আজকের একান্ন পীঠ পর্বে আলোচনা করবো শক্তিপীঠ গুহ্যেশ্বরী নিয়ে এই মন্দিরটি নেপালের কাঠমাণ্ডুতে অবস্থিত।
পুরান মতে গুহ্যেশ্বরী মন্দিরটি যেখানে অবস্থিত, সেখানে দেবীর যোনি পতিত হয়েছিল।
গুহ্য শব্দের মানে ‘যোনি’ আর ঈশ্বরী হলেন ‘দেবী’। মন্দিরের অভ্যন্তরে একটি কলস দেবী রূপে পূজিত হন। কলসটি স্বর্ণ ও রৌপ্য এর স্তর দ্বারা আবৃত। মূল মন্দিরটি একটি খোলা প্রাঙ্গণের কেন্দ্রে অবস্থিত।মন্দিরের চূড়ায় চারটি সোনালি সর্প আছে।মন্দিরের দেবী গুহ্যকালী নামেও পরিচিতা।
মনে করা হয় গুহ্যেশ্বরী মন্দিরটি পশুপতিনাথ মন্দিরের শক্তির উৎস । সতেরশ শতকে নেপালের রাজা প্রতাপ মল্ল মন্দিরটি নির্মাণ করেন।
সংস্কৃত শব্দ ‘গুহ্য’ ও ‘ঈশ্বরী’ সন্ধিযুক্ত হয়ে গুহ্যেশ্বরী নামটি গঠন করেছে। ব্রহ্মাণ্ড পুরাণ এর ললিতা সহস্রনাম অধ্যায়ের ললিতা দেবীর উল্লিখিত সহস্র নামের মধ্যে ৭০৭ তম নামটি হচ্ছে “গুহ্যরূপিণী” যার অর্থ যে দেবীর মাহাত্ম্য মানুষের উপলব্ধির বাইরে এবং যা গুপ্ত। মতান্তরে নামটি ষোড়শী মন্ত্রের ষোড়শ অক্ষর হতে উদ্ভূত। কিছু শাস্ত্রজ্ঞ মনে করেন যোনি নয় দেবীর হাঁটু এই স্থানে পড়েছিল।
গুহ্যেশ্বরী মন্দিরের শক্তি হলেন ‘মহাশিরা’ আর দেবীর ভৈরব হলেন ‘কাপালী’। এই মন্দিরটি তান্ত্রিকদের কাছে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ এবং এখানে বিবিধ তান্ত্রিক ক্রিয়া অনুষ্ঠিত হয়। তন্ত্রশক্তি লাভের জন্য এই মন্দিরটিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান হিসেবে কালীতন্ত্র, চণ্ডীতন্ত্র ও শিবতন্ত্ররহস্য গ্রন্থে উল্লেখ করা হয়েছে।
শুধু হিন্দু নয় বৌদ্ধদের কাছেও এই দেবীর বিশেষ মাহাত্ম রয়েছে।বজ্রযান বৌদ্ধগণ দেবী গুহ্যেশ্বরীকে বজ্রবরাহী রূপে পুজো করেন।
প্রায় সারা বছর এখানে দর্শণার্থীদের ভিড় লেগে থাকে এবং বিজয়া দশমী ও নবরাত্রির সময় মন্দিরে প্রচুর ভক্ত ও দর্শনার্থীর সমাগম হয়।
আবার আগামী পর্বে ফিরে আসবো অন্য একটি শক্তিপীঠ নিয়ে। থাকবে আধ্যাত্মিক এবং পৌরাণিক ব্যাখ্যা। পড়তে থাকুন।
ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।