ভক্তের ভগবান : জগন্নাথদেব এবং ভক্ত রঘু

163

ভক্তের ভগবান

 

জগন্নাথদেব এবং ভক্ত রঘু

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

ভক্তের প্রতি ভগবানের এবং ভগবানের প্রতি ভক্তের যতগুলি ভাব শাস্ত্রে উল্লেখিত আছে তার মধ্যে অন্যতম সখা ভাব। এই ভাবে ভগবান হয়ে ওঠেন ভক্তের বন্ধু।আজ প্রভু জগন্নাথের একটি বিশেষ লীলা আপনাদের সামনে উপস্থাপন করবো। এই লীলাতে প্রভুর সখা ভাব ফুটে উঠেছে।

 

জগন্নাথ ধামে রঘু নামে জগন্নাথের এক ভক্ত ছিলো।সে নিজেকে জগন্নাথের সখা রূপে কল্পনা করতো।জগন্নাথদেব ও তাকে বালক রূপে দর্শন দিতো।

 

একবার ভগবান জগন্নাথ তার ভক্ত রঘুকে বালক রূপে দর্শন দিলেন এবং তাঁকে রাজার বাগান থেকে কাঁঠাল চুরি করতে তাঁর সঙ্গে যেতে বললেন। রঘু বলল, “তুমি কেন কাঁঠাল চুরি করতে চাও? তোমার যদি কাঁঠাল খাবার ইচ্ছা হয়, আমাকে বল-আমি তোমার জন্য সুন্দর একটি কাঁঠাল এনে দেব।” বালকরূপী জগন্নাথ সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে বললেন কৃষ্ণরূপে আমি অন্যদের বাড়িতে মাখন চুরি করতে যেতাম। চুরি করা দ্রব্য ভোজনে বিশেষ আনন্দ আছে। আজ তোমাকে আমি উপলব্ধি করাব চুরি করা কি আনন্দের। আমার সঙ্গে এসো।”

 

রঘু বুঝলো আজ আর মুক্তি নেই।

নিরুপায় হয়ে রঘু প্রভুর প্রস্তাবে সম্মত হল এবং তাঁর সঙ্গ নিল।

 

চুপিসারে তারা দুজনে রাজার বাগানে প্রবেশ করলেন। চারিদিকে কাঁঠাল গাছ তাতে শোভা পাচ্ছে বড়ো বড়ো পাকা কাঁঠাল। বাতাসে পাকা কাঁঠালের মিষ্টি গন্ধ।জগন্নাথ রঘুকে বললেন, “তুমি গাছে চড়বে। আমি মাটিতে দাঁড়িয়ে থাকব। তুমি সবচেয়ে সুন্দর ও বড় কাঁঠালটি পাড়বে এবং মাটিতে ফেলবে। আমি এখানে দাঁড়িয়ে থাকব। তারপর আমরা উভয়ে কাঁঠাল নিয়ে পালাব।” রঘু যথাযথভাবে প্রভুর নিদের্শ অনুসরণ করল। রঘু কাঁঠাল গাছে উঠে সবচেয়ে বড় ও ভাল কাঁঠালটি খুঁজে বের করল এবং সেটা পাড়ল। ‘জগন্নাথ’, চাপাস্বরে রঘু জগন্নাথকে ডাকল। ‘তুমি কি তৈরি?’ জগন্নাথ উত্তর দিলেন, ‘হ্যাঁ, আমি তৈরি, নিচে ফেল !’ রঘু কাঁঠাল নিচে ফেলল- জগন্নাথ সেটা ধরবেন ভেবে। কিন্তু কোথায় জগন্নাথ ! তিনি ইতিমধ্যেই বাগান থেকে অদৃশ্য হয়েছেন।কাঁঠাল ধরার জন্য কেউই সেখানে ছিল না। সশব্দে কাঁঠালটি মাটিতে পড়ে ফেটে চৌচির হল। যখন রাজার বাগানের মালী ঐ শব্দ শুনল তখন রঘু

ধরা পড়লো এবং রাজার কাছে খবর গেলো|

 

রাজা জানতেন রঘু জগন্নাথদেবের অত্যন্ত প্রিয় ভক্ত এবং খুবই সৎ আর নিষ্ঠাবান।নিছক চুরি করার জন্য সে এই কাজ করবে না। নিশ্চই এর পেছনে অন্য কোনো রহস্য আছে।রাজা রঘুকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘তোমার যদি কাঁঠাল খাওয়ার ইচ্ছা হয়ে থাকে, তাহলে গভীর রাত্রে আমার বাগানে এসে গাছে চড়ার কি প্রয়োজন ছিল? তুমি আমাকে একবার বলতে পারতে। আমি কাঁঠাল পাড়ার ব্যবস্থা করে তোমার বাড়িতে পাঠিয়ে দিতাম!’ রঘু তখন প্রভু জগন্নাথের এই অদ্ভুত লীলা সবিস্তারে বললো । সেখানে উপস্থিত সবাই প্রভুর রম্য এই লীলা শুনে খুবই আনন্দ পেল এবং সকলেই হাসতে লাগল। তাঁরা রঘুর সৌভাগ্যর জন্য তাঁর গুনগান করলেন।কারন জগতের নাথের ভক্তের প্রতি এই সখা ভাব খুবই দুর্লভ।অনেক সৌভাগ্য এবং পূর্ব জন্মের পুন্যর ফল হিসেবে এই অতি সাধারণ বালক জগন্নাথদেবকে তার সখা রূপে পেয়েছে।

 

পরবর্তী পর্বে অন্য এক ভক্ত এবং এবং তার ভগবানের আরো একটি অদ্ভুত লীলা নিয়ে আলোচনা করবো। পড়তে থাকুন।4

ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।