গুরু কথা – মহাপ্রভু শ্রী চৈতন্য

853

ভারতের মহান সাধক ও আধ্যাত্মিক গুরু দের কথা বলা অসম্পূর্ণ থেকে যাবে যদি বাংলার নবজাগরনের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিত্ব ও মহান সাধক শ্রী চৈতন্যদেবের কথা না বলা হয় কারন তিনি ছিলেন প্রকৃত গুরু যিনি গোটা বিশ্ব কে বৈষ্ণব আদর্শ শিখিয়েছিলেন, শিখিয়েছেন হরে কৃষ্ণ মহামন্ত্র জপের মাহাত্ম্য|প্রথমে গৌড়ীয় বৈষ্ণব সমাজ ও পরবর্তীতে ইস্কন সেই শিক্ষা ও আদৰ্শকে এগিয়ে নিয়ে গেছে|1486 সালের এক দোল পূর্ণিমায় বাংলার শিক্ষা ও সংস্কৃতি চর্চার তৎকালীন পীঠস্থান নবদ্বীপে জন্মে ছিলেন গৌরাঙ্গ যিনি কৃষ্ণ সাধনায় নিজেকে সম্পূর্ণ রূপে বিলিয়ে দিয়ে হয়ে উঠলেন মহাপ্রভু শ্রী চৈতন্য|

নিম গাছের ছায়ায় তিনি জন্মে ছিলেন তাই নাম রাখা হয়ে ছিলো নিমাই, আসুন আজকের পর্বে জেনে নিই তার জীবনের কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক , কিছু অলৌকিক ঘটনা|সচি মাতার গর্ভে তার জন্ম, অকালে পিতৃ বিয়োগ,টোলে শিক্ষা দান, লক্ষী প্রিয়া এবং বিষ্ণু প্রিয়ার সাথে তার বিবাহ, পরবর্তীতে গয়ায় যাত্রা, সন্ন্যাস ও পুরী ভ্রমণ সারা বাংলায় কৃষ্ণ প্রেমের প্রচার এবং শেষে রহস্যময় অন্তর্ধান, এসবই হয়তো আপনারা জানেন, আগেও পড়েছেন বহুবার|শ্রী চৈতন্য মহাপ্রভুর জীবন নিয়ে হয়েছে নানা গবেষণা ।

আজও অনেকঐতিহাসিক এই বিষয়ে
গবেষণা চালাচ্ছে। অসংখ্য রহস্য ময় ঘটনার উল্লেখ রয়েছে তার জীবন জুড়ে এবং সর্বোপরি তার মৃত্যু বা অন্তর্ধান আজও এক রহস্য|এর মধ্যে একটি বিশেষ ঘটনা আজ উল্লেখ করবো

বহু দূর দূর থেকে চৈতন্য দেবের ভক্তরা আসতেন তার সাথে দেখা করতে, এমনই একবার চৈতন্য দেবের সাথে সাক্ষাত করার জন্য সুদূর বৃন্দাবন থেকে নবদ্বীপ ধামে এসেছেন সনাতন নামে এক ব্যাক্তি।সারা দেহে খোস পাঁচড়া নিয়ে রোগ যন্ত্রণায় কাতর হয়ে তিনি মনে মনে স্থির করেছেন চৈতন্য দেবের সাথে দেখা করে আগামী রথযাত্রায় রথের চাকার তলায় আত্মহত্যা করবেন।
একদিন চৈতন্যদেবের সাথে সনাতন গল্প করছিলেন। হটাৎ চৈতন্য দেব, সনাতনকে বললেন – সনাতন,আত্মহত্যার সংকল্প ত্যাগ কর। আত্মহত্যা মহাপাপ। এতে কখনো কৃষ্ণ প্রাপ্তি হয়না।অবাক হয়ে গেলেন সনাতন। আত্মহত্যা করার কথা কাউকে জানাননি। তাহলে কী করে চৈতন্য দেব এই কথা জানলেন। এই ভাবেই অপরের মনের কথা জানতে পারতেন চৈতন্য মহাপ্রভু|আরো আশ্চর্য জনক ঘটনা হলো এর কিছুদিনের মধ্যেই সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে গেলেন সনাতন|এর জন্য কোনো চিকিংসা করতে হয়নি।এবং আত্মহত্যার ভূত মাথা থেকে একদম মুছে যায়|

