কালী কথা – বয়রা কালীর পুজো
পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক
আসন্ন ফলহারিণী অমাবস্যা উপলক্ষে সেজে উঠছে বাংলার প্রায় প্রতিটি কালী মন্দির কারন এই তিথি কালী সাধনা এবং তন্ত্র সাধনার অন্যতম শ্রেষ্ঠ তিথি।বাংলার এমনই এক প্রাচিন এবং অতি জাগ্রত কালী মন্দির উত্তর দিনাজপুরের বয়রা কালীর মন্দির যা নিয়ে আজকের কালী কথা।
বলা হয় যারা এই বয়রা কালীমন্দিরে একবার ঘুরে গিয়েছেন এবং পুজো দিয়েছেন তারা বারবার এখানেই ছুটে আসেন নিজেদের মনোস্কামনা নিয়ে এবং বয়রা কালী মন্দিরে এলে সব মনস্কামনা পূরণ হয়ে যায়।
এই মন্দিরের এই সুদীর্ঘ ইতিহাস আছে
এখন যেখানে মন্দির আছে এককালে শ্রীমতি নদী।এই স্থান দিয়ে বয়ে যেতো এখন আর নদীর সেই গতি নেই। কিন্তু, একটা সময় এই শ্রীমতি নদী দিয়েই চলত ব্যাপক আকারে পণ্য পরিবহণ। বড় আকারের বাণিজ্য নৌকো নিয়েই শ্রীমতি নদী ধরে দূর-দূরান্তে যেতেন ব্যবসায়ীরা। সেই সময়ে নদী পথেই হতো বাণিজ্য।নদীতে ছিলো জল দস্যুর ভয়। এছাড়া বন্যা প্রাণী এবং ঝড় ঝঞ্জা তো ছিলই।
এসব বিপদ থেকে রক্ষা পেতে পথে বয়রা গাছের নীচে দেবী কালীর মন্দিরে বণিকরা পুজো দিতেন। দেবীর নাম তাঁরাই দেয় বয়রা কালী।
পরবর্তী সময়ে ধীরে ধীরে মজে যেতে শুরু করে শ্রীমতি নদী। এই নদীপথ দিয়ে বাণিজ্যযাত্রা ক্রমশ কমে যায়। দেবী বয়রা কালী ও সংলগ্ন অঞ্চল ধীরে ধীরে পরিণত হয় ঘন জঙ্গলে। যাতে ঢাকা পড়ে কালী মন্দির। সেখানে বণিকদের বদলে যাতায়াত শুরু করে ডাকাতরা। এই জঙ্গল পরিণত হয় ডাকাতদের অঞ্চলে। কিন্তু, সেই ডাকাতরাও দেবী বয়রা কালীর পুজো চালিয়ে যাওয়া শুরু করেন।সেদিক দিয়ে এই কালীকে ডাকাত কালীও বলা যায়।
পরবর্তী কালে বিশেষ করে ব্রিটিশ আমলে সাধারণ মানুষ নতুন করে এই মন্দিরে আসতে শুরু করেন।নানারকম মনস্কামনা পূরণ হওয়ায় দেবী বয়রা কালীর খ্যাতি ক্রমশ ছড়িয়ে পড়ে।ব্রিটিশ সরকারের দ্বারা নিযুক্ত এক দারোগা সেই সময়ের বয়রা কালীর পুজোর দায়িত্ব নেন।
তারপর সমাজের বিভিন্নস্তরের মানুষের চেষ্টায় আবার নতুন করে মন্দির তৈরী হয়। নিয়মিত পুজো শুরু হয়।
বর্তমানে প্রতি দীপান্বিতা অমাবস্যায় সাড়ম্বরে দেবীর পুজো হয়।বছরের বাকি অমাবস্যাগুলিতেও বিশেষ পুজোর আয়োজন করা হয়।
এই মন্দিরে রয়েছে দেবী বয়রার অষ্টধাতুর মূর্তি। বিশেষ তিথিগুলিতে সোনার অলঙ্কারে দেবী কে সাজানো হয়। বয়রা কালীর অলৌকিক মাহাত্ম্যের কথা ভক্তদের মুখে মুখে ফেরে।
বাংলার এমন সব প্রাচীন কালী মন্দিরের ইতিহাস নিয়ে চলতে থাকবে কালী কথা। আবার যথা সময়ে ফিরে আসবো।পরবর্তী পর্ব নিয়ে।
পড়তে থাকুন।ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।