শিব মাহাত্ম – বাবা পঞ্চমুখী শিব ধাম
পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক
শ্রাবন মাস শিবের মাস। এই মাসে আমি সাধারণত শিব নিয়েই আলোচনা করে থাকি। আজ শ্রাবনের সোমবার আবার শুরু করছি শিব মহাত্ম নিয়ে ধারাবাহিক আলোচনা। আজকের পর্বে আপনাদের পুরুলিয়ায় অবস্থিত এমন এক প্রাচীন শিব মন্দিরের কথা জানাবো যেখানে শিবের একটি ব্যতিক্রমী রূপ দেখতে পাওয়া যায়। পুজো পদ্ধতিও একটু আলাদা।
পুরুলিয়ায় কংসাবতী নদীর উত্তরপাড়ে অবস্থিত ‘বাবা পঞ্চমুখী ধাম’। শোনা যায় মহাভারতের যুগে পান্ডবদের সময়কাল থেকে এই মন্দিরের অস্তিত্ব রয়েছে । এই মন্দিরের সঠিক বয়স সম্বন্ধে কারুরই কোনো ধারণা নেই। এই মন্দিরে অধিষ্ঠান রয়েছে চতুর্মুখী একটি শিবলিঙ্গের কিন্তু এখানে শিব পূজিত হন পঞ্চমুখী রূপে কারণ শিবের পঞ্চম তম মুখটি পুরোহিত নিজের মুখ হিসাবে পরিকল্পনা করেইপূজা করে থাকেন।যুগ যুগ ধরে চলে আসছে
এই প্রথা।
শাস্ত্রে পঞ্চমুখি শিব কে পাঁচটি তত্ত্বর প্রতীক রূপে দেখা হয় আবার অনেকের কাছে পঞ্চমুখি সদাশিব শিবের পঞ্চাক্ষরি মন্ত্রের প্রতিনিধিত্ব করছে।শিবের এই রূপকে পঞ্চানন্দ ও বলা হয়। প্রতিটি মুখের রয়েছে নিজস্ব নাম। নামগুলি যথাক্রমে ইশানা, তৎপুরুষ,অঘোর,বাম দেব এবং ব্রম্হা বা সদ্যজাত।আবার অনেকে মনে করেন এই পাঁচটি মুখ পাঁচটি গুনের প্রতিনিধিত্ব করে জথা সৃষ্টি, সংরক্ষণ, ধ্বংস, গোপনীয়তা এবং অনুগ্রহ।
হিন্দু সনাতন ধর্মে একাধিক দেব দেবীর পুজোর প্রচলন থাকলেও মানুষের মধ্যে ভগবান বসবাস করেন এমনটাই বিশ্বাস রয়েছে। মানুষের মধ্যে যে সত্যিই যে ঈশ্বর বিরাজমান সেই তত্বকে এই মন্দিরে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে তাই শিব মূর্তির মধ্যে নিজের প্রতিচ্ছবিকে কল্পনা করে পুজো করেন পুরোহিত। ভক্ত ও ভগবান এই ভাবে এখানে মিলে মিশে একাকার হয়ে যায়। এই পুজো পদ্ধতি সম্ভবত বাংলা তথা দেশের আর কোনো শিব মন্দিরে দেখা যায়না সেদিক দিয়ে পঞ্চ মুখী শিব ধাম অনন্য এক শিব মন্দির এবং তার গুরুত্ব অপরিসীম।
পঞ্চ মুখী শিব ধামে সারা বছর দর্শণার্থীরা আসেন তবে চৈত্র মাস এবং শ্রাবন মাসে বহু দুর দূরান্ত থেকে ভক্তদের সমাগম হয় এই মন্দিরে। ভক্তদের বিশ্বাস বাবা পঞ্চমুখী শিব ভক্তদের সমস্ত মনোবাসনা পূরণ করে থাকেন এবং কাউকেই খালি হাতে ফেরান না কারন তিনি পরম দয়াময়।
শ্রাবন মাস জুড়ে বাংলার এমন বহু শিব মন্দির নিয়ে ধারাবাহিক ভাবে আলোচনা করবো।
ফিরে আসবো শিব মাহাত্ম নিয়ে
আগামী পর্বে। পড়তে থাকুন।
ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।