দোল যাত্রার আধ্যাত্মিক তাৎপর্য

1144

আজ পবিত্র দোল পূর্ণিমা|শাস্ত্র মতে বসন্তের পূর্ণিমার এই দিনে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ কেশি নামক অসুরকে বধ করেন। কোথাও কোথাও অরিষ্টাসুর নামক অসুর বধের কথাও আছে। অন্যায়কারী, অত্যাচারী এই অসুরকে বধ করার পর তার রক্ত ছিটিয়ে সকলে আনন্দ করে। এই অশুভ শক্তিকে ধ্বংসের আনন্দ মহানন্দে পরিণত হয়।আবার দৈত্যরাজ হিরণ্যকিশপুর কাহিনি আমরা সকলে জানি। ভক্ত প্রহ্লাদ অসুর বংশে জন্ম নিয়েও পরম ধার্মিক ছিলেন। তাঁকে যখন বিভিন্নভাবে চেষ্টা করেও হত্যা করা যাচ্ছিল না তখন হিরণ্যকিশপুর বোন হোলিকা প্রহ্লাদকে কোলে নিয়ে আগুনে প্রবেশের সিদ্ধান্ত নেয়। কারণ হোলিকা এই বর পেয়েছিল যে আগুনে তার কোন ক্ষতি হবে না। কিন্তু অন্যায় কাজে শক্তি প্রয়োগ করায় হোলিকা প্রহ্লাদকে নিয়ে আগুনে প্রবেশ করলে প্রহ্লাদের কোনো ক্ষতি হয় না কিন্তু হোলিকা আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যায়।বিষ্ণু ভক্ত প্রহ্লাদের এই অক্ষতের আনন্দ উৎসবে পরিণত হয়। এই দহনকে হোলিকা দহন বলা হয়।দোল হিন্দু সভ্যতার অন্যতম প্রাচীন উৎসব। নারদ পুরাণ, ভবিষ্য পুরাণ ও ‘জৈমিনি মীমাংসা’য় রঙ উৎসবের বিবরণ পাওয়া যায়। ৭ম শতাব্দীর এক শিলালিপিতে রাজা হর্ষবর্ধন কর্তৃক ‘হোলিকোৎসব’ পালনের উল্লেখ পাওয়া যায়।হর্ষবর্ধনের নাটক ‘রত্মাবলী’তেও হোলিকোৎসবের উল্লেখ আছে। এমনকি আল বেরুনীর বিবরণে জানা যায় মধ্যযুগে কোন কোন অঞ্চলে হিন্দু ছাড়াও অন্য বহু ধর্মের মানুষ ও হোলিকোৎসবে সংযুক্ত হত। মধ্যযুগের বিখ্যাত চিত্রশিল্পগুলোর অন্যতম প্রধান বিষয় রাধা-কৃষ্ণের রঙ উৎসব।শ্রীকৃষ্ণের ঝুলন থেকে দোল কথার উদ্ভব। ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে হোলির রীতি ও বিশ্বাস বিভিন্ন। বাংলা অঞ্চলে বৈষ্ণব প্রাধান্য রীতি প্রচলিত। রঙ উৎসবের আগের দিন ‘হোলিকা দহন’ হয় অত্যন্ত ধুমধাম করে। শুকনো গাছের ডাল, কাঠ ইত্যাদি দাহ্যবস্তু অনেক আগে থেকে সংগ্রহ করে সু-উচ্চ একতা থাম বানিয়ে তাতে অগ্নি সংযোগ করে ‘হোলিকা দহন’ হয়। পরের দিন রঙ খেলা। বাংলাতেও কোথাও কোথাও দোলের আগের দিন এইরকম হয় যদিও তার ব্যাপকতা কম, একে আমরা কোথাও বলী ন্যাড়া পোড়া আবার কোথাও বলা হয় ‘চাঁচর’।আবার বাঙালি তথা হিন্দু সমাজের অন্যতম মহাপুরুষ শ্রীচৈতন্যের জন্মতিথি হচ্ছে এই পূর্ণিমা তিথি তথা হোলি তিথি। এই মহান পুরুষের জন্ম উৎসবের মাত্রাকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে এবং গৌড়ীয় বৈষ্ণব সমাজ ও পরবর্তীতে ইস্কন এই দোল উৎসবকে আন্তর্জাতিক স্তরে উন্নীত করেছে|আজ প্রায় সারা বিশ্ব জুড়ে পালিত হয় দোল এবং হোলি|রবীন্দ্রনাথের ভাষায় বলা যায় হোলির রঙ আমাদের মর্মে লাগুক- ওরে গৃহবাসী খোল, দ্বার খোল, লাগলো যে দোল স্থলে জলে বনতলে লাগলো যে দোল । দ্বার খোল, দ্বার খোল|আপনাদের সবাইকে আমার তরফ থেকে দোল যাত্রার অসংখ্য শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন|ভালো থাকুন|ধন্যবাদ|