ভক্তের ভগবান
সাধক রামপ্রসাদ এবং মা কালী
পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক
ভারতের শক্তি সাধক বা মা কালীর উপাসক হিসেবে সাধক রাম প্রসাদ এক উজ্জ্বল নক্ষত্র।
কালী ভক্ত হিসেবে তিনি শ্যামা সংগীতকেই নিজের সাধনার মাধ্যম করেছিলেন। তার জীবনে একাধিক অলৌকিক ঘটনা ঘটেছে তবে এজ এমন একটি ঘটনার উল্লেখ করবো যেখানে এই মাতৃ ভক্তকে স্বয়ং মা কালী দেখা দেন এবং সাহায্যর হাত বাড়িয়ে দেন।কবিরঞ্জন রামপ্রসাদ সেনের জন্ম আনুমানিক ১৭১৮ থেকে ১৭২৩ খ্রিস্টাব্দের মাঝামাঝি সময়ে। তাঁর প্রয়াণ আনুমানিক ১৭৭৫ সালে।
নিজের হাতে ছোট্ট এক ছাউনি তে মাতৃ প্রতিমা গড়ে মায়ের ধ্যান, পূজা, হোম, যজ্ঞ নিয়ে তার দিন কাটতো । মায়ের নাম জপ করতেন অষ্টপ্রহর। এরই ফাঁকে মাকে শোনাতেন স্বরচিত শ্যামাসঙ্গীত। গান গাইতে গাইতে চোখ দিয়ে নেমে আসতো অশ্রু।রামপ্রসাদ রচিত শ্যামাসংগীতে মা কালী ভয়ংকর ও উগ্ররূপিণী দেবী নন। কখনও তিনি মা, কখনও মেয়ে।তার কালী সাধনা ছিলো সহজ সরল এবং আবেগ সর্বস্ব। এই সাধনাতেই তুষ্ট হয়ে মা কালী রামপ্রসাদকে দর্শন দিয়ে ছিলেন।
একবার তিনি একবার বাড়িতে নিজে হাতে বেড়া বাঁধছিলেন। সেই সময় কাছেই তাঁর মেয়ে খেলা করছিল। মেয়ের থেকে দড়ি চেয়েছিলেন রামপ্রসাদ। মেয়ে খেলার আনন্দে সেই ডাককে গুরুত্ব দেয়নি। সেই সময়ে দেবী নিজে তাঁর মেয়ের রূপ ধরে রামপ্রসাদের হাতে বেড়ার দড়ি তুলে দিয়েছিলেন। পরে আসল সত্য উপলব্ধি করেছিলেন রামপ্রসাদ। বুঝে ছিলেন তার কালী সাধনা স্বার্থক হয়েছে। তিনি মা কালীর দেখা পেয়েছেন। কন্যা রূপে মা তাকে দেখা দেন।
তার গানে তিনি এই ঘটনার উল্লেখ করছেন।তার মৃত্যু নিয়েও আছে একটি অলৌকিক ঘটনার উল্লেখ।জীবনান্তের পূর্ব লক্ষণ বুঝতে পেরে তিনি বিশেষ পূজা করেন তাঁর আরাধ্যার। মৃন্ময়ীর মূর্তি বিসর্জনের কালে তিনি তাঁর নিজের লেখা গান গাইতে গাইতে হালিশহরের ভাগীরথী তীরে উপস্থিত হন। গঙ্গা বক্ষে অর্ধনাভি নিমজ্জিত রেখে দণ্ডায়মান অবস্থাতেই ব্রহ্মরন্ধ্র ভেদ হয়ে তাঁর মৃত্যু হয়। কথিত আছে প্রয়াণ মুহূর্তেও তিনি একটি শ্যাম সংগীতের পদ উচ্চারণ করছিলেন – ‘মা গো, ও মা আমার দফা হল রফা। এমনই ছিলো তার মাতৃ ভক্তি।
আবার ফিরে আসবো অন্য এক ভক্ত এবং ভগবানের লীলা নিয়ে আগামী পর্বে।
পড়তে থাকুন।ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।