পুরানের দেব দেবী – বিশ্বকর্মা
পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক
আজ সারা বাংলা তথা সারা দেশে
মহাসমারোহে অনুষ্ঠিত হবে বিশ্বকর্মাপূজা|
আসুন আজকের এই পবিত্র দিনে জেনে নেই দেব শিল্পী বিশ্বকর্মার আধ্যাত্মিক স্বরূপ ও তার সাথে জড়িত কিছু পৌরানিক ঘটনা|
বিশ্বকর্মা মূলত বৈদিক দেবতা|ঋগ বেদ সহ একাধিক ধর্ম গ্রন্থে এবং রামায়ন মহাভারতের মত মহাকাব্যে উল্লেখ রয়েছে বিশ্বকর্মার|তিনি ব্রহ্মা সৃষ্টি কর্মের অন্যতম সহযোগী|সৃষ্টির একদম আদি লগ্ন থেকে বিভিন্ন সৃষ্টি কর্মের মাধ্যমে তিনি জগৎ নির্মাণের কাজে যুক্ত|বিশ্বকর্মার পুত্র বিশ্বরূপকে ইন্দ্র বধ করেছিলেন এবং ইন্দ্র ও বিশ্বকর্মার শত্রুতাও দেখা দিয়েছিলো|যদিও নিজের কর্তব্যে সদা অবিচল বিশ্বকর্মা এবং নিজের সৃষ্টিকর্মে সর্বদা মগ্ন তিনি|
আমাদের সনাতন ধর্মে ভগবান বিষ্ণু তার সৃষ্টি কর্মের এক একটি গুরু দায়িত্ব তুলে দিয়েছেন এক একজন দেবতার উপর যেমন বাণিজ্যর ভার দেবী লক্ষীর উপর, শিক্ষা ও সংস্কৃতির দায়িত্ব স্বরস্বতীর আবার প্রতিরক্ষার দায়িত্বে রয়েছেন দেবী দূর্গা|এদের মধ্যে বিশ্বকর্মা হলেন স্থাপত্য ও নির্মাণের দেবতা|তিনি দেব শিল্পী|
পুরান অনুসারে দেবগুরু বৃহস্পতির একমাত্র বোন যোগসিদ্ধার পুত্র বিশ্বকর্মা এবং তাঁর বাবা অষ্টম বসুর শ্রেষ্ঠ বসু প্রভাস। আবার ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণে বলা আছে, প্রজাপতি ব্রহ্মার নাভিকোষ থেকে বিশ্বকর্মার উৎপত্তি।বিশ্বকর্মার স্ত্রীর নাম ঘৃতচী।
বিশ্বকর্মা চতুর্ভুজ এবং তাঁর বাহন হাতি। পুরাণ মতে, বিশ্বকর্মা মহাবীর তাকে বহন করার জন্য প্রয়োজন প্রচুর শক্তি তাই জগতের অন্যতম বলশালী প্রাণী হাতিকে তার বাহন রূপে
নির্বাচিত করা হয়েছে।
পুরান ও অন্যান্য শাস্ত্রে বর্ণিত একাধিক অস্ত্র, ও গুরুত্বপূর্ণ বস্তুর প্রধান কারিগর বিশ্বকর্মা|বিষ্ণুর সুদর্শন চক্র, কুবেরের পুস্পক রথ, শিবের ত্রিশূল
পরশুরামের ধনুক, ইন্দ্রের প্রথম বজ্র এসবই বিশ্বকর্মার সৃষ্টি|রাবনের লংকা নগরী, কুবেরের অলোকা পুরী,এমনকি পুরীর বিখ্যাত জগন্নাথ বিগ্রহও বিশ্বকর্মার স্বহস্তে নির্মিত|
যখনই দেব লোকে কোনো বিশেষ স্থাপত্য বা দৈব নিদর্শন সৃষ্টির প্রয়োজন হয় ডাক পড়ে বিশ্বকর্মার|কখনো নিরাশ করেন না বিশ্বকর্মা|নিজের অলৌকিক শিল্প সত্ত্বা ও কঠোর পরিশ্রমের দ্বারা নির্মান করেন একের পর এক শিল্প কর্ম তথা স্থাপত্য শিল্পের সর্বশ্রেষ্ঠ নিদর্শনগুলি|
বিশ্বকর্মা পুজো নিষ্ঠা সহকারে পালন করেন দেশের শিল্পীরা, শ্রমিকরা এবং স্থাপত্য শিল্পের সাথে যুক্ত শ্রমিকেরা|আজ ভাদ্র সংক্রান্তি তার পুজোর দিন। সবাইকে জানাই বিশ্বকর্মা পুজোর শুভেচ্ছা এবং অভিনন্দন।
ফিরে আসবো ধারাবাহিক এই আলোচনার পরবর্তী পর্ব নিয়ে আগামী দিনে।থাকবে অন্য
এক দেবতা বা দেবীর কথা।পড়তে থাকুন।
ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।