কালী কথা – বাহাদুরপুরের খ্যাপামা

219

আজ বর্ধমানের এমন এক প্রাচীন কালী পুজো নিয়ে লিখবো যেখানে আজও পঞ্চমুণ্ডির আসনে পূজিত হন দেবী কালী। বর্ধমানের গ্ বাহাদুরপুর গ্রামের এই কালী খ্যাপামা নামেই বেশি জনপ্রিয়।প্রায় তিনশো বছর আগে এই অঞ্চলে ঘন জঙ্গলের ভিতরে শ্মশানে বাস করতেন এক সাধক। তিনিই জঙ্গলের ভিতর খ্যাপামার প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। পঞ্চমুণ্ডির আসনে রেখে দেবীর পুজো হত। তার অবর্তমানে তার নির্দেশেই এক শিষ্য পুজোর দায়িত্ব নেন। পরবর্তীতে সেই সাধক খ্যাপামাকে বাহাদুরপুর গ্রামে এনে তার পুজো শুরু করেছিলেন।যার মাধ্যমে দেবীর বাহাদুর পুরে আগমন সেই সাধকের পরিবারের এক সদস্য খ্যাপামার পুজোর জন্য নয় বিঘা জমি দান করেছিলেন।জন্ম সূত্রে সেই সাধকের পরিবার হল এই পুজোর বর্তমান সেবাইত।ইতিহাস অনুসারে বাহাদুরপুরে আনার পর একটি গাছের তলায় প্রথমে দেবীকে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। তার পর মাটির মন্দির তৈরি করে সেখানে দেবীর পুজো শুরু হয় । পরবর্তীতে অন্যত্র মন্দির স্থানান্তরিত হয় তবে যে জায়গায় দেবীকে প্রথম এনে রাখা হয়েছিল সেখানে এখনও ঘট এনে প্রথম পুজো করা হয়। তার পর মূল মন্দিরে পুজো শুরু হয়।প্রাচীন রীতি মেনে আজও পঞ্চমুণ্ডির আসনে পুজো হয় বাহাদুরপুরের খ্যাপামার।দেবীর কাছে অনেকে অনেকে মানত করেন এবং দেবী খুবই জাগ্রতা। তিনি ভক্তদের সব মনোস্কামনা পূর্ণ করেন বলে বিশ্বাস।কৌশিকী অমাবস্যা সহ প্রতি অমাবস্যায় গভীর রাতে দেবীর পুজো হয়।এখানে বলী প্রথা আছে।পুজোয় যে ছাগ প্রথমে বলি দেওয়া হয় সেই ছাগের মাংসের কিছুটা অংশ রান্না করে দেবীকে ভোগ দেওয়া হয়। এই প্রথা এখনও চলে আসছে।খ্যাপামার পুজোয় এক কুইন্টাল পাঁচ কেজি আতপ চালের নৈবেদ্য দেওয়া হয়। সেই সঙ্গে পাঁচ কেজি চালের ভাত, বিভিন্ন পদের রান্না দিয়ে ভোগ দেওয়া হয়। সঙ্গে ৫ কেজি আটার লুচি দিয়ে ভোগে দেওয়া হয়। পুজোয় লাগে বেসনের ফুলুরি, মুড়কি, নাড়ু ইত্যদি।পুজোর দিন তিন হাজার মানুষকে পদ্ম পাতায় ভোগ খাওয়ানোর রেওয়াজ এখনও রয়েছে।আসন্ন কৌশিকী অমাবস্যা উপলক্ষে চলতে থাকবে ধারাবাহিক কালী কথা।মনে রাখবেনএই কৌশিকী অমাবস্যা গ্রহ দোষ খন্ডনের শ্রেষ্ঠ তিথি। ফিরে আসবো আগামী দিনে।নতুন পর্ব নিয়ে।পড়তে থাকুন।ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।