কালী কথা – চাঁচলের ঐতিহাসিক কালী দৌড়

111

কৌশিকী অমাবস্যা উপলক্ষে ধারাবাহিক ভাবে চলছে কালী কথা। আজ অবধি এই কালী কথা অনুষ্ঠানে বহু ঐতিহাসিক কালী মন্দির এবং অলৌকিক ঘটনার কথা বলেছি। আজ এমন এক কালী পুজোর কথা লিখবো যা বিখ্যাত একটি অদ্ভুত রীতির জন্য যাকে লোকে বলে কালী দৌড়।সে প্রায় তিনশো বছর আগেকার কথা।মালদার চাঁচল রাজার উদ্যোগে মালতীপুরে শুরু হয় কালীদৌড়। আগে এখানে কালীপুজো হত দুটি। একটি পুজো হত স্থানীয় জমিদারের উদ্যোগে। অন্যটি মিলিতভাবে করতেন গোটা এলাকার বাসিন্দারা। একসময় রাজার খেয়াল হল ওই দুই কালীপুজোর উদ্যোক্তাদের কাঁধে দেবী প্রতিমাকে নিয়ে দৌড়তে হবে। আর রাজা বসে সেই দৌড় দেখবেন। দেবী প্রতিমাকে নিয়ে দৌড়ে যারা জয়ী হবেন তাদের পুরস্কৃত করবেন স্বয়ং রাজা। সেই থেকে শুরু।আজও চলছে কালীদৌড় প্রথা।তবে অনেকের মতে এই রীতির পিছনে লুকিয়ে আছে এক ভিন্ন ইতিহাস। আজ থেকে প্রায় সাড়ে তিনশো বছর আগে মালদার চাঁচলের তৎকালীন রাজা শরৎচন্দ্র রায় চৌধুরী চালু করেছিলেন এই কালী দৌড় প্রতিযোগিতা কারন সেই সময় মালদার মালতীপুর এলাকায় পুকুরের সংখ্যা ছিল একটিমাত্র।সেই পুকুরে বিসর্জন দেওয়া হত একাধিক কালী প্রতিমাকে।কার প্রতিমা আগে বিসর্জন হবে সেই নিয়ে বিতর্ক লেগেই থাকতোতাই রাজা শরৎচন্দ্র রায় বাহাদুর সুষ্ঠুভাবে প্রতিমা নিরঞ্জন প্রক্রিয়া করার জন্য শুরু করেছিলেন এই প্রতিযোগিতা।এক দীপান্বিতা অমাবস্যার পরের দিন সন্ধ্যার সময় মালতিপুর বাজারে একটি কালী দৌড় প্রতিযোগিতার আয়োজন করেন তিনি। এই প্রতিযোগিতার নিয়ম ছিল এই কালী দৌড়ে যার কালী প্রতিমা অক্ষুন্ন থাকবে সেই প্রতিমাকেই প্রথম বিসর্জন দেওয়া হবে কালী দিঘিতে। সেই দৌড়ের রীতি চলে আসছে আজও।বর্তমানে এই এলাকায় ছোটো বড়ো মিলিয়ে মোট আটটি কালী পুজো হয়। পুজো কমিটি এবং এলাকাবাসী একত্রিত হয়ে কালী প্রতিমাকে কাঁধে নিয়ে ছোটেন ঘাটের দিকে।নিদ্দিষ্ট সময়ে পূর্ব নির্ধারিত মালতিপুর কালীবাড়ি লাগোয়াপ্রাচীন কালী দীঘিতে বিসর্জন হয় ।এই প্রতিযোগিতার আবহ উপভোগ করতে ভিড় বহু দর্শণার্থী।নিঃসন্দেহে ব্যাতিক্রমী এবং ঐতিহ্য সম্পন্ন এই প্রতিযোগিতা এই কালী পুজোয় অন্যএক মাত্রা যোগ করে এবং অদ্ভুত এক পরিবেশ সৃষ্টি হয়।আসন্ন কৌশিকী অমাবস্যা উপলক্ষে চলতে থাকবে ধারাবাহিক কালী কথা।মনে রাখবেনএই কৌশিকী অমাবস্যা গ্রহ দোষ খন্ডনের শ্রেষ্ঠ তিথি। ফিরে আসবো আগামী দিনে।নতুন পর্ব নিয়ে।পড়তে থাকুন।ভালো থাকুন।ধন্যবাদ।