ভক্তের ভগবান – শ্রী রাম এবং শবরী

62

ভক্তের ভগবান – শ্রী রাম এবং শবরী

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

আজকের পর্বে শ্রী রামের এক এমন ভক্তের কথা আপনাদের বলবো যিনি অতি সাধারণ হয়েও অসাধারণ এবং স্বয়ং শ্রী রাম বন বাসের সময়ে তাকে দেখা দিয়ে তার উদ্ধার করে ছিলেন।

এই মহান ভক্ত হলেন শবরী।আজকের পর্বে শবরীর কথা।

 

শবরী ছিলেন ব্যাধ-কন্যা ৷ তিনি ছিলেন ভগবান রামচন্দ্রের অনুগত এক শিষ্যা ৷মতঙ্গ মুনির আশ্রমে থাকতেন তিনি ৷মতঙ্গ মুনি দেহ রাখার আগে শিষ্যা শবরীকে বলেছিলেন, একদিন এই আশ্রমে রাম আসবেন ৷ আশ্রম পবিত্র হয়ে উঠবে। শ্রী রামের দর্শন লাভই ছিলো শবরীর একমাত্র ইচ্ছা।

 

বৃদ্ধা শবরী রোজ সকালে ঘুম থেকে উঠে ভাবতেন আজই বোধহয় সেই দিন ৷ আজই হয়তো শ্রী রাম আসবেন।তাই রোজই ফুল, মালা, চন্দনে সাজিয়ে রাখতেন মতঙ্গ মুনির আশ্রম ৷নিজে হাতে বন থেকে নানা সুমিষ্ট ফল-মূল সংগ্রহ করে রাখতেন ৷ আর আশ্রমের দরজায় বসে বসে ভগবানের অপেক্ষা করতেন ৷ দিন শেষ হয়ে যেত ৷ রামচন্দ্র দেখা দিতেন না। পরদিন সকালে উঠে ফের নতুন উদ্যমে প্রভুর জন্য শুরু করতেন তাঁর অপেক্ষা ৷

 

অবশেষে একদিন বৃদ্ধা শবরীর তপস্যা পূর্ণতা পেল। রাবন যখন সীতা মাতাকে হরণ করে নিয়ে যায় তখন সীতাকে খুঁজতে খুঁজতে রাম-লক্ষ্ণ সেই মতঙ্গ মুনির আশ্রমে এসে উপস্থিত হলেন ৷ আনন্দে, প্রেম, ভক্তি, শ্রদ্ধায়, সমর্পনে শবরী অনবরত কাঁদতে লাগলেন ৷ তা দেখে রামচন্দ্রের চোখ দিয়েও অশ্রুজল নির্গত হতে লাগল।

ভক্ত এবং ভগবানের মিলনের সাক্ষী হয়ে থাকলো মাতঙ্গ ঋষির আশ্রম।

 

প্রথমে ভগবানের ধুয়ে দিলেন শবরী ৷ এরপর বন থেকে সংগ্রহ করে আনা ফলমূল সাজিয়ে খেতে দিলেন প্রভুকে ৷ ওই ফলের মধ্যে ছিল জামও ৷ ভাবে বিভোর শবরী ভাবলেন প্রভুকে কীভাবে এই জাম নিবেদন করবেন ? যদি জামগুলি টক হয় ৷ এই ভেবে শবরী নিজেই জামগুলি চেখে দেখতে লাগলেন ৷ টক জামগুলি ফেলে নিয়ে মিষ্টি জামগুলি দিলেন রামের হাতে ৷ ভক্তের এই ভক্তি দেখে প্রভুও শিষ্যার উচ্ছিষ্ট অত্যন্ত আনন্দের সঙ্গে গ্রহণ করে খেতে লাগলেন। এখানে উল্লেখ

করতে হয় শবরী ছিলেন তথাকথিত নিচু জাতের স্ত্রী কিন্তু ভগবান রাম সেই জাত পাতের ভেদাভেদ অগ্রাহ্য করলেন এবং ভক্তের ভক্তিকেই প্রাধান্য দিলেন।

 

এই ভাবেই নিজেকে ধন্য করলেন শবরী ৷ শেষে আরাধ্য দেবতার সামনেই দেহত্যাগ করে বৈকুন্ঠে গমন করলেন শবরী ৷এতো দিন রামের অপেক্ষাতেই তিনি দেহ ধারণ করে ছিলেন। ভগবানের সাক্ষাৎ পাওয়ার পর আর তার এই ধরাধামে থাকার প্রয়োজন ছিলোনা।

 

আবার পরের পর্বে এমন এক ভক্ত এবং তার

অসীম ভক্তির বৃত্তান্ত নিয়ে ফিরে আসবো। পড়তে থাকুন।ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।