বৃহস্পতিবার ও দেবী মহালক্ষী (পর্ব – এক)

787

হাজার পেশাগত ব্যস্ততার মাঝে সময় বার করে নিয়মিত লেখা লেখি চালিয়ে যাচ্ছি আপনাদের দাবী মেনে|শক্তি পীঠ নিয়ে নিয়মিত লেখা লেখি চলছে তার পাশাপাশি চলছে ভারতের সাধকদের নিয়ে ধারাবাহিক লেখনী|সেই সাথে নব সংযোজন হিসেবে এবার থেকে থাকবে আমাদের নবগ্রহ নিয়ে আমার একটি বিশেষ ধারাবাহিক প্রতিবেদন|যেখানে থাকবে আমাদের গ্রহ গুলির আধ্যাত্মিক স্বরূপ নিয়ে আলোচনা|প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ আধ্যাত্মিক ও ধর্মীয় উৎসব নিয়ে যেমন আমি লিখে থাকি তেমনই আজ শুরু করছি একটি একটি বিশেষ বার বা দিন নিয়ে লেখা, প্রথম পর্বে আজ লিখবো বৃহস্পতিবার নিয়ে, তার আধ্যাত্মিক ও জ্যোতিষ সংক্রান্ত তাৎপর্য ব্যাখ্যা করবো আজকের পর্বে এবং এই আলোচনা হবে দুটি পর্বে|আজ প্রথম পর্ব|

আমাদের জ্যোতিষ শাস্ত্রে বৃহস্পতি অত্যান্ত ক্ষমতাবান ও প্রভাবশালী একটি গ্রহ|বৃহস্পতি ঐশর্য, সম্পদ, শিক্ষা ও আধ্যাত্মিকতার কারক গ্রহ|মূলত শুভ গ্রহ হিসাবে বৃহস্পতিকে দেখা হলেও ফলাফল নির্ভর করে তার অবস্থান ও কারকতার চুলচেরা বিশ্লেষনের উপর|তাই কোনো জাতক জাতিকার জীবনে বৃহস্পতির প্রভাব কেমন হবে তা জন্ম ছক বিচার করে কেবল মাত্র একজন অভিজ্ঞ জ্যোতিষীই বলতে পারে|

আধ্যাত্মিক ভাবে দেখতে গেলে বৃহস্পতিবার হলো লক্ষী বার এই দিনটি দেবী লক্ষীর দিন|সনাতন ধর্মে দেবী লক্ষী অর্থ, সম্পদ ও আধ্যাত্মিকতার দেবী|তিনি স্বয়ং বিষ্ণুর শক্তির আধার|সনাতন ধর্ম মতে এই দিন লক্ষীর আরাধনার মাধ্যমে তাকে সন্তুষ্ট করলে ধন, ঐশর্য ও আধ্যাত্মিক শান্তি লাভ করা যায়|সেই পুরাকাল থেকেই গৃহ কল্যাণের উদ্দেশ্যে বৃহস্পতিবার লক্ষী পুজোর প্রথা প্রচলিত রয়েছে যা হয়তো আমরা অনেকেই মেনে চলি|তবে সঠিক পদ্ধতি না মানলে, উপযুক্ত রীতি নীতি না অনুসরণ করলে কোথাও একটা খামতি থেকে যায়|তাই আমি মনে করি আগে এই দিনটির আধ্যাত্মিক তাৎপর্য বিশদে জেনে রাখা ভালো|

দেবী লক্ষ্মীর ব্রতকথাগুলির মধ্যে “বৃহস্পতিবারের ব্রতকথা” সবচেয়ে জনপ্রিয়|বহু গৃহে ও মন্দিরে প্রতি বৃহস্পতিবার লক্ষ্মীর সাপ্তাহিক পূজা হয়ে থাকে|বৃহস্পতিবারের লক্ষ্মীব্রত ও পূজা প্রচলন সম্পর্কে আমাদের শাস্ত্রে একটি লৌকিক গল্পর উল্লেখ রয়েছে|

এক দোলপূর্ণিমার রাতে নারদ বৈকুণ্ঠেলক্ষ্মী ও নারায়ণের কাছে গিয়ে মর্ত্যের অধিবাসীদের নানা দুঃখকষ্টের কথা বললেন। প্রথমে লক্ষ্মী মানুষের নিজেদের কুকর্মের ফলকেই এই সব দুঃখের কারণ বলে চিহ্নিত করলেন।কিন্তু নারদের অনুরোধে মানুষের দুঃখকষ্ট ঘোচাতে তিনি স্বয়ং মর্ত্যলোকে লক্ষ্মীব্রত প্রচার করতে এলেন|

সেই সময়ে অবন্তী নগরে ধনেশ্বর নামে এক ধনী বণিক বাস করতেন। তার মৃত্যুর পর তার ছেলেদের মধ্যে বিষয়সম্পত্তি ও অন্যান্য ব্যাপার নিয়ে ঝগড়া চলছিল|একদিকে বাড়তে থাকা দারিদ্র অন্যদিকে গৃহে সর্বক্ষণ অশান্তি|আর সহ্য করতে না পেরে ধনেশ্বরের বিধবা পত্নী সেই ঝগড়ায় অতিষ্ঠ হয়ে বনে আত্মহত্যা করতে এসেছিলেন|সেই সময় তাকে দেখা দিলেন
মা লক্ষ্মী এবং তাকে বৃহস্পতিবার লক্ষ্মীব্রত করার উপদেশ দিয়ে ফেরত পাঠালেন|ধনেশ্বরের স্ত্রী নিজের পুত্রবধূদের দিয়ে লক্ষ্মীব্রত করাতেই তাদের সংসারের সব দুঃখ ঘুচে গেল। ফলে লক্ষ্মীব্রতের কথা অবন্তী নগরে প্রচারিত হয়ে গেল
এবং দেখতে দেখতে বৃহস্পতিবারের লক্ষী ব্রতর মাহাত্ম প্রচারিত হলো সমগ্র মর্ত লোকে|

আজও চলছে এই পরম্পরা|কিভাবে সঠিক প্রথা মেনে বৃহস্পতিবার এই পূজা করলে লক্ষীর সম্পূর্ণ কৃপা লাভ করা যায় তা জানাবো আগামী পর্বে তার সাথে থাকবে বৃহস্পতিবার সম্পর্কে আরো অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ও আধ্যাত্মিক বিশ্লেষণ|পড়তে থাকুন|ভালো থাকুন|ধন্যবাদ|