আরেকটি ঘটনার কথা বলা যায়,
একবার মহপপ্রভু শ্রীনিবাস ঠাকুরেরর বাড়িতে এক অপূর্ব অলৌকিক লীলা প্রদর্শন করেন। তখন প্রবলভাবে সংকীর্তন হচ্ছিল। তিনি ভক্তদের জিজ্ঞাসা করলেন যে, তাঁরা কি খেতে চান, এবং তাঁরা জানালেন যে, তাঁরা আম খেতে চান, তখন তিনি আমের আটি চাইলেন। তখন আমের সময় ছিল না, আঁটিটি যখন তাঁর কাছে আনা হল, তখন তিনি সেটি শ্রীনিবাস ঠাকুরের অঙ্গনে পুঁতলেন এবং তৎক্ষণাৎ সেই আঁটিটি অঙ্কুরিত হয়ে ক্রমন্বয়ে বর্ধিত হতে লাগল। অচিরেই সেটি একটি আম গাছে পরিণত হল এবং সেই গাছে এত সুপক্ব আম ধরল যে, ভক্তরা তা খেয়ে শেষ করতে পারলেন না। গাছটি শ্রীনিবাস ঠাকুরের অঙ্গনেই রইল এবং ভক্তরা সেটি থেকে তাঁদের যত ইচ্ছে আম নিয়ে খেল। ভক্তরা মহাপ্রভুর এই অপ্রাকৃত লীলা দেখে মুগ্ধ হলো|এখনও সেই গাছ শ্রীনিবাস গৃহের উঠোনে বর্তমান|

আধুনিকত ভারতবর্ষে মহাত্মাগান্ধী কে অহিংস আন্দোলনের প্রবর্তক মনে করা হলেও মহাপ্রভু শ্রীচৈতন্য তার বহুকাল আগেই অহিংসা ও ভক্তির দ্বারা জয় করে নিয়েছিলেন অসংখ্য মানুষের হৃদয়|

নিত্যানন্দ একবার জগাই ও মাধাই নামক নদীয়ার দুই পাপিষ্ঠ ব্রাহ্মণকুমারকে উদ্ধার করতে চাইলেন। সে লক্ষ্যে তিনি অনেক ভক্তদের সাথে নিয়ে নাম-কীর্তন করতে করতে জগাই-মাধাইয়ের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হলেন। জগাই-মাধাই মদ পান করে ঘুমাচ্ছিলেন। নাম-কীর্তন শুনে তাদের ঘুম ভাঙায় তারা খুব বিরক্ত হলেন। নিত্যানন্দ বারংবার তাদেরতে হরিনাম করার অনুরোধ করলেন। মাধাই তখন ক্রোধান্বিত হয়ে নিকটস্থ একটি ভাঙ্গা কলসির টুকরা দ্বারা নিত্যানন্দকে আঘাত করল। ফলে নিত্যানন্দের কপাল কেটে রক্ত ঝরতে লাগল। চৈতন্যদেব খবর পেয়ে ঐ স্থানে ছুটে আসলেন। তিনি জগাই-মাধাই শাস্তি দেয়ার জন্য সুদর্শন চক্রকে স্মরণ করলেন। কিন্তু নিত্যানন্দ তাঁকে নিরস্ত করলেন। শত্রু কর্তৃক আঘাত পেয়েও শত্রুকে ক্ষমা করার মত উদারতা আর কি হতে পারে? নিত্যানন্দের উদারতা ও মহত্ব দেখে জগাই-মাধাইয়ের বোধোদয় হয়। অবশেষে গৌর-নিতাইয়ের পরশে জগাই-মাধাই শুদ্ধ বৈষ্ণবভক্তে পরিণত হয়|

মহা প্রভুর মাত্র আটচল্লিশ বছরের জীবন কালে এমন অনেক অলৌকিক ঘটনা আছে লিখতে গেলে পাতার পর পাতা শেষ হয়ে যাবে, চৈতন্য চরিতামৃত সহ অসংখ্য গ্রন্থে লিপিবদ্ধ রয়েছে সব তথ্য, গৌড়ীয় বৈষ্ণব সমাজ এবং পরবর্তীতে কৃষ্ণ ভাবনামৃত সংঘ মহা প্রভুকে অবতার হিসেবে প্রচার করেছে গোটা বিশ্বে|সারা বিশ্ব কে তিনি দিয়েগেছেন কৃষ্ণ নাম যে নাম আজ ছড়িয়ে পড়ছে দাবানলের মতো সারা পৃথিবীতে|জাতী ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে মহা প্রভু সবাইকে আপন করে নিয়ে ছিলেন|তার সাধনা ছিলো একটাই মানুষকে ভালো বাসা, আর কৃষ্ণের চরণ যুগলে নিজেকে সম্পূর্ণ রূপে সপেঁ দেয়া, তার সাধনার পদ্ধতিও ছিলো সরল মৃদঙ্গ ও হরে কৃষ্ণ মহা মন্ত্র|

গুরু পূর্ণিমার আগে মহান গুরু মহাপ্রভুকে আমার শ্রদ্ধা ও প্রনাম জানিয়ে শেষ করলাম আজকের এই বিশেষ পর্ব, জানাবেন কেমন লাগছে আমার এই আধ্যাত্মিক লেখালেখি আর জ্যোতিষ পরামর্শ বা প্রতিকারের বিষয়ে জানতে ফোন করবেন উল্লেখিত নাম্বারে|ভালো থাকুন|ধন্যবাদ|