গুরু কথা – সাধক বামা খ্যাপা

733

ভারতের আধ্যাত্মিক জগতের গুরুদের নিয়ে ধারাবাহিক লেখা বামা খ্যাপা কে বাদ দিয়ে হতে পারেনা কারন তার মত মহান ও ব্যতিক্রমী সাধক এদেশে খুব কমই আছেন|তারাপীঠ নিয়ে আমি আগেও লিখেছি, সেখানে বামা খ্যাপা প্রসঙ্গ নিশ্চই এসেছে, তার জীবন,সাধনা, অলৌকিক ঘটনাবলী একাধিক বার আলোচিত হয়েছে|তবে তন্ত্র জগতে গুরু হিসেবে তার আলাদা তাৎপর্য রয়েছে কারন নিজের জীবন ও দর্শন দিয়ে তিনি দেখিয়ে দিয়ে গেছেন একজন আদর্শ মাতৃসাধক ও তন্ত্র সাধকের জীবন কেমন হওয়া উচিৎ|পরবর্তীতে অসংখ্য নবাগত তন্ত্র সাধক তার দেখানো পথে হেটে সাফল্য পেয়েছেন|আজও তন্ত্র ও আধ্যাত্মিক জগতের সাথে যুক্ত বহু মানুষের মনের মণিকোঠায় তিনি পরম গুরু|আজকের পর্বে তার জীবনের একটি বিশেষ সময় এবং ঘটনা কে আপনাদের সামনে তুলে ধরবো|

এমনটা নয় যে তারাপীঠ মন্দিরে আসার প্রথম দিন থেকেই বামার জয় জয়কার শুরু হয় বা সবাই তার অলৌকিক ক্ষমতা স্বীকার করে নেয়|তারাপীঠে মা তারার সঙ্গে বামা খ্যাপা কে ভোগ দেয়ার যে রীতি প্রচলিত হয়েছে তার সাথেও জড়িয়ে আছে এক অলৌকিক ঘটনা যা বদলে দিয়ে ছিলো বামা খ্যাপার জীবনে ও তার প্রতি মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি|

তারাপীঠ মন্দির প্রতিষ্ঠা করেছিলেন নাটোর রাজ পরিবার, একদিন নাটোরের রানী স্বপ্নে দেখলেন মা তারা মন্দির ছেড়ে চলে যাচ্ছেন,ঘুম ভেঙে কাঁদতে কাঁদতে তাঁর আরাধ্য দেবী মা তারাকে স্মরণ করলেন রানী। দু’হাত জোড় করে মা’কে বললেন, “মা গো, আমি কি অপরাধ করেছি যে তুমি স্বপ্নে এসে আমাকে বললে… এই রাজ্য ছেড়ে তুমি চলে যাবে! মা,” উত্তরে মায়ের আদেশ ভেসে এলো রানীর কানে, মা বললেন ‘মন্দিরের পুরোহিত আর দারোয়ান মিলে আমার পাগল ছেলে খ্যাপাকে প্রচণ্ড মারধর করেছে। ওরা জানে না যে তাদের ওই মার আসলে আমার শরীরেই পড়েছে। আমার দেহ ক্ষতবিক্ষত হয়ে গেছে। আমার খ্যাপা ছেলের অপরাধ ছিল যে, সে আমারই ডাকে আমার সঙ্গে বসে ভোগ খাচ্ছিল। ওই রকম প্রচণ্ড মার খাওয়ার পর থেকে তিনদিন হয়ে গেল, ছেলেটা আমার কিচ্ছু খায়নি… তাই আমিও তিন দিন ধরে জলস্পর্শ করিনি! তুই বল, ছেলে না খেলে মা কখনও খেতে পারে!’

মায়ের কাছে ক্ষমা চাইলেন রানী|ভোরবেলাতেই রানি ছুটলেন মন্দিরে। তাঁর মুখে গত রাতের ঘটনা শুনে সবাই স্তম্ভিত|জানা গেলো ঘটনা সত্যি,কদিন আগে, বামা মন্দিরের ভিতর ভোগ খেতে ঢুকেছিলেন।তখন পুরোহিত এবং দারোয়ান মিলে তাঁকে বেধড়ক মেরেছে|সেই থেকে বামা কিছু খাচ্ছেন না|সব শুনে সেই সময়ে রানী নির্দেশ দিলেন ‘আজ থেকে এই তারাপীঠ মন্দিরে তারা মায়ের সঙ্গে তাঁর পাগল ছেলে মহাসাধক বামাখ্যাপাকেও ভোগ দেওয়া হবে’|তারাপীঠে এই ভাবে শুরু হয়েছিলো মা তারা ও তার স্নেহের খ্যাপা সন্তান বামাকে এক সাথে ভোগ নিবেদনের রীতি|

গুরু শিষ্য পরম্পরাকে শ্রদ্ধা করতেন বাম দেব|সাধক বামাচরণ চট্টোপাধ্যায় ওরফে বামা ক্ষ্যাপা বলেছিলেন, নিগমে প্রকৃতি বা শক্তিরূপী দেবী হলেন গুরু আর শিব হলেন শিষ্য আর আগমে শিব গুরু ও দেবী শিষ্য। বামাচারীদের শাস্ত্র হল নিগম আর দক্ষিণাচারীদের আগম। এই পরম্পরা চলে আসছে আদিকাল থেকে|

বামা খ্যাপার জীবনে অলৌকিক ঘটনা এতো বেশি ও তার তাৎপর্য এতো গভীর যে একটি পর্বে শেষ করা যায়না, তবুও চেষ্টা করলাম গুরু পূর্ণিমার প্রাক্কালে এই গুরুকে স্মরণ করতে ও তাকে শ্রদ্ধা জানালাম নিজের মত করে|আজ এখান থেকে বিদায় নিলাম তবে জ্যোতিষ সংক্রান্ত প্রয়োজনে আমাকে অনলাইনে সর্বদাই পাবেন শুধু যোগাযোগ করতে হবে উল্লেখিত নাম্বারে|ভালো থাকুন|ধন্যবাদ|