কালী কথা – গগন ডাকাতের কালী পুজো

137

বাংলার প্রাচীন কালী পুজো গুলির মধ্যে
বেশ কিছু পূজোর সাথে জড়িয়ে আছে এক কালের দুর্ধর্ষ ডাকাতদের নাম। এমনই এক ঐতিহাসিক পুজো হুগলীর গগন ডাকাতের পুজো।
আজকের পর্বে এই গগন ডাকাতের পুজো
নিয়ে।

সময় টা স্বাধীনতার অনেক আগের তখন ঘন জঙ্গলে পরিপূর্ণ ছিল হুগলী জেলার বিস্তীর্ণ অঞ্চল সেই জঙ্গল দাপিয়ে বেড়াতো ডাকাত আর বন্যা হিংস্র জন্তু। এই জঙ্গলে ডাকাতরা ঘট প্রতিস্থাপন করে মা কালী পুজো করতেন। তখনো দেবী কালীর পুজো সেই ভাবে মধ্য বিত্ত গৃহস্ত বাঙালি বাড়িতে সেই জনপ্রিয়তা পায়নি।দেবী কালীর পুজোর করতো তন্ত্র সাধকরা এবং দুস্যু দল।
ডাকাত গগনের ছিলো বিরাট দল। সে ছিলো বেজায় কালী ভক্ত। প্রতিটি ডাকাতির আগে সে ভক্তিভরে কালী পুজো করতো।

স্বাধীনতা পরবর্তীতে ডাকাত দলের দাপট কমে এবং ডাকাত দের কালী পুজোও কমে আসে। শোনা যায় কিছুকাল পরিত্যক্ত অবস্থায় থাকার পর দেবী একই সাথে প্রায় একই সময়ে স্বপ্নাদেশ দেন স্থানীয় দুজনকে একজনকে বলেন মূর্তি তৈরি করতে ও অন্যজনকে বলেন মন্দির তৈরি করতে। মন্দির তৈরি করতে বলেন বর্ধমানের মহারাজা কে আর মূর্তি করতে বলেন এক প্রভাবশালী মোড়লকে।স্বপ্নাদেশ অনুসারে মন্দির তৈরী করে দেবী মূর্তি স্থাপন করে আবার ধুমধাম করে শুরু হয় কালী পুজো।

শোনা যায় গগন ডাকাতের সময়ে এখানে স্বয়ং মা সারদার পদধূলি পড়েছিলো। ডাকাত দল সারদাদেবীকে চাল কলাই ভাজা খেতে দেয়। পরিবর্তিতে সারদার মধ্যে তারা মা কালীকেও দর্শন করেন এবং তাকে প্রণাম করে তার আশীর্বাদে পায় এবং নিজেরা গিয়ে তাকে গন্তব্যে পৌঁছে দেয়।

গগন ডাকাতের কালী পুজোয় চার প্রহরে চারবার পুজো হয় ।রয়েছে পশু বলি প্রথা। মায়ের ঘটে জল বছরে একবারই পাল্টানো হয়। বাগদীদের দেওয়া জল মায়ের ঘটে দেওয়া হয়। ঘট পাল্টানোর সময় কোন মহিলা মন্দিরের ভেতর থাকে না শুধুমাত্র পুরুষেরাই থাকেন।

প্রত্যেক অমাবস্যায় বিশেষ হোম যজ্ঞ এবং বিশেষ
পুজোর ব্যাবস্থা হয়। যার মধ্যে কৌশিকী অমাবস্যা অন্যতম। কৌশিকী অমাবস্যার আর বেশি দেরি নেই। নতুন সাজে সেজে উঠবে বাংলার এই
প্রাচীন কালী ক্ষেত্রে।

আসন্ন কৌশিকী অমাবস্যা উপলক্ষে চলতে থাকবে ধারাবাহিক কালী কথা।ফিরে আসবো এমনই কোনো ঐতিহাসিক পুজোর কথা নিয়ে।
থাকবে কিছু অলৌকিক ঘটনা।
পড়তে থাকুন।ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।