গ সংক্রান্ত আলোচনা এবং
শিব মহিমার বর্ণনা নিয়ে ফিরে আসবো
আগামী পর্বে। পড়তে থাকুন।
ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।