কালীকা পুরান – অর্ধনারীশ্বর রূপ

519

বিভিন্ন পুরাণ ও প্রাচীন ধর্ম গ্রন্থে অর্ধনারীশ্বর রূপ নিয়ে রয়েছে মতভেদ এবং নানা রকম ব্যাখ্যা আজকের পর্বে লিখবো অর্ধনারীশ্বর রূপ সংক্রান্ত বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পৌরাণিক তথ্য ও তার ব্যাখ্যা নিয়ে|শিবের বাহন ভৃঙ্গীর একবার ইচ্ছে হয়েছিল তার আরাধ্য শিবকে প্রদক্ষীণ করার। কিন্তু তাতে বাধ সাধলেন পার্বতী। তিনি তাঁর স্বামীর কোলে বসে থাকায় শিবকে প্রদক্ষীণ করতে পারলেন না ভৃঙ্গী কারন তিনি শুধু শিবকে প্রদক্ষিণ করবেন|উপায় না দেখে ভৃঙ্গী মাছির রূপ নিয়ে শিবকে প্রদক্ষীণ করার চেষ্টা করলেন। তখন পার্বতী তাঁর এবং শিবের মধ্যে সব ব্যবধান ঘুচিয়ে মিলে গেলেন মহেশ্বরের শরীরের সঙ্গে।সৃষ্টি হলো অর্ধনারীশ্বর রূপ|নারী শক্তির কাছে সেবার মাথা নত করতে হয়েছিলো শিবভক্ত ভৃঙ্গীকে|সেই রুপই অর্ধনারীশ্বর রূপ|বৈদিক একটি ব্যাখ্যাও আছে এই বিষয়ে|সৃষ্টির সূচনা লগ্নে ব্রহ্মার খেয়াল হয় যে জগত তো সৃষ্টি হয়েছে কিন্তু প্রান চাই, আরো সৃষ্টি চাই ভাবতে ভাবতে আচমকাই তাঁর চোখের সামনে ভেসে মহেশ্বরের আকার, যাঁর এক অংশ পুরুষের এবং বাকি অর্ধেক অংশ নারীর। এই দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে ব্রহ্মা নিজেকে দু’ভাগে বিভক্ত করে ফেললে তার ডান দিকের অংশ থেকে জন্ম নিল পুরুষ লিঙ্গের সব প্রাণী এবং বাঁ দিক থেকে জন্ম নিল সব প্রাণীর নারী লিঙ্গ।অর্থাৎ সৃষ্টিকে পথ দেখিয়েছিলো অর্ধ নারীশ্বর রূপ|ভিন্ন একটি পৌরাণিক ব্যাখ্যাও আছে,শোনা যায় একবার শিবের জটায় গঙ্গাকে অবস্থান করতে দেখে ক্রোধে উন্মত্ত হয়ে ওঠেন পার্বতী। তাঁকে শান্ত করার জন্যে পার্বতীর শরীরের সঙ্গে নিজেকে মিশিয়ে দেন মহেশ্বর। একাংশে বর্তমান থাকে শিবের উপস্থিতি, অন্য অংশে বিরাজ করেন নারী শক্তি পার্বতী।শিব বুঝিয়ে দেন শিব ও পার্বতী এক এবং অভিন্ন|তারা আলাদা নন|সনাতন ধর্মে স্ত্রী সব সময়ে স্বামীর বাঁ-দিকে অধিষ্ঠান করেন। এই সব মেনেই অর্ধনারীশ্বরের নারী শক্তির স্থান বাঁদিকে। শুধু মহেশ্বরই নন, বিষ্ণুও যখন অর্ধনারীশ্বর অবতারে আবির্ভূত হন, তখন তাঁর বাঁদিকেই জায়গা হয় দেবী লক্ষী বা শ্রীরাধিকার, এটাই রীতি|বিজ্ঞান অনুসারে হৃদয়ের সাথে সম্পর্ক রয়েছে শরীরের বা দিকের এবং মস্তিস্ক ডান দিকের সাথে যুক্ত|বুদ্ধি এবং আবেগ নিয়ন্ত্রিত হয় যথাক্রমে মস্তিস্ক ও হৃদয় দিয়ে|সহজ ভাষায় বলা যায় শিবের অস্তিত্ব নির্ভর করে আদ্যাশক্তির উপর ।আদ্যা শক্তি মহামায়া আছেন বলেই শিব আছেন। তিনি তাঁরই ভাবনা এবং চিন্তার নারী রূপ।দেবী আছেন বলেই জ্ঞান, সম্পত্তি এবং পরাক্রম আছে। শক্তি সর্বদাই রূপান্তরিত হতে থাকেন, তিনি মায়া এবং তাঁকে সর্বদা মান দিয়ে আসেন মহেশ্বর। তাঁরা এক এবং অভিন্ন।পরবর্তী পর্বগুলিতে থাকবে আরো অনেক পৌরাণিক বিষয় নিয়ে আলোচনা থাকবে|পড়তে থাকুন|ভালো থাকুন|ধন্যবাদ|