মহিষাসুর এর ইতিবৃত্ত

569

দেবী দূর্গাকে নিয়ে আলোচনা অসম্পূর্ণ থেকে যাবে যদি মহিষাসুরকে নিয়ে না বলি কারন দেবী দূর্গা যেমন শুভ শক্তির প্রতীক মহিষাসুর তেমন অশুভ শক্তির প্রতিনিধি|মহিষাসুর বধের জন্যই দেবীর আবির্ভাব হয় একটি বিশেষ সময়ে|অসংখ্য দেব দেবীর পাশাপাশি আমাদের পুরানে অসুরের সংখ্যাও কিছু কম নয়|তাদের মধ্যে সব থেকে আলোচিত এবং জনপ্রিয় অসুর চরিত্র বোধহয় মহিষাসুর|দেবী দুর্গার সাথে পূজিত হওয়ার দরুন মহিষাসুর বাংলা তথা গোটা বিশ্বের দরবারে এক অতি পরিচিত মুখ|তার বোধ হওয়ার কাহিনী হয়তো আমরা সবাই জানি কিন্তু তার জন্ম বৃত্তান্ত সহ আরো অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য অনেকেরই অজানা|আজ চেষ্টা করবো মহিষাসুর সম্পর্কে কিছু স্বল্প প্রচারিত বিষয়ে আলোকপাত করার|মহিষাসুরের পিতাও ছিলেন এক অসুর তার নাম রম্ভ|অগ্নিদেবকে মতান্তরে মহাদেবকে তপস্যায় প্রসন্ন করে রম্ভ বর লাভ করেছিলো যে সে এক ত্রিকাল জয়ী বলশালী পুত্রের পিতা হবে|এই পুত্রকে কোনো পুরুষ বোধ করতে পারবেনা|পরবর্তীতে এক মহিষী কে ভালো বেশে তার সাথে মিলিত হয় রম্ভ|কিছুকাল পরে এক মায়াবী মহিষের সাথে সংঘর্ষে মৃত্য হয় রম্ভের|যক্ষেরা মিলে রম্ভর চিতায় অগ্নি সংযোগের ব্যবস্থা করে|রম্ভের অর্ধাঙ্গিনী সেই মহিষীও রম্ভার সাথে মৃত্যু বরণ করতে চেয়ে সেই চিতায় উঠে বসে|কিন্তু দেবতাদের বর মিথ্যে হতে পারেনা তাই সেই জ্বলন্ত চিতায় মাতৃ গৰ্ভ থেকে বেড়িয়ে আসে এক অসুর শিশু|এই শিশুই পরবর্তীতে হয় মহিষাসুর|পরবর্তীতে অত্যাচারী হয়ে ওঠে মহিষাসুর ও স্বর্গ মর্ত পাতাল অধিকার করে নেয়|তাকে বোধ করতে আবির্ভুত হন দশ ভুজা দেবী দূর্গা|মহিষাসুর কে বধ করে দেবী হন মহিষাসুর মর্দিনী|ত্রিকাল জয়ী বীর যোদ্ধা মহিষাসুরকে বধ করা সহজ ছিলোনা|মহিষাসুর একাধিক বার একাধিক রূপে দেবীর সাথে যুদ্ধ করেছিলেন|দেবীর দুর্গাও একাধিক রূপে একাধিক বার তার বিনাশ করেছেন যুদ্ধ ক্ষেত্রে|মহিষাসুর জন্মগ্রহণ করেন তিনবার। ত্রিবিধ রূপ ধারণ করে তাঁকে তিনবারই বিনাশ করেন এই দেবী। মহিষাসুরকে বধ করার জন্য প্রথমে অষ্টাদশভুজা উগ্রচণ্ডা রূপে, দ্বিতীয়বার ভদ্রকালী এবং তৃতীয়বার বধ করলেন দশভুজা দেবী দুর্গা রূপে|দেবীর এই দশ ভুজা মহিষাসুর মর্দিনী রুপই পূজিত হয় বাংলার ঘরে ঘরে|দেবী মূর্তির সাথে সর্বত্র মহিষাসুর কেনো পূজিত হন শাস্ত্রে এরও নিদ্দিষ্ট ব্যাখ্যা রয়েছে|মৃত্যুর পূর্বে মহিষাসুর স্বপ্নে দেবীর দর্শন করেন এবং দেবীকে অনুরোধ করে বলেন যে আপনার হাতে মৃত্যুর জন্য কোনও দুঃখ বা ক্ষোভ নেই এতটুকুও। কিন্তু আপনার সঙ্গে আমিও যাতে সকলের পূজিত হই তারই ব্যবস্থা করুন দেবী। এছাড়া আর কিছুই চাই না আমি।’দেবী তখন মহিষাসুরকে আশীর্বাদ করে বললেন, ‘উগ্রচণ্ডা, ভদ্রকালী আর দুর্গা, এই তিন মূর্তিতে আমার পদলগ্ন হয়ে তুমি সব সময়েই পূজ্য হবে দেবতা, মানুষ ও রাক্ষসদের।’ সেই থেকেই এই রীতি প্রচলিত|আমাদের দেশের কিছু আদিবাসী ও বিশেষ জনগোষ্ঠীর মধ্যে আশ্চর্য জনক ভাবে মহিষাসুরকে প্রধান আরাধ্য দেবতা হিসেবে পূজা করার রীতিও আছে|এমনকি উত্তর বঙ্গের একটি বিশেষ জন সমাজ নিজেদের আজও মহিষাসুরের বংশধর বলে দাবী করে ও যথেষ্ট গর্ব অনুভব করেন|সামনেই মহালয়া|মহালয়া উপলক্ষে আপনাদের হৃদয়েশ্বরী সর্বমঙ্গলা মায়ের মন্দিরে বিশেষ পূজা, হোম যজ্ঞ ও গ্রহ দোষ খণ্ডনের ব্যবস্থা করা হয়েছে|প্রযুক্তির ব্যবহারে এই আধ্যাত্মিক কর্মকান্ড পৌঁছে দেয়া হবে আপনাদের কাছে|তাছাড়া সরাসরি অংশ নিতে যোগাযোগ করতে পারেন|আজ মহিষাসুর কে নিয়ে এই পর্ব এখানেই শেষ করছি|দূর্গা পুজো উপলক্ষে চলতে থাকবে এই বিশেষ পর্ব গুলি ধারাবাহিক ভাবে|পড়তে থাকুন|ভালো থাকুন|ধন্যবাদ|